বিজ্ঞাপন

বিচার পেতে আমার মতো যেন চোখের পানি ফেলতে না হয়: প্রধানমন্ত্রী

December 28, 2021 | 8:32 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ন্যায় বিচার মানুষের প্রাপ্য। সেটি যেন সবসময় পায়, সেটিই চাই। অন্তত আমার মতো বাবা-মা হারিয়ে কাউকে যেন বিচার পাওয়ার জন্য চোখের পানি ফেলতে না হয়। কারণ আমরা ভুক্তভোগী, আমরা জানি বিচার না পাওয়ার কষ্টটা কী!

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেলে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক প্রকাশিতব্য মুজিববর্ষ স্মারক প্রকাশনা বঙ্গবন্ধু ও বিচার বিভাগ এবং Bangabandhu and the Judiciary ও মুজিববর্ষ স্মরণিকা ন্যায় কন্ঠ’র মোড়ক উন্মোচন ও প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে যুক্ত ছিলেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনও বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) তৃণমূলের সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন, গণতন্ত্রের একটি ভিত্তি রচনা করতে চেয়েছিলেন। আমি জানি, এ কারণে অনেকে হয়ত দলের মধ্যে দুই চারজন আপত্তি করেছিলেন। যারা নিজেদের দুর্বল ভাবতেন, তারা হয়ত ভেবেছিলেন গণতান্ত্রিক সিস্টেম চালু হয়ে গেলে তারা ভোট করে হয়ত নির্বাচিত হতে পারবেন না। সে রকম ভয় কারও কারও মনে ছিল।’

‘সব থেকে বড় কথা হলো এই সিস্টেমে দুইটা নির্বাচন হয়, একটি হলো যে কিশোরগঞ্জে, সেখানে সৈয়দ নজরুল ইসলাম তিনি তখন বাংলাদেশের উপ-রাষ্ট্রপতি। তার ভাই নির্বাচন করে পরাজিত হন একজন স্কুল মাস্টারের কাছে। আরেকটা ইলেকশন হয়েছিল বোধহয় সিলেটে, সেখানে একটা সাধারণ মানুষ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসে। বঙ্গবন্ধু যদি ওই সিস্টেমটা যদি একবার করতে পারতেন তাহলে জনগণ বুঝতে পারত তার ভোটটা কতটা শক্তিশালী। জনগণ তার ভোটাধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে পারক। এ দেশে আর কখনও দুঃসময় আসত না।’

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭৫ এর পর দেশে বারবার ক্যু হয়েছে।’ এ সময় দেশে ১৯/২০ বার ক্যু হয়েছে সে প্রসঙ্গেও বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। ১৯৭৫’ পরবর্তী সামরিক শাসকদের বিভিন্ন নেতিবাচকতা প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

বিচার বিভাগের উন্নয়নের জন্য বা দেশের মানুষের উন্নয়নে কী করেছি, সেটি আমি বলতে চাই না। যেহেতু আমার বাবা চাইতেন স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, আমরা সরকারে এসে সেই স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা আমরা নিশ্চিত করেছি বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

বিচার বিভাগ পৃথকীকরণসহ মানুষ যেন বিচার পায় সে লক্ষ্যে তার সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করার কথা তুলে ধরেন। বিচার বিভাগে ই-জুডিশিয়াল করার প্রকল্প হাতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, করোনাকালে ভার্চুয়াল কোর্ট করারও প্রসঙ্গ ‍তুলে ধরেন। ভার্চুয়াল কোর্টের কারণে করোনাকালে বিচার কার্য স্থবির হয়ে যায়নি, বিচার কার্য চলমান ছিল বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের টনা মেয়াদে বিচার বিভাগের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করার কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে সবসময় বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। কাজেই আমাদের দেশটা যেমন বিশ্বে একটা মর্যাদা নিয়ে চলবে। সঙ্গে সঙ্গে দেশের সমস্ত অঙ্গগুলো যেন মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে আমরা সেটি করতে চাই। আমরা সেইভাবেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কখনো বিচার কার্যে হস্তক্ষেপ করিনি। কারণ এর আগে অনেক ঘটনা আছে। দেখা গেছে ফলস সার্টিফিকেট বা ছাত্রদলের কাঁধে হাত রেখে কাকে কী রায় দেওয়া হবে। এরকম বহু ন্যাক্কারজনক ঘটনাও বাংলাদেশে ঘটেছে। আমি অন্তত এইটুকু বলতে পারি, আমরা সরকারে আসার পর পরপর তিনিবার এখন আমরা ক্ষমতায় বা এর আগে একবার ছিলাম আমরা কিন্তু সেটা করার সুযোগ দেইনি।’

সবসময় সবাই একটা ন্যায়ের পথে চলতে পারে, আমরা সেই ব্যবস্থা করেছি বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

আজকে বিচার বিভাগের কাছে সত্যি আমি কৃতজ্ঞ। এই কারণে যে জাতির পিতার বিরুদ্ধে মামলা, বারবার তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। এই তথ্যগুলো সবাই জানে। কিন্তু সেই মামলাগুলো কী ছিল বা রায়গুলো কী ছিল বা তিনি বিচার বিভাগের জন্য কী কী কাজ করে গেছেন? সেটা এইভাবে একসঙ্গে কেউ জানতে পারেনি। এটি হলো বাস্তবতা। কিন্তু তার বিরুদ্ধে পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ ১৯৪৮ সাল থেকে যে রিপোর্টগুলো করেছিল আমি ১৯৯৬ সালে সরকারে এসে রিপোর্টগুলি সংগ্রহ করি। ফটোকপি করে রাখি। এরপর আবার পাঠিয়ে দেই। ২০টি বছর আমি আর আমার সাথে বান্ধবী বেবি মওদুদ মিলে সিক্রেটস প্রকাশ করার উদ্যোগ নিই।’

ফাইলের তথ্যগুলো থেকে ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শীর্ষক বই আকারে প্রকাশ করার প্রসঙ্গের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন,‘ সবচেয়ে বড় কথা কোর্টের কাছে যে ডকুমেন্টগুলো রাখা ছিল, সেটা প্রকাশ করার জন্য উদ্যোগটা নিলাম। এটি মহতি উদ্যোগ বলে মনে করি। কারণ এর মধ্যে থেকে বাংলাদেশের ইতিহাসের অনেক কিছু জানা যাবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিচারের রায় ইংরেজিতে লেখা হয়। আমি এসবি রিপোর্ট করতে গিয়ে একটা জিনিস দেখেছি; প্রত্যেকটার নিজস্ব একটা ভাষা আছে, শব্দ আছে। কতকগুলো শব্দকোষ থাকে। যার অর্থ সবাই জানে না। সে জন্য আলাদাভাবে ট্রান্সলেটর নিয়োগ করা দরকার এবং তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যেন সঠিকভাবে রায়ের তরজমটাতে করতে পারে।’

এ তরজমার বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণের দরকারও আছে বলে মনে করেন শেখ হাসিনা।

তিনি অনুবাদ উইং করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এ জন্য আলাদা একটি উইং করে দিতে পারেন। অনুবাদটাই তাদের কাজ থাকবে। এটি শুধু এখানে একেবারে না, নিম্ন আদালত পর্যন্ত রাখতে হবে। তাহলে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা রায়ও শুনে মানুষ জানতে পারবে তার ব্যাপারে কী রায় হলো।’

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘বহুবছর বিচার না পেয়ে মনে অনেক দুঃখ ছিল। এ হত্যার বিচার পেয়েছি, এটিই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। রায় কার্যকর করতে পেরেছি। সে জন্য আমি দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ। আমার দলের কাছে কৃতজ্ঞ। আর অবশ্যই বিচার বিভাগের কাছে। যারা সাহস করে জাতির পিতার হত্যার বিচারের রায়টা দিয়েছেন আর সেই ন্যায়বিচারটা হয়েছে। তবে এখন আরেকটা দায়িত্ব রয়ে গেছে যে। পেছনে যে চক্রান্ত রয়েছে তা খুজে বের করতে হবে। একদিন এই চক্রান্তও বের হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি নিজেও অনেকগুলো মামলার আসামি ছিলাম। খালেদা জিয়া আমার বিরুদ্ধে ১২টা মামলা দিয়েছিল। এরপর কেয়ারটেকার সরকার এলো ২০০৭ সালে। আমি বিরোধী দলে থাকা সত্ত্বেও প্রায় ৫টা মামলা হয়েছিল। প্রত্যেকটা মামলাই অবশ্য দেশের মানুষের বিরুদ্ধে কী অী কাজ করেছি তার বিরুদ্ধে মামলা। আমি এটি নিয়ে কোনোদিন ঘাবড়ায়নি। কারণ আমি জানি ন্যায় সত্যের পথে থেকে সত্যের জয়টা হবেই। এটির প্রতি আমার বিশ্বাস আছে এবং সেটিই হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৮ এর নির্বাচনের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলে বাংলাদেশ এই উন্নতিটা করতে পেরেছে। যদিও অনেক ঝড়-ঝাপটা আমাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে। কখনো সেই হেফাজতিদেরকে নিয়ে এসে, তাদেরকে নিয়ে একটা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা, জ্বালাও-পোড়াও করা, কখনো অগ্নি-সন্ত্রাস সৃষ্টি করা, কখনও নানাভাবে ব্যতিব্যস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু দেশে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ দমন করা, দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করা, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, সেটিও সফলভাবে করে আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি; সেটিই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। এরপরও আমরা এগিয়ে যাব, সেই পরিকল্পনাও করে দিয়েছি।’

সারাবাংলা/এনআর/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন