বিজ্ঞাপন

সারাবছর ফল উৎপাদনের প্রকল্প একনেকে উঠছে

April 3, 2023 | 11:12 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনে আরও জোর দেওয়া হচ্ছে। ড্রাগন ও পেয়াররা মতো বছরব্যাপী দেশে কাঁঠাল উৎপাদনের লক্ষ্যও নেওয়া হয়েছে। এমডি-২ আনারস ও আঠাবিহীন কাঁঠালের সম্প্রসারণে দুই হাজার ৫০০টি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সারাদেশে চারটি নতুন হার্টিকালচার সেন্টারও স্থাপন করা হবে। উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে ঐতিহাসিক মুজিবনগর আম্রকানন পরিচর্যারও। এমনসব প্রস্তাব রাখা হয়েছে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের ৩য় সংশোধনীতে।

বিজ্ঞাপন

কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বাস্তবায়িত এই প্রকল্পটি মঙ্গলবার (৪ মার্চ) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) ওঠার কথা রয়েছে। একইসঙ্গে আরও ১০টি প্রকল্প একনেকে উঠার কথা রয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প’ শুরু করে সরকার। ২০২০ সালের ১০ মার্চ প্রকল্পটির ২য় সংশোধনী অনুমোদন পায়। এখন প্রকল্পটির ৩য় সংশোধনীর পরিকল্পনা চলছে। এরইমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি ও প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটি ৩য় সংশেধনী অনুমোদন করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।  চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় (পিইসি) তা উঠছে।

প্রকল্পটির ২য় সংশোধনী পর্যন্ত ব্যয় ছিল ৪৬০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ৩য় সংশোধনীতে ২১১ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। তৃতীয় সংশোধনী পর্যন্ত প্রকল্পের চূড়ান্ত ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৭১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আর এই প্রকল্পটি ৫১টি জেলার ৪০২টি উপজেলায় বাস্তবায়ন হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. মেহেদী মাসুদ সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পের ৩য় সংশোধনীতে ২১১ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এরমধ্যে ৪২ কোটি টাকাই ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে।

তিনি বলেন, দেশে প্রতিবছর ১১ শতাংশ হারে ফলের উৎপাদন বাড়ছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতেই প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় আমরা ঐতিহাসিক মুজিবনগরের আম্রকানন পরিচর্যার উদ্যোগ নেব। ড্রাগন ও পেয়ারার মতো সারাবছর যাতে কাঁঠাল উৎপাদন হয় সে উদ্যোগ নেওয়া হবে। উন্নত মানের এমডি-২ আনারস ও আঠাবিহীন কাঁঠালের সম্প্রসারণে আড়াই হাজার প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রাখা হবে। এছাড়া ৪টি নতুন হার্টিকালচার সেন্টারও স্থাপন করা হবে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ঐতিহাসিক মুজিবনগরে প্রায় ৩৬ একর এলাকা জুড়ে আম্রকাননে ছোট বড় প্রায় ১১৭০টি আম গাছ রয়েছে। ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প’ এর তৃতীয় সংশোধনীর প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এ আম গাছগুলো বর্তমানে বিভিন্ন রোগ বালাইয়ে আক্রান্ত এবং পরগাছার কারণে স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। তাই ঐতিহাসিক আম গাছগুলো টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে পরিচর্যা করা আশু প্রয়োজন। সে পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের প্রস্তাবিত ৩য় সংশোধনীতে ঐতিহাসিক মুজিবনগর আম্রকাননের পুরনো আম গাছগুলোকে রেজুভেনাশন পদ্ধতির মাধ্যমে ফল উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্প পরিচালক জানান, আম্রকাননে ১১৭০টি গাছ পরিচর্যা করলে কয়েকশ টন আম উৎপাদন হবে। এক গাছে আম হবে ২০ থেকে ২৫ মণ। প্রায় ১১০০ গাছে উৎপাদন ১১০০ টন এর কম হবে না। কাঁচা আমের দাম ৫০ টাকা কেজি ধরলেও বছরে এই বাগান থেকে সাড়ে ৫ কোটি টাকা আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে এখন একটি আমও হয় না, কেবল যত্নের অভাবে।

প্রকল্প প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, এমডি-২ আনারস অধিক ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, পুষ্টিকর ও সুস্থ, হিমাগার ছাড়াই অধিক সময়কাল সংরক্ষণযোগ্য ও আনারসের চোখ বহির্মুখী হওয়ায় ভক্ষণযোগ্য অংশের পরিমাণ বেশি থাকায় অন্যান্য জাতের তুলনায় এ জাতটি অধিক মানসম্পন্ন ও রফতানিযোগ্য। তাই আনারসের এ জাতটি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ২ হাজার ৫০০টি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়াও সারাবছর কাঁঠাল প্রাপ্তির লক্ষ্যে আঠাবিহীন বারোমাসি কাঁঠালের জাতটি সম্প্রসারণের জন্য সংশোধিত ডিপিপিতে মিশ্র ফল প্রদর্শনীর আওতায় সংযোজন করা হয়েছে।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, দেশের প্রতিটি জেলায় কমপক্ষে একটি করে হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপনের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত ৩য় সংশোধনীতে কুষ্টিয়া, ঝিকরগাছা-যশোর, মতলব চাঁদপুর ও পলাশবাড়ি/সাদুল্লাপুর গাইবান্ধায় ৪ টি নতুন হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্প সংশোধনীর যৌক্তিকতা তুলে ধরে সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়, মানবদেহের পুষ্টির চাহিদা পূরণ, মেধার বিকাশ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। পুষ্টিবিদদের মতে, দৈনিক মাথাপিছু ২০০ গ্রাম ফল খাওয়া উচিত। তবে বর্তমানে দেশে চাহিদার তুলনায় ৬০ শতাংশ পরিমাণ ফল উৎপাদন হচ্ছে। যে ফলগুলো উৎপাদন হয় তার প্রায় ৬০ শতাংশ পাওয়া যায় জুন-সেপ্টেম্বর এই চার মাসে। শীত মৌসুমে ফল প্রাপ্তির সুবিধা কম। তাই শীতকালসহ সারাবছর প্রকল্পের আওতায় প্রচলিত, অপ্রচলিত এবং অন্যান্য দেশি বিদেশি সম্ভাবনাময় সব ধরনের ফলের চাষাবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তার লক্ষ্যে ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটির ৩য় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)’র তথ্যমতে, বাংলাদেশ বিশ্বের ১০ম মৌসুমি ফল উৎপাদনকারী দেশ। সংস্থাটির মতে, দেশে প্রতিবছর গড়ে ১১.৫০ শতাংশ হারে ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যেখানে বিশ্বের গড় ফল উৎপাদন হার প্রায় ৩ শতাংশ। এ প্রকল্পের শুরুতে (২০১৫-১৬) সামগ্রিকভাবে ফলের উৎপাদন ছিল ১০ লাখ মেট্রিক টন। সেখানে ২০১১-১২ অর্থবছরে মোট ফলের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪৩৩ কোটি টনে। এই প্রকল্পের আওতায় নেওয়া পদক্ষেপের কারণে ড্রাগন ফলের উৎপাদন প্রায় ৭ গুন বেড়েছে। বছরব্যাপী পেয়ারা ও আম প্রাপ্তি এবং বাসুন্দরী কুলের ব্যাপক সম্প্রসারণ হয়েছে।

সারাবাংলা/ইএইচটি/আইই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন