বিজ্ঞাপন

হিংসার আড়ালে চাপা পড়ে যাচ্ছে উৎসাহ দেওয়ার প্রবণতা

March 7, 2023 | 5:26 pm

আজহার মাহমুদ

এগিয়ে যাওয়ার অপর নাম উৎসাহ। কিন্তু বর্তমান সময়ে মানুষের মধ্যে যে বিষয়টির অভাব সবচেয়ে বেশী সেটা হলো উৎসাহ দেওয়া। দেশ এবং সমাজের মানুষ এগিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহ এবং প্রেরণা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অতীব জরুরী। আমাদের বর্তমান সমাজে এমনও কিছু ব্যাক্তি রয়েছে, যাদের ভেতর উৎসাহ দেওয়ার প্রবণতা না থাকলেও এগিয়ে যাওয়ার পথে বাঁধা দেওায়ার প্রবণতা আছে। তারা সমাজের যেকোনো ব্যাক্তির উন্নয়ন দেখলে তাদের সমালোচনা করতে আগ্রহী হয়ে উঠে। তাদের কাজ হয়ে দাঁড়ায় কোথায়, কার, কি ভুল হয়েছে সেটা নিয়ে বিশ্লেষণ করা। কিন্তু সেই ভুলের সমাধান কেউ দেয় না। মানুষকে ভালো কাজে এগিয়ে যাওয়ার পথে উৎসাহ দিতে না পারলেও মন্দ কাজে উৎসাহ দেওয়ার মতো কিছু বিষাক্ত মানুষ আমাদের সমাজে বসবাস করে এখনো। তবে কোনো এক কবি তার কবিতায় বলেছেন, ‘পাছে লোক কিছু বলে’ অন্যের কথায় কান না দিয়ে নিজের লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের নিজেদের স্থানে নিজেদের পৌঁছাতে হবে। কে কী বলেছে সেটা শুনে সময় সষ্ট করার প্রয়োজন নেই।

বিজ্ঞাপন

তবে এটাও বাস্তব অনেক সময় সামান্য উৎসাহের অভাবে ঝরে যায় দেশের অনেক সম্পদ। যারা হয়তো একদিন দেশের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকতো। কিন্তু সেই উৎসাহ দেওয়ার মতো মানুষ আমাদের সমাজে খুবই কম। সহপাঠি, বন্ধু, ছোটদের চেয়েও বড়রা উৎসাহ দিলে সেটা বেশি গ্রহণযোগ্য এবং প্রেরণাময় হয়। আজকের প্রজন্ম উৎসাহ পাবে বিগত প্রজন্ম থেকে। আজকের প্রজন্ম থেকে উৎসাহ পাবে আগামী প্রজন্ম। একজন বন্ধু অন্য বন্ধুকে উৎসাহ দিতে পারে। মা’বাবার পরে বড় ভাই তার ছোট ভাইকে উৎসাহ দিতে পারে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে পারে। সমাজের মুরুব্বীরা সমাজের যুবকদের এগিয়ে যেতে উৎসাহ দিতে পারে। এই উৎসাহ দিতে কারো কোনো প্রকারের কষ্ট কিংবা ক্ষতি হবে বলে মনে হয়না। তবুও কেন আমরা এত কার্পণ্য বোধ করি উৎসাহ দিতে? এটাতো শুধু উৎসাহ নয়, এটা একটা প্রেরণা। এই প্রেরণার মাধ্যমে একটি ছেলে অথবা মেয়ের মনোবল আরো দৃঢ় হয়। আর এই দৃঢ় মনোবল নিয়ে হয়তো একদিন দেশের নাম উজ্জ্বল করবে তারা। কিন্তু সমাজের মানুষের ভেতর এমন চিন্তাধারা দেখা যায়না। আমরা যদি উৎসাহ দিতে না পারি তবে সমালোচনা করবোই বা কেন। সমালোচনা করা তাদের সাঝে, যাদের উৎসাহ দেওয়ার ক্ষমতা আছে। কারো মনোবল ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য সমালোচনা করা তো কারো অধিকার না।

সমাজে এমনও কিছু ব্যাক্তি রয়েছে যারা অন্য মানুষের উন্নতি সহ্য করতে পারে না। তাদের ভেতর যত্ন করে পুষে রাখে হিংসা আর অহংকার। তারা চায় না তাদের চেয়ে উচ্চস্থানে কারো স্থান হোক। তারা সবসময় ভালো কিছুতে বাঁধা দিবে। তাদের নীতি হচ্ছে সমাজের কেউ উচ্চস্থানে যেতে পারবেনা। কারো এগিয়ে যাওয়া দেখলে তাদের ভেতর যত্ন করে রাখা হিংসাগুলো তখন বেরিয়ে আসে। আমাদের মানবজাতির মধ্যে কিছু কিছু নিকৃষ্ট মানুষও রয়েছে যা আমাদের কাছে অজানার কিছু নয়। তবে সেই নিকৃষ্ট মানুষগুলোর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। সমাজের চোখে থেকে হয়তো তারা খুব সহজেই ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নিয়তি তাদের কখনো ছাড় দিবে না। আজ আপনি একজনকে এগিয়ে যেতে বাঁধা দিচ্ছেন, একদিন আপনি সেই বাঁধাতে নিজেই আটকে যাবেন। আমরা যদি যার যার বিবেকের কাঠগড়ায় দাড়িয়ে নিজের প্রশ্ন নিজেই করি, তবে আজ হয়তো আমাদের ভেতর থেকে হিংসা আর অহংকারের আধিপত্য কিছুটা কমে যেতো। আমাদের বিচার আমাদের করতে হবে। নিজে যদি সৎ হয়ে থাকেন তবে নিজের বিচারক নিজের চাইতে বড় কেউ হতে পারেনা। এধরনের অপরাধ শুধরানোর দায়িত্বও নিজের। কিন্তু আমাদের ভেতর এখনো সেই বোধটুকু কাজ করেনা। আমরা মানুষের মনোবল ভেঙ্গে দিতে কার্পণ্যতা করিনা। আবার উৎসাহ দেওয়ার বেলায় ঠিকি সেই কার্পন্যবোধ সজাগ হয়ে উঠে। আমরা হবেনা, পারবেনা এগুলো বলতে বেশী আগ্রহী। হবে কিংবা পারেব বলতে আমরা যেনো বোবা হয়ে যাই। কিন্তু মনোবল দেওয়ার জন্য হলেও বলি না পারবে। আমরা না বলতে খুব বেশী পছন্দ করি, কিন্তু হ্যাঁ বলাটা যেনো আমাদের জন্য কষ্টের বিষয়। আমাদের কাজে কর্মে হয়তো আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে, কিন্তু আমাদের মনের ভেতরে এখনো নেংরা মনোভাব লালন করে রেখেছি। আগে নিজেদের মন মানুষিকতা পরিবর্তন করতে হবে, তবেই আমরা আমেদের দেশ এবং সমাজকে আধুনিকভাবে পাবো। আমরা উৎসাহ, উদ্দীপনা, প্রেরণামূলক কথা এখন খুব কমই শুনি। আমাদের লেখা লেখিতেও এখন উৎসাহ, উদ্দীপনা, প্রেরণা মূলক কিছু থাকে না।

আমরা শুধু ভুলটা তুলে ধরি, কিন্তু কেউ সেই ভুলের সমাধান কি হবে সেটা তুলে ধরি না। এটাই কি আমাদের শিক্ষা? একজন মানুষ হয়ে অন্য মানুষের মনোবল ভেঙ্গে দেওয়াটা কখনোই মনুষ্যত্বের মধ্যে পড়ে না। তাই আমাদের উচিৎ উৎসাহ আর প্রেরণা দেওয়ার প্রবণতা বাড়ানোর। আর নিতান্ত্যই যদি উৎসাহ দিতে না পারি তবে মনবোল যেনো ভেঙ্গে না দিই সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।কারণ আপনার জন্য যদি কোনো এক ব্যক্তির লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়, তার সেই ক্ষতি পূরণ দেওয়ার সাধ্য আপনার নেই। উৎসাহ হয়তো আপনার স্থানে কেউ না কেউ দিবে, কিন্তু একবার মনোবল ভেঙ্গে দিলে তার লক্ষ্যটাই হয়তো নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই বলা যায় উৎসাহ দেওয়াটা যতটুকু ভালো তার চাইতে ভালো মনোবল ভেঙ্গে না দেওয়া।

বিজ্ঞাপন

লেখক: কলামিষ্ট

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন