বিজ্ঞাপন

চৈত্র শেষের গান হলো না, বর্ষবরণে জাগবে চট্টগ্রাম

April 13, 2022 | 8:34 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো : দুই বছর পর করোনার সংক্রমণ কাটিয়ে উঠলেও প্রশাসনের বিভিন্ন বিধিনিষেধের কারণে আয়োজকদের অনীহায় চট্টগ্রামে এবার বাংলা বর্ষবিদায়ের দিনে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়নি। শুধুমাত্রা সিআরবির শিরিসতলায় বেলুন উড়িয়ে বর্ষবরণের আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে। তবে দুই বছর বন্ধ থাকার পর বিধিনিষেধ মেনে সংক্ষিপ্ত আয়োজনে বর্ষবরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

চৈত্রের শেষদিনে বাংলা বর্ষবিদায় উপলক্ষে শোভাযাত্রা, গান, নাচ, আবৃত্তিসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকত চট্টগ্রাম। গেল দুইবছর সেই আয়োজনে বাধ সেধেছিল করোনার সংক্রমণ। এবার রমজানের কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আয়োজন সংক্ষিপ্ত করার তাগাদা ছিল। এছাড়া নিরাপত্তাজনিত কারণে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করায় বর্ষবিদায়ের আয়োজনই বাদ দিয়েছেন আয়োজকরা।

নগরীর সিআরবির শিরিসতলায় বুধবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে একুশে পদকপ্রাপ্ত গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম মালেক বেলুন উড়িয়ে নববর্ষের আয়োজনের উদ্বোধন করেন। এসময় তিনি বলেন, ‘কোভিড এবং রমজান উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে কিছু বিধিনিষেধ আমাদের দেয়া হয়েছে। আমরা বিধিনিষেধ মেনেই বর্ষবিদায় দিচ্ছি। আগামীকাল আমরা নতুন বছরকে বরণ করব। বিদায়ী বছরের যত দুঃখ, গ্লানি, হতাশ সব আমরা বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দিতে চাই। নতুন বছর যেন আমাদের জীবনে অনাবিল সুখ, শান্তি নিয়ে আসে সেই প্রত্যাশা আমরা করছি।’

এ সময় আয়োজক সংগঠন নববর্ষ উদযাপন পরিষদের সংগঠকদের মধ্যে উদীচী চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. চন্দন দাশ, সাধারণ সম্পাদক শীলা দাশগুপ্তা ও সহ সাধারণ সম্পাদক জয় সেন, কবি কামরুল হাসান বাদল, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, আবৃত্তিশিল্পী অঞ্চল চৌধুরী, মিলি চৌধুরী, সংগঠক হাসান মারুফ রুমী ছিলেন। মিনিট দশেকের মধ্যে সংক্ষিপ্ত আয়োজন শেষ করে সংগঠকরা মঞ্চ ত্যাগ করেন।

বিজ্ঞাপন

নববর্ষ উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রামের সহ সভাপতি ডা. চন্দন দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘গানবাজনা এবার আমরা নিজেরাই বাদ দিয়েছি। গানবাজনা করতে গেলে ইফতারের সময় হয়ে যাবে। তাছাড়া কোভিড পরিস্থিতি মানুষ মাত্র সামলে উঠছে। রমজানও একটা বিষয়। সেগুলো মাথায় রেখে শুধুমাত্র ট্র্যাডিশনটা বজায় রাখার জন্য আমরা সংক্ষিপ্তভাবে বর্ষবিদায়ের আয়োজন করেছি।’

কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনেক বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) আমাদের হঠাৎ করে সিএমপি কার্যালয়ে ডেকে বলল, আমাদের নিজেদের সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করতে হবে। এটা আমরা অতীতে কোনোদিন করিনি। সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করতে আমাদের গলদঘর্ম হতে হয়েছে। এরপর আবার বলল, তারা আর্চওয়ে বসাবে, আমাদের বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এগুলো আমাদের কাছে অযথা হয়রানি মনে হয়েছে।’

‘আমরা বারবার দেখছি যে, অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি সংস্কৃতির কোনো আয়োজন হলেই প্রশাসন নানাভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করে। সাংগঠনিকভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে আমরা কোনো ‍হুমকি পাইনি। প্রশাসনের কাছে কোনো ম্যাসেজ আছে কি না জানি না, না হলে তারা আমাদের এভাবে হয়রানি করে কেন? এদেশে ওয়াজ মাহফিলে লক্ষ লক্ষ লোক হয়, অন্যান্য ধর্মীয় আয়োজনেও মানুষের সমাগম হয়, সেখানে তো এত বিধিনিষেধ দেয়া হয় না। বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা ধ্বংস করে দেশটাকে মৌলবাদি, ধর্মান্ধদের স্বর্গরাজ্য বানানোর একটি আয়োজন চলছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে’- বলেন কামরুল হাসান বাদল

বিজ্ঞাপন

বর্ষ বিদায়ের দিনে প্রতিবছর সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে নগরীর ডিসি হিল থেকে এবং বাদশা মিয়া সড়কের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হত। এবার কোনো আয়োজন হয়নি।

সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুচরিত দাশ খোকন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোভিড পরিস্থিতি এবং রমজান- এ কারণে বর্ষবিদায় ও বরণের কোনো আয়োজন আমরা করতে পারব কি না সন্দিহান ছিলাম। দুপুরের পর দুই দফা নামাজের জন্য খুব বেশি সময় হাতে ছিল না। এরপর আয়োজন করতে গেলে ইফতারির সময় হয়ে যেত। সেজন্য এবার বর্ষবিদায়ের সব আয়োজন বাদ দিয়েছি। আমাদের আয়োজনে অন্যান্য সময় বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা পেতাম। কোভিড পরিস্থিতিতে দুইবছর বন্ধ থাকায় এবার সেটাও পাইনি। সব মিলিয়ে আসলে হয়নি।’

তবে বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) ভোর সাড়ে ৬টা থেকে ডিসি হিলের মুক্তমঞ্চে বর্ষবরণের আয়োজন করেছে সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ। সুচরিত দাশ খোকন জানিয়েছেন, ৩২টি সংগঠন নাচ, গান, আবৃত্তি পরিবেশন করবে। শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমিও অংশ নেবে। প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময় দুপুর ২টার আগেই অনুষ্ঠান শেষ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

সিআরবির শিরিসতলায় সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তবে এবার সাহাবুদ্দিনের বলিখেলা আয়োজন বাদ দেওয়া হয়েছে বলে নববর্ষ উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রামের সহ সভাপতি ডা. চন্দন দাশ জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় নগরীর বাদশা মিয়া সড়কের ক্যাম্পাস থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করার প্রস্তুতি নিয়েছে। শোভাযাত্রা বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে নগরীর কাজির দেউড়িতে গিয়ে শেষ হবে।

চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে। শোভাযাত্রা শেষে একাডেমির অনিরুদ্ধ মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এই আয়োজন শেষ হবে সকাল সাড়ে ১০টায়।

এদিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) থেকে জানানো হয়েছে, নগরীর ডিসি হিল এবং সিআরবি শিরীষতলায় বৃহস্পতিবার বাংলা নববর্ষ উদযাপনে আসা দর্শনার্থীদের সুষ্ঠু চলাচলের জন্য ভোর ৬টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত সব ধরনের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। নগরীর ডিসি হিলে প্রবেশের ক্ষেত্রে লাভ লেইন, চেরাগি পাহাড়, এনায়েত বাজার মোড় ও বোস ব্রাদার্স (পুলিশ প্লাজা) মোড়ে রোড ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে ডাইভারশন দেওয়া হবে। ফলে ডিসি হিল অভিমুখে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এছাড়া সিআরবি শিরীষতলায় যাবার জন্য আটমার্সিং, ফ্রোন্সিস রোড, কাঠের বাংলো ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় মোড়ে রোড ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে ডাইভারশন দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

বিকেলে বর্ষবরণের বিভিন্ন ভেন্যু পরিদর্শনের পর নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্ষবরণের আয়োজন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকির তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে আমরা আমাদের নিরাপত্তা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আয়োজকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি, তাদের সতর্ক করেছি। প্রত্যেক ভেন্যুতে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। দর্শনার্থীদের প্রবেশের বিষয়ে কিছু নিয়ম মানতে হবে। আশা করি নিরাপত্তার স্বার্থে সবাই পুলিশকে সহযোগিতা করবে। আমরা সবাই মিলে সুন্দরভাবে বর্ষবরণের আয়োজন সম্পন্ন করতে পারব।’

সারাবাংলা/আরডি/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন