বিজ্ঞাপন

সার্চ কমিটিতে জাপার তালিকায় সিএজি-পিএসসি চেয়ারম্যান-২ বিচারপতি

December 20, 2021 | 11:19 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনে সার্চ কমিটি গঠনের জন্য চার-পাঁচ জন নাগরিকের একটি তালিকা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। সেই তালিকায় রাখা হয়েছে মহাহিসাব নিরীক্ষককে (সিএজি)। তার সঙ্গে রয়েছেন জাতীয় কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান। সুপ্রিম কোর্টের দু’জন বিচারপতিকেও এই তালিকায় দলটি রেখেছে বলে জানিয়েছে জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২০ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসি পুনর্গঠন বিষয়ক সংলাপে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টি এই তালিকা জমা দিয়েছে। জাতীয় পার্টির মাধ্যমেই এদিনই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সংলাপ শুরু করেছেন।

রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন বঙ্গভবনে বিকেল ৪টার পর শুরু হয় এই সংলাপ। পরে সন্ধ্যায় বঙ্গভবন থেকে বের হয়ে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের নিজেই অপেক্ষমাণ সংবাদকর্মীদের জানান, সার্চ কমিটির জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে চার-পাঁচ জনের একটি তালিকা তারা দিয়েছেন। তবে তালিকায় কার কার নাম রয়েছে, সে তথ্য জানাতে চাননি তিনি।

আরও পড়ুন- ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা চান রাষ্ট্রপতি

বিজ্ঞাপন

সোমবার রাতে জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্রে সঙ্গে কথা বলে রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়া ওই তালিকার চার জনের তথ্য পাওয়া গেছে। সার্চ কমিটির সদস্য হিসেবে জাতীয় পার্টি প্রথমেই প্রস্তাব করেছে মহাহিসাব নিরীক্ষকের নাম। বর্তমানে এই পদে দায়িত্ব পালন করছেন সরকারের সাবেক অর্থ সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী। বিসিএস হিসাব ও নিরীক্ষা ক্যাডারের ১৯৮৪ ব্যাচের এই কর্মকর্তা ৩৩ বছর ধরে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। ২০১৮ সালের ১৭ জুলাই তিনি সাংবিধানিক পদ মহাহিসাব নিরীক্ষক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, জাতীয় পার্টির তালিকায় আরও রয়েছে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যানের নাম। বর্তমানে এই পদে দায়িত্ব পালন করছেন আরেক অভিজ্ঞ আমলা মো. সোহরাব হোসাইন। ২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পিএসসি চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদানের আগে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) বিভাগের সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৯৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তা সোহরাব হোসাইনও সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দফতরে দায়িত্ব পালন করেছেন।

মহাহিসাব নিরীক্ষক মুসলিম চৌধুরী (বাাঁয়ে) এবং পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন (ডানে)

জাতীয় পার্টির দলীয় সূত্র বলছে, সার্চ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দু’জন বিচারপতিকেও রাখার কথা বলেছে জাতীয় পার্টি। এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এক জন এবং হাইকোর্ট বিভাগের এক জন বিচারপতিকে তারা এই কমিটিতে রাখার প্রস্তাব করেছে। তবে এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো বিচারপতির নাম দলটির পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়নি।

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে অবশ্য জাপা চেয়ারম্যান সন্ধ্যায় বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে আমরা ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের দাবিই জানিয়েছি। তারপরও যদি রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করতে চান, আমরা বলেছি এটি যেন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সার্চ কমিটি হয়। সেরকম হলে আমরা অবশ্যই বিবেচনা করব। আমাদের পক্ষ থেকেও সার্চ কমিটির জন্য চার-পাঁচ জনের নাম দিয়েছি। তবে তাদের নাম এই মুহূর্তে আমরা প্রকাশ করব না।

আরও পড়ুন- আইন করা সম্ভব না হলে ইসি গঠনে অধ্যাদেশ চায় জাপা

রাষ্ট্রপতির কাছে ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের দাবির কথা জানিয়ে জি এম কাদের বলেন, সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে সরকার আইন করতে না চাইলে আমরা আইন প্রণয়নে কাজ করব। আমাদের দায়িত্ব দিলে আমরা এই সময়ের মধ্যেও আইন করতে পারব। তারপরও যদি আইন করা সম্ভব না হয়, তাহলে রাষ্ট্রপতি ইচ্ছা করলে অর্ডিন্যান্স (অধ্যাদেশ) জারির মাধ্যমে আইন জারি করতে পারেন। সেই অধ্যাদেশের আওতায় নির্বাচন কমিশন গঠন করা যেতে পারে।

সংবিধান অনুযায়ী, একটি আইনের অধীনে রাষ্ট্রপতিতে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চার জন নির্বাচন কমিশনারের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কোনো আইন প্রণয়ন করা যায়নি। ফলে রাষ্ট্রপতির কর্তৃত্বেই নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে আসছে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- ইসি পুনর্গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে জাপা

মো. জিল্লুর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকাকালে ২০১১ সালে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সার্চ কমিটি গঠন করেন। পরে সেই সার্চ কমিটি নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য একটি প্যানেল প্রস্তাব করে। রাষ্ট্রপতি সেই প্যানেল থেকে একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং চার জনকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেন। একই ধারাবাহিকতায় পরে আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তিনিও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ আয়োজন করছেন।

বর্তমান নির্বাচন কমিশন ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্বভার গ্রহণ করে। সে হিসাবে আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে এই কমিশনের মেয়াদ। এর আগেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশনের ওপরেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ভার থাকবে। এর জন্য বিভিন্ন মহল থেকে ইসি গঠন সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের দাবি উঠলেও আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারির আগে হাতে সময় কম। তাছাড়া এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় বলে সবার সঙ্গে বিস্তৃত পরিসরে আলোচনা করেই এই আইন প্রণয়ন করা উচিত। ফলে এবারে সম্ভবত নির্বাচন কমিশন গঠন আইন প্রণয়ন সম্ভব হবে না।

আরও পড়ুন-

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ শুরু আজ

ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের দাবিতে অনড় থাকবে জাপা

ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শুরু সোমবার, প্রথম দিন থাকবে জাপা

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন