বিজ্ঞাপন

সুগন্ধা সাঁতরে পাড়ি দিয়ে বেঁচে ফিরলেন সপরিবারে

December 29, 2021 | 4:41 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

বরগুনা: ডাক্তার দেখিয়ে গত বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে সপরিবারে ঢাকা থেকে বরগুনায় ফিরছিলেন আবদুল্লাহ হাই নেছারী। অভিযান-১০ লঞ্চের পেছনের একটি স্টাফ কেবিনে ঘুমাচ্ছিলেন তারা। হঠাৎ কেবিনের বাইরে মানুষের ডাক চিৎকারে ঘুম ভাঙ্গে তার। আবদুল্লাহ হাই কেবিন থেকে বাইরে বেরিয়ে দেখেন আগুনের লেলিহান শিখা। মুহূর্তের মধ্যেই যেন আগুন পুরো লঞ্চে ছড়িয়ে পড়ল।

বিজ্ঞাপন

এ সময় ধোঁয়ায় চারপাশ অন্ধকার হয়ে পড়ে। তার স্ত্রী এবং ছেলে তখনও কেবিনে। আবদুল্লাহ হাই এসময় দিশেহারা হয়ে করণীয় ভাবছিলেন। এরপরই স্ত্রী আর ছেলেকে নিয়ে লঞ্চের পেছনে চলে যান। জীবন বাচাঁতে সপরিবারে নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ওই রাতে প্রায় এক ঘণ্টা সাঁতার কেটে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন আবদুল্লাহ হাই নেছারী।

তিনি বেতাগী ছালেহিয়া কামিল মাদরাসার সহকারী অধ্যাপক এবং উপজেলা জামে মসজিদের পেশ ইমাম। লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের পর সাঁতরে সপরিবারে বাঁচে ফেরার গল্প সারাবাংলাকে জানিয়েছেন তিনি।

আবদুল্লাহ হাই বলেন, ‘আনুমানিক রাত সোয়া তিনটার দিকে মানুষের ডাক চিৎকারে আমার ঘুম ভাঙ্গে। পরিবারের জীবন বাচাতে নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার সিধান্ত নেই। তবে আমার স্ত্রী ও ছেলে নদীতে ঝাঁপ দিতে ভয় পাচ্ছিল। তখন আমি প্রথমে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ওদের ঝাঁপ দিতে বলি। ওই সময় আমার সঙ্গে ১৫ হাজার টাকা ও ২টি মুঠোফোন ছিল। নদীতে কিছুক্ষণ সাঁতার কাটার পর আমার মনে হলো—আমার স্ত্রী পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। তখন আমি আর ছেলে দুজনে মিলে তার দুই হাত ধরে কোনোরকমে সাঁতার কাটতে থাকি।’

বিজ্ঞাপন

এরপর সুগন্ধা নদীর তীরে থাকা স্থানীয় লোকজন ভোর সোয়া পাঁচটায় তাদের উদ্ধার করে একটি বাড়িতে নিয়ে আশ্রয় দেন। পরে স্থানীয় লোকজন পুরোনো কাপড় এবং আগুন জ্বালিয়ে তাদের শরীরে তাপ দিয়ে সাহায্য করে।

তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা শেষে পরিবার নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। ঢাকা থেকে এই লঞ্চে ওঠার সময়ই মন সায় দিচ্ছিল না। সদরঘাট ছাড়ার পর থেকে লঞ্চের শব্দটা আমার কাছে ভালো লাগেনি। সঙ্গে থাকা মালামালের সঙ্গে লঞ্চের কেবিনে জামাইয়ের দেওয়া ৭০ হাজার টাকা, ৫টি মোবাইল ফোন এবং ছেলের দাখিল পরীক্ষার সার্টিফিকেট ছিল। লঞ্চের আগুনে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কোনোরকমে শুধু জীবন নিয়ে বেঁচে ফিরতে পেরেছি।’

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে এমভি অভিযান-১০ নামের লঞ্চটি প্রায় ৬০০ যাত্রী নিয়ে ঝালকাঠি শহরের কাছাকাছি পৌঁছার পর সুগন্ধা নদীতে থাকা অবস্থায় হঠাৎ আগুন লাগে। এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আইই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন