বিজ্ঞাপন

টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান

January 12, 2023 | 3:39 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বৈশ্বিক অর্থনীতির টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং বিশ্বের দক্ষিণের দেশগুলোর উন্নয়নে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য গ্রুপ অব টোয়েন্টি (জি-২০) প্লাটফর্মে ৬টি প্রস্তাব পেশ করেছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ভারতের নয়াদিল্লি প্রান্তে যুক্ত হয়ে ‘ভয়েস অব দ্য সাউথ সামিট ২০২৩’ এর উদ্বোধনী লিডার্স সেশনে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

বিশ্বের দক্ষিণের বিভিন্ন দেশের দৃষ্টিভঙ্গি এবং অগ্রাধিকারগুলো ভাগাভাগি করে নিতে দেশগুলোকে একত্রিত করে ‘কণ্ঠের ঐক্য, উদ্দেশ্যের ঐক্য’ (ইউনিটি অব ভয়েস, ইউনিটি অব পারপাস) স্লোগানে দুই দিনব্যাপী এ ভার্চ্যুয়াল শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছে ভারত। প্রায় ১২০টি দেশকে এই ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

জি-২০’র প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ভারত সরকারকে উষ্ণ অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে জি-২০ প্ল্যাটফর্মকে আরও অর্থবহ করতে মোদির দৃঢ় প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতি বিবেচনায় নিয়ে একটি ন্যায়সঙ্গত ও সঠিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার এখনই সময়। আসুন, অধিকতর ভালো ভবিষ্যৎ এবং বিশ্বের জন্য একসঙ্গে কাজ করি।’

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি কোভিড-১৯ মহামারি, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এ নিয়ে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বজুড়ে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। বৈশ্বিক মন্দা, খাদ্য, জ্বালানি ও সারের সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব জনজীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী সাহসী, দৃঢ় ও সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।’

দক্ষিণ বিশ্বের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য জি-২০ প্ল্যাটফর্মের সামনে ৬টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন শেখ হাসিনা। ‘প্রথমত, মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে বিশ্বব্যাপী অবশ্যই শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সমান্তরালে সামগ্রিক বৈষম্য মোকাবিলায় নতুন একটি দৃষ্টান্তমূলক মডেল প্রয়োজন। তৃতীয়ত, স্বল্পোন্নত ও জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকাসহ সর্বাধিক ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জন্য বিশেষ অর্থায়ন প্রয়োজন।’

বিজ্ঞাপন

চতুর্থ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘নারীসহ সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে ‘ডিজিটাল ডিভাইস’ সংযুক্ত করতে হবে। তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য বিনিয়োগের মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগ নিন, যার জন্য অর্থায়ন এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পঞ্চমত, সুন্দর জীবনযাপনে সব মানুষের সমান অধিকার থাকতে হবে। এছাড়া জোরপূর্বক বিতাড়িত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার কথা বিশ্ব সম্প্রদায় অবশ্যই ভুলে যাবে না।’’

জি-২০’র প্রেসিডেন্ট হিসেবে সম্মিলিতভাবে কাজ করার বিষয়ে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলাদেশ দক্ষিণের একটি দেশ। ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ থিমের অধীনে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে জি-২০ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাগত জানায় বাংলাদেশ।’’

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবার জন্য সামাজিক ন্যায্যতা নিশ্চিত করে বাংলাদেশ দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বিশ্বে বাংলাদেশ এখন দ্রুততম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশ হিসেবে স্বীকৃত।’

দেশের দারিদ্রের হার হ্রাসের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গত ১৪ বছরে আমরা দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। এক দশকে আমাদের মাথাপিছু আয় তিনগুণ হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে সব শর্তই পূরণ করেছে বাংলাদেশ। আইএমএফের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিডিপির হিসাবে বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।’

বিজ্ঞাপন

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে উন্নত অবকাঠামোর উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ব। আমরা চাই, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে জ্ঞানভিত্তিক উন্নত দেশ। ২১শ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে সমৃদ্ধ, জলবায়ু সহিষ্ণু বদ্বীপ।’

এ সময় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, ঢাকায় মেট্রোরেল সার্ভিস চালু, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ এশিয়ার প্রথম টানেল নির্মাণসহ তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জি-২০’র সদস্য দেশগুলো হলো— আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইন্ডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, রিপাবলিক অব কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

সারাবাংলা/এনআর/এনএস

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন