বিজ্ঞাপন

গ্রেফতার এড়াতেই বাউল সেজে ৭ বছর পার!

January 13, 2022 | 6:36 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: হেলাল, ওরফে বাউল সেলিম। র‌্যাবের দাবি, সিরিয়াল কিলার। একাধিক হত্যা মামলায় গ্রেফতার এড়াতেই বাউল সেজে প্রায় সাত বছর পার করে দিয়েছে সে। তার নামে হত্যা মামলাসহ চারটি মামলা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘আনুমানিক ছয় মাস আগে এক ব্যক্তি ইউটিউবে প্রচারিত একটি গানের বাউল মডেল সম্পর্কে র‌্যাবের কাছে তথ্য দেয়। তিনি জানান, ওই মডেল সম্ভবত বগুড়ার বিদ্যুৎ হত্যা মামলার আসামি। সেই তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে। এক পর্যায়ে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে র‌্যাব নিশ্চিত হয়। এর পরই র‌্যাব ওই আসামিকে গ্রেফতার করতে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে।’

গত ১২ জানুয়ারি রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে মো. হেলাল হোসেন ওরফে সেলিম ফকির ওরফে বাউল সেলিম ওরফে খুনি হেলালকে (৪৫) গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে অপরাধ সম্পর্কিত সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতার বাউল ফকির জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, সে ২০০১ সালের বগুড়ার চাঞ্চল্যকর বিদুৎ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ফেরারি আসামি। এছাড়াও ১৯৯৭ সালে বগুড়ার বিষ্ণু হত্যা মামলা এবং ২০০৬ সালে রবিউল হত্যা মামলার আসামি বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায় সে।

১৯৯৭ সালে বগুড়াতে চাঞ্চল্যকর বিষ্ণু হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। গ্রেফতার হেলাল ২১ বছর বয়সে ওই হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামি ছিল। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয় বলে জানা যায়। এভাবেই সে বিভিন্ন অপারাধমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হতে শুরু করে এবং এলাকায় দূধর্ষ হেলাল নামে পরিচিতি পায়।

বাউল সেলিম আরও জানায় যে, ২০০০ সালে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এলাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের ধারালো দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে তার বাম হাতে মারাত্মক জখম হয় এবং বাম হাত পঙ্গু হয়। এই ঘটনার পর হতে তিনি বিভিন্ন নামে যেমন: দুর্ধর্ষ হেলাল, হাত লুলা হেলাল হিসেবে এলাকায় পরিচিতি পায়।

বিজ্ঞাপন

আর ২০০১ সালে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বগুড়ার মাহমুদুল হাসান বিদ্যুৎকে (২০) পূর্বপরিকল্পিতভাবে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভিকটিমের পরিবার বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় মামলা হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নাম্বার মামলা নম্বর-০২(১০)২০০১; ধারা-৩০২/৩৪। সেই মামলায় আদালত তাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়।

এছাড়া ২০০৬ সালে বগুড়াতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রবিউল নামক এক ব্যক্তিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গ্রেফতার হেলাল ওই হত্যাকাণ্ডের চার্জশিটভুক্ত আসামি।

হেলাল ২০১০ সালে বগুড়া সদর থানায় দায়ের হওয়া একটি চুরির মামলায় ২০১৫ সালে গ্রেফতার হন। সেইসঙ্গে ২০০১ সালের বিদ্যুৎ হত্যা মামলার বিচারকার্যও চলমান থাকে। ২০১৫ সালেই ওই চুরির মামলায় তিনি জামিনে মুক্ত হন এবং একইদিনে বিদ্যুৎ হত্যা মামলায় আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এছাড়াও ২০১১ সালে তার বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রয়েছে।

জানা যায়, গ্রেফতার হেলাল ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন এবং এলাকায় মুদি দোকানদারী শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লে এলাকায় তার কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তার বিরুদ্ধে ২০১০ সালে দায়েরকৃত চুরির মামলায় ২০১৫ সালে জামিন পাওয়ার দিনে বিদ্যুৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হলে সে সু-কৌশলে এলাকা ত্যাগ করেন এবং ফেরারি জীবন যাপন শুরু করেন। প্রথমে তিনি বগুড়া থেকে ট্রেনযোগে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে আসেন। পরবর্তী সময়ে কমলাপুর থেকে ট্রেনযোগে তিনি চট্টগ্রামে চলে যান এবং সেখানকার আমানত শাহ মাজারে ছদ্মবেশ ধারণ করে বেশ কিছুদিন অবস্থান করেন। সেখান থেকে ট্রেনযোগে সিলেটের শাহজালাল মাজারে চলে যায়। সিলেটে গিয়ে ছদ্মবেশ ধারণ করে আরও কিছুদিন অবস্থান করে।

বিজ্ঞাপন

আরও জানা যায় যে, বিভিন্ন সময়ে সে বাংলাদেশের বিভিন্ন রেলস্টেশন ও মাজারে ছদ্মবেশে অবস্থান করত। সে কিশোরগঞ্জ ভৈরব রেলস্টেশনে নাম-ঠিকানা ও পরিচয় গোপন রেখে সেলিম ফকির নাম ধারণ করে। আনুমানিক পাঁচ বছর আগে গ্রেফতার হেলাল নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনে কিশোর পলাশ ওরফে গামছা পলাশের একটি গানের শ্যুটিং চলাকালে রেললাইনের পাশে বাউল গান গাচ্ছিল। তখন শ্যুটিংয়ের এক ব্যক্তি তাকে গানের মিউজিক ভিডিওতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। সে সেই প্রস্তাবে রাজি হওয়া বহুল জনপ্রিয় ‘ভাঙ্গা তরী ছেড়া পাল’ শিরোনামের গানটিতে বাউল মডেল হিসেবে তাকে দেখা যায়।

সে প্রায় ৭ বছর ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ফেরারী জীবন যাপন করছে। এবং গত প্রায় ৪ বছর ধরে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশনের পাশে এক নারীর সঙ্গে সংসার করে আসছে। বিভিন্ন রেলস্টেশনে বাউল গান গেয়ে মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো বাউল সেলিম ওরফে খুনি হেলাল।

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন