বিজ্ঞাপন

গরমকালেও মিলবে টমেটো

September 27, 2021 | 5:23 pm

শাহেদ মাহমুদ, শেকৃবি করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: টমেটো শীতকালীন সবজি হলেও পুষ্টিগুণ এবং নানাবিধ ব্যবহারের জন্য সারাবছরই এর কদর রয়েছে৷ শীতে টমেটোর উচ্চ ফলন হলেও গ্রীষ্মকালে তেমনটা ফলে না। তবে এ সমস্যার সমাধান বের করেছেন রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) গবেষক অধ্যাপক ড. মো. বেলাল হোসেন। গরমের সময়ও টমেটোর উচ্চফলনের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

এক্ষেত্রে উচ্চ ফলনশীল জাত নয়, শুধুমাত্র মাটির জৈব শোধনের মাধ্যমে গ্রীষ্মকালে টমেটোর ফলন বাড়ানো সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেছেন শেকৃবি’র গবেষকরা। সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বেলাল হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন ৷

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের আর্থিক সহযোগিতায় এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. বেলাল হোসেন ৷ এতে সহায়তা করেছেন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মো. আরিফুল ইসলাম।

ফলন কম হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ টমেটোর ঢলে পড়া রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে প্রায় শতভাগ গাছ মারা যায়। গবেষকদের দাবি, উচ্চ ফলনশীল জাত নয়, শুধুমাত্র মাটির জৈব শোধনের মাধ্যমে এ রোগ শতভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তারা মাটির জৈব শোধন করতে সরিষার খৈল ব্যবহার করেছেন। এতে শতভাগ সাফল্য পেয়েছেন। এ পদ্ধতিতে চাষ করলে কৃষক লাভবান হবে এবং মূল্যও সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আসবে বলে আশা করেন তারা।

বিজ্ঞাপন

অতি উষ্ণ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ও উদ্ভিদ কৃমির জন্য আদর্শ পরিবেশ। গ্রীষ্মকালে মাটি অতি উষ্ণ ও আর্দ্র থাকে। ফলে টমেটো গাছ খুব সহজেই ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, প্ল্যান্ট নেমাটোডা বা উদ্ভিদ কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয় বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।

এ বিষয়ে ড. বেলাল হোসেন বলেন, দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে বেশিরভাগ গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ হয়। কোনো গাছ যদি ঢলে পড়া রোগে আক্রান্ত হয়, তাহলে শতভাগ মৃত্যু ঘটে। তাই গ্রীষ্মকালে টমেটোর ভাল দাম থাকলেও চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন কৃষকরা। তাই গ্রীষ্মকালে পাওয়া টমেটোর বেশিরভাগই আগে থেকে সংরক্ষণ করা। এজন্য গ্রীষ্মকালে এর মূল্য থাকে বেশি থাকে, যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।

বামে গ্রীষ্মেও সুস্থ টমেটো গাছ, ডানে গ্রীষ্মে নেতিয়ে পড়া টমেটো গাছ

ঢলে পড়া রোগের লক্ষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, গাছ বৃদ্ধির যেকোনো সময় এ রোগ হতে পারে এবং ব্যাপক ক্ষতি করে। আক্রান্ত গাছের বয়স্ক পাতাগুলো নিচের দিকে বেঁকে যায় ও ঢলে পড়ে। ধীরে ধীরে পুরো গাছই নেতিয়ে পড়ে ও মরে যায়। গাছের কাণ্ড ও শিকড়ে বাদামি দাগ পড়ে। প্রথমে গাছের কাণ্ডের এক পাশের শাখার পাতাগুলো হলদে হয়ে আসে এবং পরে অন্যান্য অংশগুলোও হলুদ হয়ে যায়। রোগ বৃদ্ধি পেলে সব পাতাই হলুদ হয়ে যায় এবং অবশেষে সম্পূর্ণ শাখাটি মরে যায়। এভাবে পুরো গাছটাই ধীরে ধীরে মরে যায়।

বিজ্ঞাপন

প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে এই গবেষক বলেন, এ রোগ সাধারণত গ্রীষ্মেকালে হয়, কারণ মাটির তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা উভয়ই বেশি থাকে। তাই যদি আমরা মাটির তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা কমাতে পারি, তাহলে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও উদ্ভিদ কৃমি অনুকূল পরিবেশ পাবে না।

তিনি আরও বলেন, গ্রীষ্মকালে টমেটোর চারা লাগানোর সাতদিন আগে মাটির সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণে সরিষার খৈল মিশিয়ে মাটি জৈব শোধন করতে হবে। শোধনকৃত মাটিতে টমেটোর চারা লাগালে আর ঢলে পড়া রোগ হবে না। মাটি জৈব শোধন করতে ১০ কেজি মাটির সঙ্গে ৫০০ গ্রাম সরিষার খৈল ব্যবহার করা হয়। সরিষার খৈল মিশ্রিত মাটিকে ৭-১০ দিন শুকাতে হবে।

যদি কৃষকদের মধ্যে এই সহজে মাটি শোধনের পদ্ধতিটি ছড়িয়ে দিতে পারি তাহলে কৃষকও লাভবান হবে। একইসঙ্গে বাজারে টমেটোর দাম কমে আসবে এবং টাটকা টমেটোও পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক ড. মো. বেলাল হোসেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এনএস

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন