বিজ্ঞাপন

‘জাতির পিতা হত্যায় ক্ষেত্র প্রস্তুতকারীরা সমানভাবে দোষী’

August 16, 2021 | 10:17 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, পাশে যারা ছিল, যারা ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে সবাই কিন্তু সমানভাবে দোষী। হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত ছিল ধীরে ধীরে সেটাও বের হবে। সেদিনও খুব বেশি দূরে না।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৬ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাৎবার্ষিকীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণ সভায় তিনি একথা বলেন।

শেখ হাসিনা দেশের মানুষের তরে জাতির পিতার সেই স্বপ্নের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘একটা মানুষ তার জীবনের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছিলেন একটি জাতির জন্য। নিজের জীবনের কোনো চাওয়া-পাওয়া ছিল না। তিনি দেশের কথা ভাবতেন, মানুষের কথা ভাবতেন। বাংলাদেশের মানুষ যারা একবেলা খেতেও পারত না, চিকিৎসা নেই, শিক্ষা নেই, ঘরবাড়ি নেই- সেই শোষিত-বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন।’

জাতির পিতার সংগ্রামে তার সহধর্মিনী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অবদানের কথা স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, ‘আমার মা সবসময় একটা কথাই বলতেন, তোমার দেশের জন্য তুমি কাজ কর। তুমি কাজ করে যাও । বাকি সব দায়িত্ব আমার। তোমাকে ভাবতে হবে না। তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। ঠিকই চিন্তা করতে হতো না। সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছিলেন।’

বিজ্ঞাপন

১৫ আগস্ট হত্যকাণ্ডে ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা দেখেছি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার জন্য যখন কোনো হত্যাকাণ্ড হয় তখন সেই রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানকেই হত্যা করে। কিন্তু বাংলাদেশে এমন হত্যাকাণ্ড ঘটল যেটা একমাত্র কারবালার সাথেই তুলনা করা যায়। সেখানেও কিন্তু শিশু-নারীদের হত্যা করেনি। বাংলাদেশে সেই শিশু-নারীসহ কাউকেই রেহাই দেয়নি।’ জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে গিয়ে দলের নেতাকর্মীসহ যারা জীবন দিয়েছেন তাদের অবদান স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

দেশ স্বাধীনের পর পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতার স্বাধীন দেশে ফিরে আসার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘১৯৭২ সাল থেকেই ষড়যন্ত্র শুরু। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভক্তি হলো। জাসদ সৃষ্টি হলো। যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর, যারা বড় বড় নেতা ছিল, তারা তো পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে অনেকেই চলে গেছে। আর যারা এদেশে ছিল তারা কোথায় গেল? তারা সব হঠাৎ উধাও হয়ে গেল! তারা সব যেয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টির সঙ্গে মিশে গেল।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বেশি তো খোঁজার দরকার নেই। আপনারা তখনকার যে পত্রপত্রিকা বা তখনকার যাদের বক্তব্য সেইগুলো একটু খুঁজে বের করেন। অনেক খবর আপনাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘স্বাধীন হওয়ার পরে একটা রাষ্ট্র পরিচালনায় বছরের পর বছর লেগে যায় বিধ্বস্ত একটা দেশ গড়তে। সেখানে একটি বছরও সময় দেওয়া হল না। সঙ্গে সঙ্গে সমালোচনা শুরু হলো। আর ধৈর্য্যটা ধরা হলো না। এটা নেই, ওটা নেই, এটা হবে না কেন? ওটা হবে না কেন?এটা হচ্ছে না কেন? এ ধরনের নানা কথা লেখা হলো। কাদের খুশি করতে কারা লিখেছিল? এবং কারা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য অবস্থানটা তৈরি করছিল? আমি জানি, যারা সরাসরি হত্যা করেছে, তারা নিজেরা স্বীকার করেছে। বিবিসি’র ইন্টারভিউতে রশীদ-ফারুক বলেছে, তারা হত্যা করেছে। তাদের একটা চেষ্টা ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা। অনেক অপপ্রচার চালিয়ে তাকে জনগণের কাছ থেকে দূরে সরাতে পারেনি। আর সেজন্যই তারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।’

১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনিদের বিচার হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখনও কয়েকজন যারা পলাতক, তার মধ্যে ডালিম পাকিস্তানেই আছে তখন থেকে। রশীদ পাকিস্তান এবং লিবিয়া এই দুই জায়গায় থাকে। মাঝে মাঝে কেনিয়াতে বা অন্যান্য দেশে যায়। সে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়েই চলে। আর রাশেদ-নূর; তারা তো একজন কানাডায়, আরেকজন আমেরিকায় আছে। শুধু মোসলেম উদ্দিন- তার খোঁজ মাঝে পাওয়া যায়, মাঝে মাঝে পাওয়া যায় না। এই একটা অবস্থার মধ্যে আছে। পাকিস্তানি সরকারকে বহুবার বলা হয়েছে। তারা এটা স্বীকারও করে না, কাউকে দেয়ও না।’

কানাডায় নূরের অবস্থান দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কানাডায় যে আমাদের হাইকমিশনার ছিল, সে ছিল মোশতাকের দ্বিতীয় স্ত্রীর আগের পক্ষের ছেলে রফিক। সে ছিল তখন কানাডার হাইকমিশনে। কিন্তু একজন রাষ্ট্রদূত হিসেবে তার যে দায়িত্ব সেটা পালন করা উচিত ছিল। তিনি সেই দায়িত্বটা পালন করেনি। নূরকে সে রিপোর্ট করার কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। এখানে হাইকমিশনের একটা দায়িত্ব থাকতে হয়। তারপর থেকে কেস পড়ে আছে। ওখানকার আমাদের প্রবাসী বাঙালি এবং আমরাও চেষ্টা চালাচ্ছি, তাকে কোনোভাবে ফিরিয়ে আনা যায় কি না।’

সভার শুরুতে ১৫ আগস্ট নিহত শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে যুক্ত ছিলেন। গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুল সোবহান গোলাপ। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রান্তে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভায় সূচনা বক্তব্য দেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ধর্ম সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, কেন্দ্রীয় সদস্য পারভীন জামান কল্পনাসহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি ও হুমায়ুন কবির বক্তৃতা করেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন