বিজ্ঞাপন

চা থেকে টি-কোলা’র উদ্ভাবন শাবিপ্রবি গবেষকদের

March 10, 2022 | 3:42 pm

শাবিপ্রবি করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসলগুলোর মধ্যে অন্যতম চা। ১৮৫৪ সালে প্রথমবারের মতো সিলেটের মালনিছড়া চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়। সে থেকেই দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চা উৎপাদন শুরু হয়। অধিকাংশ মানুষ চা খেতে পছন্দ করেন। তবে বর্তমান প্রজন্মের চায়ের থেকে অন্য পানীয় পণ্যের প্রতি আগ্রহ বেশি। তাই চা নিয়ে গবেষণা করে নতুন এক পানীয়র উদ্ভাবন করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) গবেষকরা। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘টি-কোলা’।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনলজি (এফইটি) বিভাগের অধ্যাপক ও টি-কোলা গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমেদ। তিন সদস্য বিশিষ্ট এ গবেষণা দলের অন্যরা হলেন- এফইটি বিভাগের এম. ইঞ্জিনিয়ারিং থিসিসে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী নাবিল নওরোজ বৈশাখ এবং একই বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী মো. আল ইমরান জাকারিয়া।

চা থেকে টি-কোলা উদ্ভাবন নিয়ে গবেষক অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ‘চা প্রদর্শনী-১৮’তে চায়ের বহুমুখী ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চা থেকে বিভিন্ন ফ্লেভারযুক্ত প্রসাধনী সামগ্রী বিশেষ করে সাবান, শ্যাম্পু, টুথপেস্ট, টি-কোলা, চায়ের আচার প্রভৃতি উৎপাদন করা সম্ভব। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে চা থেকে কোমল পানীয় (টি কোলা) তৈরি করতে ২০১৯ সাল থেকে গবেষণা শুরু করি। প্রায় তিন বছর গবেষণা শেষে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি আমরা।

বাম থেকে আল ইমরান জাকারিয়া ও অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমেদ, ছবি: সারাবাংলা

বাম থেকে আল ইমরান জাকারিয়া ও অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমেদ, ছবি: সারাবাংলা

শাবিপ্রবির এ গবেষক আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে শিশু-কিশোরদের মাঝে চায়ের প্রতি কিছুটা অনীহা কাজ করলেও কার্বোনেটেড বেভারেজের প্রতি তাদের আগ্রহ অনেক বেশি। এছাড়া গরমের দিনে চা থেকেও ড্রিঙ্কসের (পানীয়) প্রতি বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে মানুষরা। তবে এ ড্রিঙ্কসগুলো আমাদের শরীরে তেমন উপকার সাধন করে না, অনেক ক্ষেত্রে তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই এমন একটি কার্বোনেটেড ড্রিঙ্কস তৈরির পরিকল্পনা করি যাতে চা এর সকল গুনাগুণ বিদ্যমান থাকে। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের জন্য দরকার ছিল পর্যাপ্ত অর্থায়ন। সে লক্ষ্যে একটি গবেষণা প্রস্তাব তৈরি করে শাবিপ্রবি’র রিসার্চ সেন্টারে প্রেরণ করি। পরবর্তীতে প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে আমরা কাজ শুরু করি।’

বিজ্ঞাপন

গবেষক নাবিল নওরোজ বৈশাখ বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে গবেষণাটি শেষ করেছি তাতে একটি মানসম্পন্ন, স্বাস্থ্যকর এবং আকর্ষণীয় ‘টি কোলা’ প্রস্তুত করতে সক্ষম হই। এতে আমরা দুই ধরনের ‘ব্ল্যাক টি’ এবং ‘গ্রিন টি’ উভয় নিয়ে টি-কোলা তৈরি করি।’

তিনি আরও বলেন, আমাদের তৈরি ড্রিঙ্কসগুলোতে কেমিক্যাল অ্যানালাইসিস করে চায়ের উপকারী উপাদান পলিফেনল, ক্যাফেইন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খাদ্যগুণ ইত্যাদি বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়া ভোক্তাদের নিকট গ্রহণযোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য আমরা সেনসরি অ্যানালাইসিস টেস্ট করেছি। সেখানেও আমরা আশানুরূপ ফলাফল পেয়েছি। আশা করি, সামনে আমরা একটি স্বাস্থ্যকর বেভারেজ পাব।

ছবি: সারাবাংলা

ছবি: সারাবাংলা

আরেক গবেষক আল ইমরান জাকারিয়া বলেন, আমরা যে ড্রিঙ্কসগুলো তৈরি করেছি তার মেয়াদ তিনমাস পর্যন্ত থাকবে। তবে এ মেয়াদ আরও বাড়ানোর বিষয়ে কাজ করছি। এছাড়াও সুগারের পাশাপাশি এর সমগুণ সম্পন্ন নন-সুগার পণ্য তৈরি করেছি যাতে করে ডায়াবেটিসের রোগীরাও টি-কোলা গ্রহণ করতে পারবেন।

বিজ্ঞাপন

সার্বিক বিষয়ে ড. ইফতেখার আহমেদ বলেন, এই টি-কোলা তৈরি করতে যেসব কাঁচামাল প্রয়োজন তার অধিকাংশ আমাদের দেশেই রয়েছে। এতে পণ্যটি তৈরি করতে অন্যান্য পানীয়র চেয়ে কম খরচ হবে। তাই এর দাম ও সীমিত থাকবে। এখন গবেষণাটি প্রকাশের জন্য কাজ চলছে।

তিনি বলেন, গবেষণা সংশ্লিষ্ট পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতির অভাবে আমরা নিজেদের গবেষণাগারে কিছু টেস্ট সম্পন্ন করতে পারিনি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই গবেষণাটি আরও বৃহৎ পরিসরে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। এতে এ উদ্ভাবনটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।

সারাবাংলা/এনএস

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন