বিজ্ঞাপন

‘৭ লাখ ১০ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে’

June 8, 2022 | 8:46 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯৯৭ সাল হতে মে ২০২২ পর্যন্ত মোট ৭ লাখ ১০ হাজার ৪৬৮ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এর মধ্যে ব্যারাক হাউজ নির্মাণের মাধ্যমে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৪৮টি পরিবার, নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ করে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৫৩ টি পরিবার, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৭ হাজার ৯২টি পরিবার, আম্পান ও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ১ হাজার ১০০টি পরিবার রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৮ জুন) জাতীয় সংসদে মো. শহীদুজ্জামান সরকারের (নওগাঁ-২) লিখিত প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন সংসদ নেতা। এর আগে বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্ব টেবিলে উত্থাপিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন নোয়াখালী জেলা বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার চরপোড়াগাছা গ্রাম পরিদর্শনে গিয়ে সর্বপ্রথম ভূমিহীন-গৃহহীন-অসহায় পরিবারকে পুনর্বাসনের নির্দেশ দেন। জাতির পিতার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ভূমিহীন-গৃহহীন অসহায় পরিবার পুনর্বাসনের কার্যক্রম শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালের ১৯ মে কক্সবাজার ও সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর আমি ২০ মে কক্সবাজার জেলার সেন্টমার্টিন পরিদর্শনে গিয়ে গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবার পুনর্বাসনের নির্দেশনা দিই। আমার নির্দেশনায় উজ্জীবিত হয়ে একজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার দানকৃত জমিতে ঘূর্ণিঝড় কবলিত ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবার পুনর্বাসনের কার্যক্রম শুরু করা হয়। ১৯৯৭ সালে শুরু হওয়া ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’ আমার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে পরিচালিত হচ্ছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত গৃহহীন-ভূমিহীনদের কক্সবাজারের খুরুশকূলে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর মাধ্যমে ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। খুরুশকুলে এ পর্যন্ত ২০টি বহুতল ভবনে ১ম পর্যায়ে ৬৪০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আরও ১১৯টি বহুতল ভবন নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পটি জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশ্বের সর্ববৃহৎ পুনর্বাসন প্রকল্প। ‘একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২ শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে একক গৃহ নির্মাণের মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ লাখ ১৭ হাজার ৩২৯ টি গৃহ হস্তান্তর করা হয়। তৃতীয় পর্যায়ে ৬৮ হাজার ৩২২টি একক গৃহ নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে, যার মধ্যে ৩২ হাজার ৯০৪ টি ইতোমধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট ঘরগুলো শিগগিরই উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হবে। এছাড়া ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে মোট ২৮ হাজার ৬০৯টি দুর্যোগ সহনীয় বাড়ী নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় গুচ্ছ গ্রাম প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ করে ৭২ হাজার ৪৫২ টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভূমিহীন ও অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দুই কক্ষ বিশিষ্ট ৪ হাজার ২৩৭ টি গৃহ (বীর নিবাস) নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। গৃহায়ণ তহবিলের মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ করে ৮৮ হাজার ৭৮৬ টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। গৃহ নির্মাণের মাধ্যমে এ পর্যন্ত সারা দেশের ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ৩৪০ জন গৃহহীন পুনর্বাসিত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে গৃহ নির্মাণের মাধ্যমে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। পুনর্বাসিত পরিবার যেন ভবিষ্যতে মালিকানা সংক্রান্ত কোনো জটিলতায় না পড়েন সেজন্য উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক জমির মালিকানা স্বত্বের রেজিস্টার্ড দলিল/কবুলিয়াত, নামজারি খতিয়ান ও দাখিলাসহ সরেজমিনে দখল হস্তান্তর করা হয় ‘

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোথাও উপযুক্ত খাস জমি পাওয়া না গেলে জমি কিনেও ভূমিহীন-গৃহহীন ছিন্নমূল মানুষকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ৮৩টি উপজেলায় ১৭১ দশমিক ৮৭ একর জমি ক্রয় করা হয়েছে, যার মূল্য ১১৭ দশমিক ৬৫ কোটি টাকা। এছাড়াও সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ যেমন- তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া), বেদে, মান্তা, ভিক্ষুক, কুষ্ঠরোগী, হরিজন প্রভৃতি জনগোষ্ঠীকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না- এ দর্শনের আলোকে সারা দেশে গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’

বিজ্ঞাপন

এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের ‘মাথা গোঁজার ঠাঁই নাই’ এই কথাটি চিরতরে বিলুপ্ত করার জন্য সরকার বদ্ধপরিকর বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন