বিজ্ঞাপন

বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন: ডিসেম্বরেই প্রথম ধাপ শুরুর লক্ষ্য

October 5, 2021 | 10:07 pm

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানী ঢাকার পরিবহনগুলোকে শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চলছে দীর্ঘ দিন ধরেই। ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ শীর্ষক এই পরিকল্পনা সরকার অনেকটাই শেষ করে এনেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। বলেছেন, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে ১২০টি নতুন বাস নিয়ে বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশনের প্রথম ধাপ শুরু করার লক্ষ্য চূড়ান্ত।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর নতুন এই রুট বিন্যাসের পর আন্তঃজেলা রুটের কোনো বাস প্রবেশ করবে না ঢাকায়। এর জন্য ঢাকার প্রতিটি প্রবেশমুখে থাকবে পর্যাপ্ত টার্মিনাল। রুটের সংখ্যা কমিয়ে আনার পাশাপাশি বাস চলাচল করবে নির্দিষ্ট রঙ ও আইন মেনে। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টিকেট বিক্রির বদলে চালু করা হবে স্মার্ট কার্ড।

মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে রাজধানী ঢাকার বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন সংক্রান্ত এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই চূড়ান্ত হয়, কবে থেকে নতুন বাস রুটে গণপরিবহন চলাচল শুরু করবে।

বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন কমিটির সভাপতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সভাপতি শেখ ফজলে নূর তাপস গণমাধ্যমকে জানান, প্রথম ধাপে কেরাণীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত চলবে বাস। প্রায় ২১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই পথে প্রতি কিলোমিটার যাতায়াত ভাড়া হবে দুই টাকা ২০ পয়সা। পাইলটিং রুট হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত। এ রুটে নতুন নিয়ম ও পদ্ধতিতে বাস চলাচল করবে।

বিজ্ঞাপন

নগরীর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে গত এক বছর ধরে কাজ করা হচ্ছে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত জটিল ও দুরূহ। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে এ রুটে বাস চলাচল শুরু করার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাসগুলো জয়েন্ট ভেঞ্চারে পরিচালিত হবে। পরে পুরো ঢাকায় কয়েকটি কোম্পানির মাধ্যমে বাস চলাচল করবে।

নতুন এ রুটে দীর্ঘ দিনের পুরনো কোনো বাস চলতে দেওয়া হবে না। তবে ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে যেসব বাস কেনা হয়েছে, সেসব বাস চলতে পারবে। এর সঙ্গে নতুন বাস যুক্ত হবে।

রাজধানীর যানজট কমাতে ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন ও কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনা পদ্ধতি ঠিক করতে মেয়র ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের নেওয়া পদক্ষেপ বিবেচনায় নিয়ে বাসের নতুন রুট নির্ধারণের জন্য ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই কমিটি দীর্ঘ পর্যালোচনা শেষে সম্প্রতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কমিটির সুপারিশে রাজধানীতে আড়াই হাজার কোম্পানির পরিবর্তে ২২টি কোম্পানির মাধ্যমে বাস চলাচলের ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বলা হয়েছে, পাঁচ বছর আগের হিসাব অনুযায়ী রাজধানীতে চলতে থাকা নিবন্ধিত ৩০ হাজার ২৭৪ বাসের পরিবর্তে ৯ হাজার ২৭টি বাস পরিচালনার ব্যবস্থা করতে হবে। এই ৯ হাজারের মধ্যে রাখা হবে ৬ হাজার ৪৫৭টি বাস, বাকি ২ হাজার ৭৬১টি বাস হবে নতুন। ওই ২২ কোম্পানির সঙ্গে অন্য মালিকদের শেয়ারহোল্ডার হিসেবে রাখার কথা বলা হয়। সঠিকভাবে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিটি কোম্পানিতে ৫০০টির কম বাস রাখার কথাও বলা হয়। কোম্পানিগুলোকে আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের সুপারিশও করেছে সেই কমিটি।

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) তথ্য বলছে, রাজধানীতে বর্তমানে খাতা-কলমে বাস রুটের সংখ্যা ২৯১টি। বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন কমিটি এই রুট কমিয়ে ৪২টিতে নামিয়ে আনার সুপারিশ করেছে। এই রুটগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে— আরবান, সাব-আরবান ও ঢাকা চাকা ক্লাস্টার। এই ৪২টি রুটে ছয়টি রঙের বাস চলাচলের সুপারিশ করা হয়েছে।

আরবান ক্লাস্টার

গোলাপি: এ রঙের বাস থাকবে ৮৮৩টি। এগুলো ১ থেকে ৪ নম্বর রুটে চলাচল করবে। এর মধ্যে ১ নম্বর রুট হবে আব্দুল্লাহপুর-কুড়িল-মহাখালী-নাবিস্কো-মগবাজার-কাকরাইল-সায়েদাবাদ হয়ে সদরঘাট পর্যন্ত। ২ নম্বর রুট আব্দুল্লাহপুর-কুড়িল-মহাখালী-ফার্মগেট-শাহবাগ-পল্টন-সায়েদাবাদ হয়ে কেরাণীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার ও ঝিলমিল প্রজেক্ট পর্যন্ত বিস্তৃত।

এই ক্লাস্টারে ৩ নম্বর রুট বিস্তৃত হবে আব্দুল্লাহপুর-কুড়িল-বাড্ডা-রামপুরা-মালিবাগ রেলগেট-মৌচাক-কাকরাইল-গোলাপশাহ মাজার হয়ে সদরঘাট ও ঝিলমিল প্রজেক্ট পর্যন্ত। আর ৪ নম্বর রুটে বাস চলবে আব্দুল্লাহপুর-বেড়িবাঁধ-মাজার রোড-গাবতলী-শিকদার মেডিকেল-কামরাঙ্গীর চর হয়ে বাবু বাজার পর্যন্ত।

বিজ্ঞাপন

নীল: আরবান ক্লাস্টারেই নীল রঙের বাস থাকবে ১৪৩৩টি। ৫ থেকে ৮ নম্বর রুটে চলবে এসব বাস। ৫ নম্বর রুটে চলাচল করা যাবে আব্দুল্লাহপুর-কুড়িল-নতুন বাজার-বাড্ডা, মৌচাক-কাকরাইল-মৎস ভবন-শাহবাগ-সায়েন্স ল্যাব হয়ে আজিমপুর পর্যন্ত। ৬ নম্বর রুটে আব্দুল্লাহপুর-কুড়িল-মহাখালী-বিজয় সরণি-মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ-সোবহানবাগ-সায়েন্স ল্যাব হয়ে আজিমপুর পর্যন্ত চলবে বাস।

৭ নম্বর রুটে আব্দুল্লাহপুর থেকে কুড়িল ফ্লাইওভার-ইসিবি চত্বর-কালশি-মিরপুর ১০-মিরপুর ১-টেকনিক্যাল-গাবতলী হয়ে হেমায়েতপুর পর্যন্ত বাস চলবে। আর ৮ নম্বর রুটে হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী-শ্যামলী-শিশু মেলা-আগারগাঁও-বিজয় সরণি-মহাখালী-বনানী-শেওড়া পাড়া-কুড়িল হয়ে বাস চলবে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত।

মেরুন: আরবান ক্লাস্টারে চলবে মেরুন রঙের বাসও। এই রঙের বাস থাকবে ১১০৮টি, চলবে ৯ থেকে ১৩ নম্বর রুটে। ৯ নম্বর রুটে হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী-ফার্মগেট-বাংলামোটর-মগবাজার-মৌচাক-খিলগাঁও ফ্লাইওভার-মতিঝিল-সায়েদাবাদ হয়ে সাইনবোর্ড পর্যন্ত চলবে বাস। ১০ নম্বর রুটে চলবে হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী-ফার্মগেট-শাহবাগ-গুলিস্তান-মতিঝিল-সায়েদাবাদ-সাইনবোর্ড-ধলেশ্বর হয়ে কাঁচপুর পর্যন্ত।

১১ নম্বর রুটের শুরু হেমায়েতপুরে। সেখান থেকে গাবতলী-মতিঝিল-ফুলবাড়িয়া-কাঁচপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত বাস চলবে। ১২ নম্বর রুটে হেমায়েতপুর থেকে শুরু হয়ে গাবতলী-শ্যামলী-আসাদ গেট-কলাবাগান-সায়েন্স ল্যাব-শাহবাগ-গুলিস্তান-মতিঝিল হয়ে সদরঘাট পর্যন্ত চলবে বাস। আর ১৩ নম্বর রুটে হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী-টেকনিক্যাল-শ্যামলী-আগারগাঁও, বিজয় সরণি-মহাখালী হয়ে গুলশান-১, বাড্ডা, রামপুরা ও স্টাফ কোয়াটার পর্যন্ত যাবে বাস।

কমলা: আরবান ক্লাস্টারে কমলা রঙের বাস চলবে ১১২২টি, ১৪ থেকে ২০ নম্বর রুটে। ১৪ নম্বর রুটে মিরপুর চিড়িয়াখানা থেকে শুরু করে মিরপুর-১, টেকনিক্যাল, শ্যামলী, আসাদগেট, সায়েন্স ল্যাব, নিউমার্কেট, আজিমপুর, ফুলবাড়িয়া, তাঁতীবাজার, বাবুবাজার, কেরাণীগঞ্জ হয়ে বান্দুরা পর্যন্ত চলবে বাস। ১৫ নম্বর রুটে মিরপুর-১২ থেকে শুরু করে মিরপুর-১ ও মিরপুর-১০,  শেওড়া পাড়া, আগারগাঁও, ফার্মগেট, শাহবাগ, পল্টন, গোলাপশাহ মাজার, তাঁতীবাজার,  রায়সাহেব বাজার হয়ে সদরঘাট পর্যন্ত বাস চলবে। অন্যদিকে ১৬ নম্বর রুটে বাস চলবে মিরপুর-১৪ থেকে শুরু করে মিরপুর-১০, শেওড়াপাড়া, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, বাংলামোটর, মগবাজার, মৌচাক, কমলাপুর, শাপলা চত্বর, দয়াগঞ্জ হয়ে পোস্তগোলা পর্যন্ত।

এদিকে, ১৭ নম্বর রুটে গাবতলী থেকে শুরু করে বাস চলবে মিরপুর-১, কালশী, জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার, কুড়িল ফ্লাইওভার, নতুন বাজার, বেরাইদ, বাড্ডা, রামপুরা সেতু, বনশ্রী হয়ে স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত। ১৮ নম্বর রুটে মিরপুর-১২ থেকে শুরু করে মিরপুর-১০, শেওড়াপাড়া, ফার্মগেট, বাংলামোটর, শাহবাগ, পল্টন, গুলিস্তান, শাপলা চত্বর, কমলাপুর, টিটিপাড়া, বাসাবো, খিলগাঁও হয়ে বাস চলবে তালতলা পর্যন্ত। ১৯ নম্বর রুটে মিরপুর চিড়িয়ানা থেকে শুরু করে বাস চলবে মিরপুর-১, টেকনিক্যাল, শ্যামলী, সায়েন্স ল্যাব, শাহবাগ, পল্টন, গুলিস্তান, শাপলা চত্বর, কমলাপুর, টিটিপাড়া হয়ে খিলগাঁও তালতলা পর্যন্ত। আর এই রঙের শেষ বাসগুলো চলবে ২০ নম্বর রুটে— মিরপুর-১২ থেকে শুরু করে ইসিবি চত্বর, মিরপুর-১০, কাজিপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, সোবহানবাগ, সায়েন্স ল্যাব, নিউমার্কেট হয়ে আজিমপুর পর্যন্ত।

সবুজ: সবুজ রঙের বাস থাকবে ১৪৩৩টি, চলবে ২১ থেকে ২৮ নম্বর রুটে চলবে। এর মধ্যে ২১ নম্বর রুটে বসিলা থেকে ট্রাক স্ট্যান্ড, শঙ্কর, জিগাতলা, সায়েন্স ল্যাব, মৎস্য ভবন, কাকরাইল, শাপলা চত্বর, হানিফ ফ্লাইওভার, সাইনবোর্ড হয়ে নারায়ণগঞ্জ যাবে বাস। ২২ নম্বর রুটে ঘাটারচর থেকে শুরু করে বসিলা, ট্রাক স্ট্যান্ড, আসাদগেট, ফার্মগেট, শাহবাগ, পল্টন, গুলিস্তান, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, মৃধাবাড়ি ব্রিজ, রুপসী হয়ে বাস যাবে বুলতা পর্যন্ত। ২৩ নম্বর রুটে ঘাটারচর-বসিলা থেকে শুরু করে ট্রাক স্ট্যান্ড, আসাদগেট, সায়েন্স ল্যাব, শাহবাগ, পল্টন, শাপলা চত্বর, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, সাইনবোর্ড, চট্টগ্রাম রোড হয়ে বাস যাবে মেঘনা ঘাট পর্যন্ত। আর ২৪ নম্বর রুটে একই জায়গা থেকে শুরু হয়ে জাপান গার্ডেন সিটি, শ্যামলী, শিশুমেলা, আগারগাঁও, কাজীপাড়া, কালশী, জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার হয়ে বাস যাবে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত।

রুট নম্বর ২৫-এর শুরুটাও একই জায়গা। এই রুটের বাসগুলো টাউন হল, আসাদ গেট, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, বিজয় সরণি, মহাখালী, কাকলি, কুড়িল হয়ে যাবে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত। ২৬ নম্বর রুটে একই স্থান থেকে শুরু হয়ে টাউন হল, আসাদ গেট, কলাবাগান, সায়েন্স ল্যাব, শাহবাগ, কাকরাইল, শাপলা চত্বর, দয়াগঞ্জ, পোস্তগোলা হয়ে বাস যাবে নারায়ণগঞ্জ। ২৭ নম্বর রুটে ঘাটারচরে যাত্রা শুরু করে বাস যাবে শিয়া মসজিদ, শ্যামলী, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, মহাখালী, গুলশান-১, রামপুরা সেতু, বনশ্রী হয়ে স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত। আর ২৮ নম্বর রুটেও একই স্থান থেকে শুরু করে মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড, জিগাতলা, সায়েন্স ল্যাব, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, কাকরাইল, মৌচাক, খিলগাঁও হয়ে তালতলা স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত চলবে বাস।

বেগুনী: বেগুনী রঙের বাস থাকবে ১০৮৯টি। এগুলো চলবে ২৯ থেকে ৩৪ নম্বর রুটে। ২৯ নম্বর রুটে কাঁচপুর-যাত্রাবাড়ী থেকে শুরু করে বাসাবো, মালিবাগ, নতুন বাজার, কুড়িল, বিমানবন্দর হয়ে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত চলবে বাস। ৩০ নম্বর রুটে ডেমরা, কোনাপাড়া, মৃধাবাড়ি থেকে সায়েদবাদ, মতিঝিল, ফকিরাপুল, মগবাজার, সাতরাস্তা, মহাখালী, বনানী, শেওড়া হয়ে বাস চলবে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত। ৩১ নম্বর রুটে কাঁচপুর, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান হয়ে বাস চলবে পল্টন, শাহবাগ, ফার্মগেট, শেওড়াপাড়া, মিরপুর-১০, ভাষানটেক পর্যন্ত।

৩২ নম্বর রুটের বাস চলবে ডেমরা ঘাট, কোনাপাড়া, মৃধাবাড়ি, সায়েদাবাদ, জয়কালী মন্দির, ইত্তেফাক, শাপলা চত্বর, শাহবাগ, ফার্মগেট, আসাদগেট, শ্যামলী, টেকনিকাল, মিরপুর- ১ হয়ে চিড়িয়াখানা পর্যন্ত। ৩৩ নম্বর রুটে নারায়ণগঞ্জ থেকে শুরু করে জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, পল্টন, কাকরাইল হয়ে মগবাজার, সাতরাস্তা, মহাখালী, কাকলী, জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার, কালশী, মিরপুর-১০, মিরপুর-১ ও দিয়াবাড়ি পর্যন্ত যাবে বাস। আর ৩৪ নম্বর রুটে সাইনবোর্ড, যাত্রাবাড়ী থেকে শুরু করে গুলিস্তান, পল্টন, শাহাবাগ, সায়েন্স ল্যাব, আসাদগেট, শ্যামলী, টেকনিক্যাল, মিরপুর-১, মিরপুর-১০ হয়ে মিরপুর-১২ পর্যন্ত চলবে বাস।

সাব-আরবান ক্লাস্টার

এই অংশের ১০৮৯টি বাস ৩৫ থেকে ৩৭ নম্বর রুটে চলবে। ৩৫ নম্বর রুটে শ্রীপুর-কাপাসিয়া থেকে গাজীপুর, মৌচাক, কোনাবাড়ি, গাজীপুর, চৌরাস্তা হয়ে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত চলবে বাস। ৩৬ নম্বর রুটে ঘোড়াশাল, কালিগঞ্জ থেকে শুরু করে মীরের বাজার হয়ে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত বাস চলাচল করবে। ৩৭ নম্বর রুটে বাস চলবে কালিয়াকৈর, চন্দ্রা থেকে আশুলিয়া, দোহার হয়ে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত।

এদিকে, আর ৩৮ থেকে ৪০ নম্বর রুট ‘নর্থ ওয়েস্টে’ চলবে ৯৯২টি বাস। ৩৮ নম্বর রুটের বিস্তৃতি হবে নন্দনপার্ক, ইপিজেড, বাইপাইল, ফ্যান্টাসি কিংডম, আশুলিয়া, দোহার, বেরিবাধ, মাজার রোড এলাকা। ৩৯ নম্বর রুটে চন্দ্রা, নন্দন পার্ক থেকে শুরু করে ইপিজেড, বাইপাইল, নবীনগর, সাভার হয়ে বাস চলবে হেমায়েতপুর পর্যন্ত। ৪০ নম্বর রুটে পাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ,  কালামপুর থেকে ধামরাই, নবীনগর, সাভার হয়ে বাস চলবে হেমায়েতপুর পর্যন্ত।

অন্যদিকে সাউথে ৪১ ও ৪২ নম্বর রুটে চলবে ৯৯টি বাস। ৪১ নম্বর রুটে ঝিলমিল প্রজেক্ট থেকে শুরু করে রুহিতপুর, নবাবগঞ্জ, দোহার, বান্দুরা হয়ে হরিরামপুর পর্যন্ত এবং ৪২ নম্বর রুট হরিরামপুর থেকে শুরু করে শ্রীনগর, মাওয়া হয়ে লৌহজং পর্যন্ত বাস চলাচল করবে।

ঢাকা চাকা ক্লাস্টার

এই ক্লাস্টারে বাস চলবে ৫২টি। রুট হবে নতুনবাজার থেকে পুলিশ প্লাজা, যা বর্তমানেও চলছে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন এই ৪২ রুটে ২২টি কোম্পানি ৯ হাজার ২৭টি বাস চলাচল করবে। প্রশ্ন উঠেছে— পুরনো বা মেয়াদোত্তীর্ণ বাসের কী হবে? সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যমান বাসগুলো মূল্যায়নের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোতে মালিকানার ভাগ নির্ধারণ করা হবে। এসব বাস ও মিনিবাস স্ক্র্যাপ করা হলে সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে। পাশাপাশি নতুন বাস কেনার জন্য ৪ থেকে ৫ শতাংশ সুদে ঋণ মিলবে সরকারের কাছ থেকে।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন এর জন্য গত দুই বছর ধরে রাজধানীতে নতুন করে বাস রুট দিচ্ছে না সরকার। এ কারণে মালিকরা নতুন করে কোনো বাস নামাতে পারছেন না। এখন সরকার রুট ঠিক করে দিলে সেভাবে পরিকল্পনা করে সড়কে বাস নামাতে হবে।

কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী নতুন পদ্ধতিতে বাসের কোনো ম্যানুয়াল টিকেট থাকবে না। স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে বাসগুলোতে টিকেটিং সিস্টেম করা হবে। পাশাপাশি ভাড়া নীতিও প্রণয়ন করা হবে। ফলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বা যাত্রীদের সঙ্গে হেল্পারদের বাগবিতণ্ডর কোনো অবকাশ থাকবে না। এছাড়া জেলার বাস ঢাকায় ঢুকতে পারবে না। এজন্য রাজধানীর প্রতিটি প্রবেশ পথে পর্যাপ্ত টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে।

পরিকল্পনায় নতুন করে ১০ টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সম্ভাব্য টার্মিনাল হতে পারে কেরাণীগঞ্জের বাঘৈর, হেমায়েতপুর, ভিরুলিয়া, গাজীপুর, বাইপাইল, কাঞ্চন, কাঁচপুর উত্তর, কাঁচপুর দক্ষিণ, আঁটিবাজারের ভাওয়াল ও ভুলতা।

জানতে চাইলে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসুল হক সারাবাংলাকে বলেন, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে এসব দেখভালের জন্য আলাদা একটি রেগুলেটরি অথরিটি করতে হবে। বাসগুলো আইন মেনে চলছে কি না, যাত্রীরা হয়রানি হচ্ছে কি না— এসব বিষয় কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে। তা না করতে পারলে কোনো সাফল্য মিলবে না।

নতুন এই পরিকল্পনার সুফলের কথা জানিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় গণপরিবহনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙখলা আসবে এবং চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাব থাকবে না।

সারাবাংলা/জেআর/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন