বিজ্ঞাপন

ইসির সাংবাদিক নীতিমালা নির্বাচনে প্রতিকন্ধতা সৃষ্টি করবে: টিআইবি

April 13, 2023 | 11:32 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নির্বাচনি সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য যে নীতিমালা নির্বাচন কমিশন জারি করেছে, তা সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ভূমিকা পালনে প্রতিকন্ধতা সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ সব কথা বলেন। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রিজাইডিং অফিসারকে অবহিত করে ভোটগ্রহণ কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ, ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণ’ করতে পারবে এবং ‘রিটার্নিং অফিসার স্বীয় বিবেচনায় যৌক্তিক সংখ্যক সাংবাদিককে অনুমোদন ও কার্ড ইস্যু করতে পারবেন’ মর্মে যে বিধান রাখা হয়েছে, তা মূলত গণমাধ্যম কর্মীদের আজ্ঞাবহ সাংবাদিকতায় বাধ্য করার অপচেষ্টা।

বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমকে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের ‘চোখ ও কান’ বলে অভিহিত করলেও সম্প্রতি জারিকৃত পরিপত্রের মাধ্যমে এটিই প্রমাণিত হয়েছে যে, সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি শুধু নিজেদের জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য করতে এ জাতীয় ‘মুখরোচক’ মন্তব্য করেছে এবং কার্যক্ষেত্রে সাংবাদিকদের কার্যক্রম শেকলবদ্ধ করে তুলছে। মোটরসাইকেল স্থানীয় পর্যায়ে সংবাদকর্মীদের দায়িত্ব পালনের একটি অপরিহার্য বাহন। অধিকন্তু, প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক কেন্দ্র আছে যেখানে গাড়ি বা অন্য কোনো যানবাহনে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তা ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে একটি গাড়ি ভাড়া করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়, এ রকম একটি পরিস্থিতিতে নির্বাচনের দিন গণমাধ্যমকর্মীদের মোটরসাইকেল ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ দুরভিসন্ধিমূলক। ১০ মিনিটের বেশি সংবাদকর্মীদের ভোটকক্ষে অবস্থান করতে না পারার যে বিধান করা হয়েছে, এর যৌক্তিকতা কী! নির্বাচন কমিশন চিহ্নিত ‘গোপন বুথের ডাকাতদের’ রক্ষায় এই নিয়মের আমদানি কি-না? তা স্পষ্ট হওয়া জরুরি।’

বিবৃতিতে বলা হয়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সাংবাদিকদের কমিশন থেকে যে কার্ড দেওয়া হতো সেখানে মাত্র পাঁচটি নির্দেশনা সংযুক্ত ছিল এবং সাংবাদিকদের নির্বাচনের দিন মোটরসাইকেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো বিধি-নিষেধ ছিল না। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের ঠিক পূর্বে সাংবাদিকদের জন্য ১২টি ধারা যুক্ত করে একটি নীতিমালা এবং সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সংবাদকর্মীদের ভোট কাভারেজের অনুমতি দিয়ে কার্ড প্রদান করার পর ভোটকক্ষে ঢুকতে কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তার বাড়তি অনুমতির প্রয়োজনীয়তা কী, তা বোধগম্য নয়। তা ছাড়া বর্তমান প্রেক্ষাপটে যদি কোনো ভোটকক্ষে অনিয়ম সংঘটিত হয়, সেক্ষেত্রে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা কী অনুমতি দিবেন? আর অনুমতি না দিলে নির্বাচনি অনিয়মের ছবি তোলা ও তথ্য সংগ্রহ কী ধরনের বাধার সৃষ্টি হবে, তা নীতিমালা তৈরিতে কমিশনের বিচার্য ছিলো বলে বোধগম্য হচ্ছে না। মুখে নির্বাচনি স্বচ্ছতার কথা বলে আবার কোন বিবেচনায় ভোট কক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচার নিষিদ্ধ করা হলো, কিংবা এর মাধ্যমে কী বৈশ্বিক চর্চা কমিশন অনুকরণের চেষ্টা করছে, সেটি সত্যিই কৌতূহলোদ্দীপক।’

বিজ্ঞাপন

নীতিমালা পরিপন্থী কোনো কাজ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং রিটার্নিং অফিসার ‘স্বীয় বিবেচনায়’ নির্বাচনী খবর সংগ্রহের জন্য সাংবাদিকের সংখ্যা নির্ধারণের ক্ষমতা প্রসঙ্গে ড. জামান বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিপত্তি, পক্ষপাতমূলক প্রশাসন ও আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রভাব বলয়ে সাংবাদিকের সংখ্যা ঠিক করার এখতিয়ার একজন কর্মকর্তার ইচ্ছাধীন হয়ে পড়াটা মোটেও সুখকর নয়। উপরন্তু কোনো নির্দিষ্ট মানদণ্ডের অনুপস্থিতি ছাড়াই কাকে কীভাবে নির্বাচন করা হলো, আর কাউকে কেন বাদ দেওয়া হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। যেখানে নির্বাচনের সময় অনেক স্বনামধন্য গণমাধ্যমের কর্মীরাও নির্বাচনের কাভারেজের অনুমতি পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন বাস্তবতায় প্রকাশিত নীতিমালাটি কমিশন বাতিল করবে এই দাবি জানাচ্ছি। প্রয়োজনে বৈশ্বিক চর্চার সাথে মিলিয়ে ও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে নিবিড় আলোচনার মাধ্যমে একটি যথোপযুক্ত নিয়মাবলি তৈরির আশু উদ্যোগ নেবে।’

টিআইবি মনে করছে নির্বাচন কাভারেজ নিয়ে কমিশনের বিধি-নিষেধের তালিকা যত দীর্ঘ হচ্ছে, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা এবং গণতন্ত্র ততটাই দুর্বল ও ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জিএস/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন