বিজ্ঞাপন

যুদ্ধদেশে জাহাজ: বিএসসির ‘ভুলে’র তদন্ত দাবি

March 4, 2022 | 2:41 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: যুদ্ধাবস্থার মধ্যেও ইউক্রেনে জাহাজ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পরিচালনাকারী সংগঠন বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) জাহাজ পরিচালনায় গাফিলতির অভিযোগ এনেছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। রকেট হামলায় একজন নাবিকের মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে বিএসসির ভুল-গাফিলতি তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (৪ মার্চ) সকালে নগরীর বারিক বিল্ডিং মোড়ে সংগঠনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তোলা হয়েছে। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত হোসেন।

বুধবার (২ মার্চ) ইউক্রেনের স্থানীয় সময় বিকেল ৫টার কিছু পরে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজে বিমান হামলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় রুশ বাহিনীর এই হামলায় মো. হাদিসুর রহমান নামে এক নাবিকের মৃত্যু হয়। তিনি জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তার বাড়ি বরগুনা জেলা বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামে।

আরও পড়ুন- ইউক্রেনে আটকা জাহাজের নাবিকদের উদ্ধারের আকুতি

বিজ্ঞাপন

জাহাজটিতে মোট ২৯ জন নাবিক ছিলেন। একজনের মৃত্যুর পর বাকি ২৮ জনকে বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) সন্ধ্যায় জাহাজ থেকে নামিয়ে একটি বাংকারে নিয়ে যাওয়া হয়। সঙ্গে নিহতের মরদেহও নেওয়া হয়।

এ পরিপ্রেক্ষিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিতভাবে চার দফা দাবি দিয়েছে মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। দাবির মধ্যে আছেন— বিএসসি’র জাহাজ পরিচালনায় গাফিলতি তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন, ২৮ জীবিত নাবিককে নিরাপদে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা, নিহত হাদিসুরকে রাষ্ট্রীয় বীর ঘোষণা এবং রকেট হামলায় আগুন ধরে যাওয়া জাহাজটির আগুন দ্রুত নিভিয়ে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করায় নাবিকদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়া।

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ’১৫ ফেব্রুয়ারি জয়েন্ট ওয়ার কমিটি ইউক্রেনের অঞ্চলটিকে ওয়ার জোন হিসেবে ঘোষণা করেছে। এরপরও জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা বিএসসি’র সেখানে জাহাজ পাঠানো ভুল ছিল বলে আমরা মনে করছি। এই ভুলের কারণে আজ আমাদের একজন নাবিকের মৃত্যু এবং ক্ষয়ক্ষতি দেখতে হয়েছে। সেজন্য আমরা উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের মাধ্যমে তদন্ত করার দাবি জানাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

‘যেকোনো ঘটনা-দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি করা দরকার। বিএসসি অভ্যন্তরীণভাবে একটা কমিটি করতে পারে। কিন্তু যেহেতু এটি একটি বড় ইস্যু এবং আমরা মনে করি এ বিপদটি এড়ানো যেত, সেজন্য আমরা একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি করার দাবি জানাচ্ছি। আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত যে তথ্য আছে, জাহাজটা ইউক্রেনে যাওয়া অ্যাভয়েড করা যেত, এ জায়গায় আমরা একটি গাফিলতি মনে করছি। জাহাজ পরিচালনার দায়িত্বে আছে বিএসসি। বিএসসির গাফিলতির কারণে এটি হয়েছে এবং আমরা তদন্তের দাবি জানাচ্ছি,’— সাখাওয়াত হোসেন।

তিনি জানিয়েছেন, বিএসসি’র কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। গণমাধ্যমেও তাদের কোনো সঠিক জবাব পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় তারা তদন্ত কমিটি করে পুরো বিষয়টি জনসম্মুখে আসুক, সেটাই চান।

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

জাহাজের নাবিকরা ইউক্রেন না গিয়ে ফেরত আসতে পারতেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মাস্টারকে বিএসসি’র আইনে কতটুকু অথরিটি দেওয়া হয়েছে, সেটি দেখতে হবে। তদন্ত কমিটি হলে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে। বিএসসি’র আইনে কী আছে, তারা কী দায়িত্ব পালন করেছে, বিএসসি কীভাবে জাহাজ অপারেট করেছে— এজন্য পরিপূর্ণ উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি করা দরকার। তাহলে কীভাবে জাহাজটা গেল, কীভাবে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়ানো যেত এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতিতে করণীয় কী— এগুলো বেরিয়ে আসবে।’

জাহাজটি যুদ্ধকবলিত এলাকায় আটকে যাওয়ার পর সরকারি তরফে নাবিকদের নিরাপদে উদ্ধারের কোনো ব্যবস্থা না করা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে। অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকা জাহাজটি থেকে নাবিকদের নিরাপদে বাংকারে নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা মধ্যস্থতা করেছেন। সংশ্লিষ্ট বন্দর এলাকার একটি বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করে দেন। এভাবে তারাই বিনা খরচে নাবিকদের নিরাপদে বাংকারে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

‘জাহাজটি যখন আটকা পড়ে, তখন আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির একটি মিটিং হয়। সেখানে আমাদের প্রেসিডেন্ট জানান, ইউক্রেনের সীম্যানদের একটি গ্রুপ জাহাজের নাবিকদের সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত আছে। সেই গ্রুপে বাংলাদেশিও আছে। তারা তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন। আমাদের প্রেসিডেন্ট ডিজি শিপিংকে বিষয়টি জানান এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। এরপর তারা বিপদের সময় আমাদের সহযোগিতা করেন’,— মাহবুবুর রহমান।

বাংকারে ২৮ নাবিক এখন নিরাপদে এবং সুস্থ আছেন, এমন তথ্য পাওয়ার কথাও জানান মাহবুবুর রহমান।

১৮০ মিটার দীর্ঘ বাল্ক ক্যারিয়ার এমভি বাংলার সমৃদ্ধি তুরস্ক থেকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় নোঙর করে। ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে অলভিয়া বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। ফলে জাহাজের ২৯ নাবিক সেখানে নোঙর করা অবস্থায় জাহাজে আটকা পড়েন।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন