বিজ্ঞাপন

সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত মহিউদ্দিন আহমদ আর নেই

June 21, 2022 | 12:48 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মহিউদ্দিন আহমদ আর নেই। বার্ধক্যসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা নিয়ে রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ ছেড়ে বাংলাদেশের পক্ষ নিয়ে স্বাধীনতার জন্য কূটনৈতিক লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনিই ছিলেন অগ্রগণ্য।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২০ জুন) সন্ধ্যায় উত্তরার নিজ বাসায় মারা যান মহিউদ্দিন। অবসরপ্রাপ্ত এই কূটনীতিক লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতা ও ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। সপ্তাহ তিনেক আগেও তাকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছিল। কয়েকদিন আগে তাকে সেখান থেকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।

মহিউদ্দিন আহমদের ভাই জহির উদ্দিন আহমদ ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (২১ জুন) সকাল ৯টায় মহিউদ্দিন আহমদের প্রথম জানাজা উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের মসজিদ প্রাঙ্গণে হবে। একই দিন বাদ আসর গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার নুরপুর জিএমহাটে আরেকটি জানাজা হবে। মহিউদ্দিনের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পারিবারিক কবরস্থানেই তাকে দাফন করা হবে।

এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আরও একটি জানাজা অনুষ্ঠিত হবে মহিউদ্দিন আহমদের।

বিজ্ঞাপন

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মহিউদ্দিন আহমদ লন্ডনে তৎকালীন পাকিস্তান হাইকমিশনে কর্মরত ছিলেন। তবে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ১ আগস্ট ট্রাফালগার স্কয়ারে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এক সমাবেশে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করার ঘোষণা দেন তিনি। তখন থেকেই প্রবাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনে ভূমিকা রাখতে থাকেন।

মহিউদ্দিন আহমদ ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার নূরপুর গ্রামে জন্ম নেন ১৯৪২ সালের ১৯ জুন। বাবা আব্দুর রশিদ মাস্টারের প্রতিষ্ঠিত জিএম হাট স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু। পরে ফেনী কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন।

স্নাতক শেষ করার পর মহিউদ্দিন আহমদ বৃত্তি নিয়ে পড়তে যান করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরের বছর মাস্টার্স করে দেশে ফেরেন। ফেনী কলেজে অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু তার। পরে করাচিতে পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক্সে যোগ দেন তিনি। ১৯৬৭ সালে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতরে শুরু হয় তার কূটনৈতিক জীবন।

বিজ্ঞাপন

স্বাধীনতার পর ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন মহিউদ্দিন। ইন্দোনেশিয়ায় ও জেদ্দা মিশনে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন দায়িত্বে তিনি ছিলেন। পরে এরশাদ সরকারের আমলে তাকে কৃষি মন্ত্রণালয় ও সেখান থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরশাদের পতন হলে ফের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফিরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মিশনের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

খালেদা জিয়ার সরকার ক্ষমতায় এলে অবশ্য চাকরিচ্যুত হন মহিউদ্দিন আহমদ। তবে এর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন তিনি। পরে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এলে তাকে পদোন্নতি দিয়ে সচিব পদমর্যাদায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির অধ্যক্ষ করা হয়। ২০০১ সালের জানুয়ারিতে সচিব পদে থেকেই সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যান বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের অধিকারী মহিউদ্দিন আহমদ।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন