বিজ্ঞাপন

কমেছে মাংস বিক্রি, বেড়েছে সামুদ্রিক মাছের দাম

October 14, 2022 | 8:55 pm

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বাজারে দামের যে উত্তাপ ছড়িয়েছে তা ক্রেতা সাধারণ কিনতে গিয়েই কেবলমাত্র বুঝতে পারছে। তবে শুধু ক্রেতারাই নয় বরং বিক্রেতারাও রীতিমত বিপাকে পড়েছেন। বিক্রেতাদের দাবি, বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) রাত হলে কয়েকটা গরু জবাই করতে হতো। আর শুক্রবার সকালেও বেশ কয়েকটা গরু জবাই করা লাগতো। আর এখন একটি গরু জবাই করলে সারাদিন বিক্রি করতে হয়। এমনও হয় যে এক গরুর মাংস কয়েকজন মিলে ভাগে বিক্রি করতে হয়।

বিজ্ঞাপন

মাংস বিক্রেতারা বলছেন, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা নেই তাই তারা এখন আর মাংস কিনতে পারছে না। হঠাৎ করে কেন এমন হলো বুঝে উঠতে পারছে না কেউ। অন্যদিকে খাসির মাংসের দাম কিছুটা কমলেও বিক্রি বাড়েনি।

এদিকে, বাজারে সব ধরনের (চাষ ও খাল বিল) মাছের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষ সামুদ্রিক মাছের দিকে ঝুঁকেছেন। তবে সেখানেও বিপত্তি। গত এক মাসে সামুদ্রিক মাছের দাম বেড়েছে অন্তত ৮০ থেকে ১০০ টাকা। ব্রয়লার মুরগীর দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ টাকা।

শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, সূত্রাপুর, সেগুনবাগিচা, কাপ্তান বাজার, শান্তিনগর, আজিমপুরসহ বেশ কয়েকটা বাজার ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

মাংসের বাজারে ঢুকে দেখা গেছে, দোকানের সামনে ক্রেতাদের তেমন ভীড় নেই। বিক্রেতারা মাংস নিয়ে বসে আছেন। সুত্রাপুরে জব্বার মাংস বিতানের মালিক আব্দুল জব্বার খান সারাবাংলাকে বলেন, দাম ২০ টাকা কমে ৬৮০ টাকা গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। এরপরেও বিক্রি বাড়ছে না। মাংস কেনা মানুষের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। কিছুদিন আগে মনে হয়েছিল কুরবানির ঈদ গেলো তাই হয়তো কম কিনছে লোকজন। কিন্তু ঈদের কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও মাংস বিক্রির হার বাড়েনি। এখন সহজেই বুঝতে পারছি মানুষ মাংস খাওয়া কমে দিয়েছে টাকার অভাবে। আবার অনেকে একেবারেই কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ মানুষের হাতে টাকা নেই।

কাপ্তান বাজারের লাবিব মাংসের দোকানের মালিক জহুরুল ইসলাম বলেন, আগে গরু জবাই দিতাম দিনে চারটা। আর এখন দুইটা। কোন কোন দিন একটা বিক্রি করতেই দিন শেষ। মানুষ মাংস খাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে।

পাশেই খাসির মাংসের দোকানদার বলছেন, খাসির মাংসের দাম কেজিতে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কমলেও ক্রেতা বাড়েনি। সবাই মাছ মুরগীর দিকে ঝুঁকছেন। কেউ এসে ভুরি বা পা নিয়ে যাচ্ছে। আবার কেউ মাথা কিনে নিয়ে খাচ্ছেন। হোটেল ছাড়া মাংস বিক্রি করা সমস্যা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

খাসির মাংসের দোকানে একজন ক্রেতা আব্দুর রহমান বলেন, আগে খাসির মাংস কিনতাম সপ্তাহে দুই থেকে তিন কেজি। আর এখন সপ্তাহে এক কেজি কেনা কষ্ট হয়ে পড়েছে। বাড়িতে কেউ গরুর মাংস খায় না। যে ব্যবসা করি সেখানেও বেচা বিক্রি নাই বললেই চলে। কেন এমন হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারও কাছে টাকা নেই। সবাই কোনরকম দিনাতিপাত করছেন।

সেগুনবাগিচায় গরুর মাংসের বাজারে কথা হয় ক্রেতা নাজমুন নাহার মলির সাথে। তিনি দোকানদেরকে দেখিয়ে দিয়ে বলেন, ওনাকে জিজ্ঞেস করেন আগে কত কেজি মাংস কিনতাম। আর আজ মাত্র এক কেজি মাংস কিনলাম। আমার স্বামী ছোট্ট একটা সরকারি চাকরি করে। যা বেতন পায় তা দিয়ে এখন দিন চলা মুশকিল হয়ে পড়েছে। আগে জিনিসপত্রের দাম কম ছিল কোনরকম খেয়ে বাঁচা যেত। এখন খাওয়াটা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কয়েকটি মাছ বাজারের চিত্র আরও ভয়াবহ। বেশির ভাগ ক্রেতার কমদামী মাছের কেনার দিকে ঝোঁক। সেখানেই সবাই ভীড় করছেন। যাত্রাবাড়ীতে দেখা যায়, বোয়াল, শোল, শিং, আইড়, বায়াম ও টেংরা মাছের দিকে ক্রেতা কম। রুই কাতল আর জাপানি মাছের দিকেও ক্রেতা কম। কারণ এসব মাছের কেজি কমপক্ষে ৩০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। সরপুঁটি, টাকি, তেলাপিয়ার দামও অনেক বেশি। তাই সামুদ্রিক মাছের দিকে সবাই ঝুঁকছেন। তবে এখানেও বিপত্তি। সামুদ্রিক মাছের দিকে ক্রেতাদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কেজিতে ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা দাম বেড়েছে।

একজন নারী সুরমা মাছ কিনে বলেন, এক মাস আগে এই মাছ কিনেছি ১৫০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে কিনেছি ২০০ টাকা কেজি আর আজ কিনলাম ২৪০ টাকা কেজি। কি খেয়ে বাঁচবো জানি না।

বিজ্ঞাপন

রবিউল ইসলাম সামুদ্রিক লইট্টা কিনেছেন। তিনি বলেন, ১০০ টাকা কেজি এই মাছ কিনতাম। আজ ২০০ টাকা কেজি কিনলাম। চেউয়া মাছ মাত্র ৮০ টাকা কেজি ছিল সেই মাছ এখন ১৭০ টাকা কেজি।

সামুদ্রিক মাছের দাম বাড়ার কথা বিক্রেতারাও স্বীকার করলেন। নুর নবী নামে এক বিক্রেতা বলেন, আগে ঘাটে সামুদ্রিক মাছ ডেকে ডেকে জোর করে ধরায়ে দিতো আমাদের। আর এখন খুঁজেও পাওয়া যায় না। মাছে হাত দেওয়া যায় না।

তিনি আরও বলেন, ক্রেতারা হয়তো মনে করেন আমরাই দাম বাড়িয়েছি, আসলে তা নয়। ঘাটে দাম বাড়ার কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

সারাবাংলা/ইউজে/এনইউ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন