বিজ্ঞাপন

বে টার্মিনাল: ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের ঋণপ্রস্তাব বিশ্বব্যাংকের

September 4, 2022 | 10:21 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বন্দরের ‘বে টার্মিনাল’ প্রকল্পের ঋণ অনুমোদনের আগে অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে এসেছে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল। বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ট্রান্সপোর্ট স্পেশালিস্ট হুয়া তানের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। দলটি পাঁচদিন চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থান করবে বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমার শেষ প্রান্তে সিইপিজেডের পেছনে সাগরপাড় থেকে সাগরিকায় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের অদূরে রাসমনিঘাট পর্যন্ত প্রায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় এই টার্মিনাল গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এক দশক আগে পরিকল্পনা হলেও এখনও নির্মাণের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ২০১৬ সালে বে টার্মিনাল নির্মাণের কারিগরি, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। সমীক্ষায় কারিগরি ও অর্থনৈতিকভাবে এ টার্মিনাল গড়ে তোলার উপযুক্ত বলে মত দেওয়া হয়েছিল।’

সূত্রমতে, বে টার্মিনাল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ১০ থেকে ১২ মিটার ড্রাফটের ৬ হাজার কনটেইনার বহন ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ নোঙ্গর করা সম্ভব হবে। বন্দরের বিদ্যমান অবকাঠামোতে জেটিতে সর্বোচ্চ ১৮০০ একক ধারণক্ষমতার কনটেইনার জাহাজ ঢুকতে পারে। এখন বন্দরে জোয়ার-ভাটার ওপর ভিত্তি করে জাহাজগুলো জেটিতে ভেড়ে। কিন্তু বে টার্মিনালে ২৪ ঘণ্টাই জাহাজ ভিড়তে পারবে।

বিজ্ঞাপন

বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা বার বার বে টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরুর তাগিদ দিয়ে আসছিলেন। এ অবস্থায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রায় আড়াই হাজার একর জমির উপর নির্মিতব্য বে টার্মিনালের ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ এবং চ্যানেল ড্রেজিংয়ের জন্য প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে।

রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলটি প্রথমে বন্দর চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে বসে। এরপর বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। সভায় বন্দরের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, প্ল্যানিং, মেরিন, হাইড্রোগ্রাফি ও ট্রাফিকসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘বে টার্মিনালের ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ ও চ্যানেল ড্রেজিংয়ের জন্য ঋণ অনুমোদনের আগে প্রকল্পটির অগ্রগতি দেখতে এবং বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার জন্য এটি বিশ্বব্যাংকের কারিগরি মিশনের রুটিন সফর। পাঁচদিন চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থান করে বিভিন্ন সেশনে আলোচনায় অংশ নেবেন তারা। এরপর ঢাকায় গিয়ে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করবে।’

বিজ্ঞাপন

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ট্রান্সপোর্ট স্পেশালিস্ট হুয়া তানের নেতৃত্বে বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সেশনে আলোচনায় বসবে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দল। তবে দলটি ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে থাকবে। কারণ, তারা অন্যান্য প্রকল্পের বিষয়ে ঢাকায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য দফতরে বৈঠকের সময় নির্ধারণ করেছে।

সূত্র মতে, বে টার্মিনালের ব্রেকওয়াটার নির্মাণ এবং চ্যানেল ড্রেজিং কাজের জন্য একটি জার্মান প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শদাতা হিসাবে নিয়োগের জন্য বন্দরের একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয় সম্প্রতি অনুমোদন করেছে। চলতি বছরের এপ্রিলের শুরুতে টার্মিনাল নির্মাণের জন্য পরামর্শদাতা হিসাবে কোরিয়ান ডাইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড ও কোরিয়ান কুনহওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনসাল্টিং কোম্পানি লিমিটেডকে যৌথভাবে নিয়োগ দিয়েছে বন্দর। সংস্থাটি ইতোমধ্যে তাদের সূচনা প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের দলটি এই সফরের সময় এসব প্রতিবেদনের বিষয়েও আলোচনা করবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, বে-টার্মিনালে প্রাথমিকভাবে তিনটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে একটি ১ হাজার ২২৫ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল, একটি ৮৩০ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল এবং একটি দেড় হাজার মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল। তিনটি টার্মিনালের মোট দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার। মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ টার্মিনালে জেটি থাকবে ছয়টি। বে-টার্মিনালে মোট ১৩টি জেটি থাকবে। বে-টার্মিনালে মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটি সুবিধা থাকবে। প্রকল্পের পূর্ব দিকে রয়েছে পোর্ট অ্যাকসেস রোড ও রেলপথ।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন