বিজ্ঞাপন

বাঙালির প্রমিথিউস শেখ মুজিবুর রহমান

August 15, 2022 | 1:44 pm

রনি অধিকারী

জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা ক্ষেত্রে অবদান রাখা গুণী বাঙালির সংখ্যা কম নয়; কিন্তু বঙ্গবন্ধু রাজনীতির ক্ষেত্রে দ্বিতীয়টি নেই। বঙ্গবন্ধু এমন এক রাজনীতিবিদ, যিনি বাঙালিকে উপহার দিয়েছেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র, বাঙালির বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন প্রথম শ্রেণিভুক্ত একজন রাজনীতিবিদ। যিনি ধারণ করেছিলেন মহৎ রাজনীতিবিদ ও মহৎ শাসকের গুণাবলি, কর্মের মধ্য দিয়ে যিনি নিজেকে উন্নীত করেছিলেন এক অনন্য উচ্চতায়।

বিজ্ঞাপন

রাজনীতিই সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করে। রাজনীতি তার সঠিক রাস্তায় থাকলে সবকিছুর বিকাশ ঘটে। রাজনীতি যদি তার সঠিক রাস্তা থেকে চ্যুত হয়, তবে সবকিছুই মুখ থুবড়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু এমন এক রাজনীতিবিদ, যিনি বাঙালিকে উপহার দিয়েছেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। এরচেয়ে বড় উপহার আর কিছু হতে পারে না। এখানেই তার শ্রেষ্ঠত্ব। এ কারণেই তিনি বাঙালি জাতির পিতা, বাঙালি জাতির কান্ডারি, বাঙালির বাতিঘর।
গ্রিক পুরাণের প্রমিথিউসের কথা নিশ্চয়ই সবাই জানেন। প্রমিথিউস মানুষকে সৃষ্টি করে দেবতাদের আদলে। মানুষরা পৃথিবীতে বসবাস শুরু করার পর তার মনে হলো, মানুষের আগুনের প্রয়োজন। তাই সে মানুষকে আগুন উপহার দেওয়ার জন্য জিউসের কাছে প্রস্তাব রাখল। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল জিউস। কিন্তু দমলো না প্রমিথিউস। স্বর্গ থেকে আগুন চুরি করে মানুষকে উপহার দিলো। এর ফলে জিউসের কোপানলে পড়লো প্রমিথিউস। ক্রোধান্বিত জিউস এক পাহাড়ের সঙ্গে বেঁধে ফেলল প্রমিথিউসকে। তার নির্দেশে এক বিশালাকার ঈগল প্রতিদিন ঠুকরে ঠুকরে খেয়ে ফেলত প্রমিথিউসের যকৃৎ। রাতের বেলায় সেই যকৃৎ আবার তৈরি হতো। এভাবে চললো বহু বছর। পরে জিউসপুত্র হারকিউলিস বন্দিদশা থেকে প্রমিথিউসকে মুক্ত করে। বঙ্গবন্ধুকে তুলনা করা যায় গ্রিক পুরাণের প্রমিথিউসের সঙ্গে। প্রমিথিউস যেমন মানুষকে ভালোবেসেছিল, তেমনি বঙ্গবন্ধু ভালোবেসেছিলেন বাঙালিকে। প্রমিথিউস মানুষকে দিয়েছিল সোজা হয়ে দাঁড়ানোর এবং আকাশের দিকে তাকাতে পারার ক্ষমতা। প্রমিথিউস মানুষকে দিয়েছিল আগুন, বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন বাঙালির জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র।

মানুষকে আগুন উপহার দেওয়ায় জিউসের কোপানলে পড়েছিল প্রমিথিউস, আর বাঙালিকে স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দেওয়ায় বিশ্বাসঘাতকদের কোপানলে পড়েন বঙ্গবন্ধু। তাই দু’জনের মধ্যে খুব বেশি ফারাক নেই। ফারাক শুধু এটুকু, প্রমিথিউসকে উদ্ধার করেছিল হারকিউলিস। বঙ্গবন্ধুকে ঘাতকদের বুলেট থেকে কেউ উদ্ধার করতে পারেনি। বাঙালিকে ভালোবাসে তিনি উৎসর্গ করেন নিজের জীবন। এটাই সত্য-সুন্দর ও বাস্তবতা।

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের সেই বিষাদ রজনীর কথা সবাই জানেন। ১৯৭৫-এর পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ তো সবার জানা। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর বদলে যেতে থাকলো বাংলাদেশের চেহারা। যে দেশের মানুষ অকাতরে জীবন দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছিল সে দেশটি আবার পেছনমুখী হাঁটতে শুরু করল।

বিজ্ঞাপন

পরবর্তীকালে জাতির পিতাকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার জন্য যা যা করা দরকার সব করার উদ্যোগ নিলো বিশ্বাসঘাতকরা। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নাম কি মুছে গেছে? তিনি শহীদ হয়েছেন সাতচল্লিশ বছর আগে। সাতচল্লিশ বছরে তাকে নিয়ে অসংখ্য কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নিবন্ধ রচিত হয়েছে। রচিত হয়েছে অনেক বই। বাংলার কোটি কোটি মানুষের বুকে উচ্চারিত হয়েছে, হচ্ছে তার নাম। প্রতি বছরই পালিত হচ্ছে তার জন্মদিবস। প্রতিবছরই পালিত হচ্ছে তার প্রয়াণদিবস। তার মানে ইতিহাসের পাতা থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার যে অপচেষ্টা হয়েছিল তা সফল হয়নি, সম্পূর্ণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। হওয়ারই কথা। বঙ্গবন্ধু উজ্জ্বল হচ্ছে তার কীর্তিগাঁথায়। কারণ, বঙ্গবন্ধু বাংলার সূর্য।

কৃষ্ণভয়ংকরী মেঘ মাঝেমধ্যে সূর্যকে ঢেকে ফেলে। কিন্তু তা খুবই সাময়িক, দীর্ঘক্ষণ সূর্যকে ঢেকে রাখা যায় না। সূর্য তার আপন বিভায় মেঘ তাড়িয়ে উঁকি দেবেই। দিন যতই যাচ্ছে ততই উজ্জ্বল হচ্ছেন বাঙালির প্রমিথিউস, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

লেখক : কবি, সাংবাদিক

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন