বিজ্ঞাপন

চারজনে একজন ভুগছেন উচ্চ রক্তচাপে, বছরে রোগী বাড়ছে ১৫ লাখের বেশি

May 17, 2023 | 8:13 am

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি চার জনে এক জন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন দেশে। প্রতি বছর নতুনভাবে ১৫ লাখ ৩০ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক উচ্চ রক্তচাপের রোগী বাড়ছে দেশে। ২০১০ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত ১২ বছর সময় বিবেচনা করলে দেখা যায় দেশে উচ্চ রক্তচাপের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে প্রায় সাত শতাংশের মতো।

বিজ্ঞাপন

মহিলাদের মাঝে উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তেমন বেশি না বাড়লেও পুরুষ রোগীর সংখ্যা বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। এক সময় দেশে ১৭ থেকে ১৯ শতাংশের পুরুষের মাঝে উচ্চ রক্তচাপ রোগ দেখা গেছে। কিন্তু সেটা এখন বেড়ে পৌঁছেছে ২৪.৫ শতাংশে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ রোগের পরিস্থিতি জানার জন্য এখন পর্যন্ত তিনটি সার্ভে বা জরিপ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নন কমিউনিকেবল ডিজিজ (এনসিডিসি) শাখার অর্থায়নে বাংলাদেশে সোসাইটি অফ মেডিসিন প্রথম জরিপটি করে। ২০১০ সালে করা এই প্রথম জরিপে দেখা গেছে দেশে প্রতি ১০০ জনে ১৭.২ জনের মাঝে উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্ত পাওয়া যায়। কিন্তু ২০১৮ সালে একই বিষয়ে করা দ্বিতীয় সার্ভেতে দেখা যায় ১০০ জনের মাঝে ২১ জন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নন কমিউনিকেবল ডিজিজ (এনসিডিসি) প্রোগ্রামের ফান্ডের সহায়তায় এই সার্ভেটি করে নিপসম।

২০২২ সালে বিসিপিএস সার্ভে করে এনসিডিসি’র অর্থায়ন সহযোগিতায়। এই সার্ভেতে ১০০ জনে ২৪.২ জনের মাঝে উচ্চ রক্তচাপ পাওয়া যায়। অর্থাৎ এই সার্ভেতে উচ্চ রক্তচাপের প্রিভিল্যান্স ছিল ২৪.২%। যার মানে বলা যেতে পারে দেশে প্রতি চারজনে একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে।

বিজ্ঞাপন

দেশের জনসংখ্যা বিবেচনায় দেখা যায় ২০১০ সালে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল দুই কোটি ৭৯ লাখ। কিন্তু ২০১৯ সালে উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হয় তিন কোটি ৫৭ লাখ। অর্থাৎ আট বছরে দেশে রোগীর সংখ্যা বাড়ে ৭৮ লাখ। ২০২২ সালের জরিপে দেশে উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হয় আনুমানিক চার কোটি ৮২ লাখ। অর্থাৎ ২০১৮ সালের পরবর্তী বছরগুলোতে ১৫ লাখ ৩০ হাজার করে উচ্চ রক্তচাপের রোগী যুক্ত হয়েছে দেশে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচরণ বিষয়ে সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে। একইসঙ্গে অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার প্রবণতা কমানোর পাশাপাশি স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। সারাদেশের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের প্রাপ্যতা এবং এজন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন কী?

বিজ্ঞাপন

ইমেরিটাস অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, অসংক্রামক ব্যাধির মধ্যে অন্যতম হলো উচ্চ রক্তচাপ, যা প্রায়ই একটি স্থায়ী রোগ হিসেবে বিবেচিত। এর জন্য চিকিৎসা ও প্রতিরোধ খুবই জরুরি। তা না হলে বিভিন্ন জটিলতা, এমনকি হঠাৎ করে মৃত্যুরও ঝুঁকি থাকে।

তিনি বলেন, স্বাভাবিক রক্তচাপ হলো সেই বল, যার সাহায্যে রক্ত শরীরের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছায়। হৃৎপিণ্ডের পাম্পিং ক্রিয়ার মাধ্যমে রক্তচাপ তৈরি হয়। রক্তচাপের কোনো একক নির্দিষ্ট মাত্রা নেই। বিভিন্ন বয়সের সঙ্গে সঙ্গে একেকজনের রক্তচাপের মাত্রা একেকরকম এবং একই মানুষের বেলায় বিভিন্ন সময়ে রক্তচাপও কম-বেশি হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা, অধিক পরিশ্রম, কম ঘুম ও অতিরিক্ত ব্যায়ামের ফলে রক্তচাপ বাড়তে পারে। ঘুম ভালো হলে এবং বিশ্রাম নিলে রক্তচাপ কমে যায়। রক্তচাপের এ পরিবর্তন স্বাভাবিক। সাধারণত বয়স যত কম রক্তচাপও তত কম হয়। যদি কারও রক্তচাপ নরমাল মাত্রার চেয়ে বেশি হয় এবং অধিকাংশ সময় এমনকি বিশ্রামকালীনও বেশি থাকে তবে ধরে নিতে হবে তিনি উচ্চ রক্তচাপের রোগী।

রক্তচাপ কত প্রকার?

বিজ্ঞাপন

সাধারণত দুই ধরনের- সিস্টোলিক ও ডায়াস্টলিক। নরমাল সিস্টোলিক ১০০ থেকে ১৪০ এবং ডায়াস্টলিক ৬০ থেকে ৯০ মি.মি. মার্কারি। কারও ব্লাড প্রেশার যদি ১৪০/৯০ বা এর চেয়েও বেশি হয় তখন বুঝতে হবে তার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে। তবে বয়স ভেদে তারতম্য হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপের কারণে কী কী জটিলতা হতে পারে?

উচ্চ রক্তচাপ ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপের কোনো প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যায় না। এটাই উচ্চ রক্তচাপের সবচেয়ে খারাপ দিক। যদিও অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপের রোগীর বেলায় কোনো লক্ষণ থাকে না, তবুও নীরবে উচ্চ রক্তচাপ শরীরের বিভিন্ন অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ জন্যই উচ্চ রক্তচাপকে বলা হয় ‘নীরব ঘাতক’। অনিয়ন্ত্রিত এবং চিকিৎসাবিহীন উচ্চ রক্তচাপ থেকে শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত না থাকলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ চারটি অঙ্গে মারাত্মক ধরনের জটিলতা হতে পারে। যেমন- হৃৎপিণ্ড, কিডনি, মস্তিষ্ক ও চোখ। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ থেকে হৃদযন্ত্রের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে হৃদযন্ত্র রক্ত পাম্প করতে পারে না এবং এ অবস্থাকে বলা হয় হার্ট ফেইলিওর। রক্তনালী সংকুচিত হয়ে হার্ট অ্যাটাক বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনি বিকল হয়ে কার্যকারিতা হারাতে পারে, যার অন্যতম কারণ অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ। এ ছাড়া মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক হয়ে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে এবং চোখের রেটিনাতে রক্তক্ষরণ হয়ে অন্ধত্ববরণ করতে পারে।

কী কী কারণে উচ্চ রক্তচাপ হয়?

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, শতকরা ৯০ ভাগ রোগীর উচ্চ রক্তচাপের কোনো নির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না, একে প্রাইমারি বা অ্যাসেন্সিয়াল রক্তচাপ বলে। সাধারণত বয়স্ক মানুষের উচ্চ রক্তচাপ বেশি হয়ে থাকে। কিছু কিছু বিষয় উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়। যেমন :

বংশানুক্রমিক: উচ্চ রক্তচাপের বংশগত ধারাবাহিকতা আছে, যদি বাবা-মায়ের উচ্চ রক্তচাপ থাকে তবে সন্তানেরও উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি নিকটাত্মীয়ের উচ্চ রক্তচাপ থাকলেও অন্যদের রক্তচাপের ঝুঁকি থাকে।

ধূমপান: ধূমপায়ীদের শরীরে তামাকের নানারকম বিষাক্ত পদার্থের প্রতিক্রিয়ায় উচ্চ রক্তচাপসহ ধমনী, শিরার নানারকম রোগ ও হৃদরোগ দেখা দিতে পারে। তামাক, জর্দা, গুল ব্যবহারে একই সমস্যা হতে পারে।

অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ: খাবার লবণে সোডিয়াম থাকে যা রক্তের জলীয় অংশ বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তের আয়তন বেড়ে যায় এবং রক্তচাপও বেড়ে যায়।

অধিক ওজন এবং অলস জীবনযাত্রা: যথেষ্ট পরিমাণে ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম না করলে শরীরে ওজন বেড়ে যেতে পারে। এতে হৃদযন্ত্রকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয় এবং এর ফলে অধিক ওজনসম্পন্ন লোকদের উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে।

অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার, যেমন মাংস, মাখন এবং ডুবা তেলে ভাজা খাবার খেলে ওজন বাড়বে। অতিরিক্ত কলিজা, গুর্দা, মগজ এসব খেলে রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে যায়। রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল হলে রক্তনালীর দেয়াল মোটা ও শক্ত হয়ে যায়। ফলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।

ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিস রোগীদের অথারোসক্লেরোসিস বেশি হয়। ফলে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিস রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। এ ছাড়া তাদের অন্ধত্ব ও কিডনির নানা রোগ হতে পারে।

অতিরিক্ত উৎকণ্ঠা: অতিরিক্ত রাগ, উত্তেজনা, ভীতি এবং মানসিক চাপের কারণেও রক্তচাপ সাময়িকভাবে বেড়ে যেতে পারে। যদি এ মানসিক চাপ অব্যাহত থাকে এবং রোগী ক্রমবর্ধমান মানসিক চাপের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারেন তবে এ উচ্চ রক্তচাপ স্থায়ী রূপ নিতে পারে।

এছাড়াও কিছু কিছু অঙ্গ আক্রান্ত হলে রোগের কারণে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া গেলে একে বলা হয় সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন।

এ কারণগুলোর মধ্যে আছে, কিডনির রোগ, অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি ও পিটুইটারি গ্রন্থির টিউমার, ধমনীর বংশগত রোগ, গর্ভধারণ অবস্থায় অ্যাকলাম্পসিয়া ও প্রি অ্যাকলাম্পসিয়া হলে বা অনেক দিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ির ব্যবহার, স্টেরয়েড গ্রহণ এবং ব্যথা নিরামক কিছু কিছু ওষুধ সেবন করলে।

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ:

উচ্চ রক্তচাপের একেবারে সুনির্দিষ্ট কোন লক্ষণ সেভাবে প্রকাশ পায় না। তবে সাধারণ কিছু লক্ষণের মধ্যে রয়েছে:

প্রচণ্ড মাথা ব্যথা করা, মাথা গরম হয়ে যাওয়া এবং মাথা ঘোরানো

ঘাড় ব্যথা করা

বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া

অল্পতেই রেগে যাওয়া বা অস্থির হয়ে শরীর কাঁপতে থাকা

রাতে ভালো ঘুম না হওয়া

মাঝে মাঝে কানে শব্দ হওয়া

অনেক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলা

এসব লক্ষণ দেখা দিলে নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করতে এবং ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।

উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে কী করা উচিত?

জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। বংশগতভাবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা কমানো সম্ভব নয়। তবে এরকম ক্ষেত্রে যেসব উপাদান নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেগুলোর ব্যাপারে বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত।

অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে।

খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

নিয়মিত ব্যায়াম ও কায়িক পরিশ্রম করতে হবে।

খাদ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতা : কম চর্বি ও কম কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন খাসি বা গরুর গোস্ত, কলিজা, মগজ, গিলা, গুর্দা কম খেতে হবে। কম তেলে রান্না করা খাবার এবং ননী তোলা দুধ খাওয়া যাবে। বেশি আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করা ভালো। আটার রুটি এবং সুজিজাতীয় খাবার পরিমাণ মতো খাওয়া ভালো।

লবণ নিয়ন্ত্রণ: তরকারিতে প্রয়োজনীয় লবণের বাইরে অতিরিক্ত লবণ পরিহার করতে হবে।

মদ্যপান: মদ্যপান পরিহার করতে হবে।

নিয়মিত ব্যায়াম: সকাল-সন্ধ্যা হাঁটাচলা, সম্ভব হলে দৌড়ানো, হালকা ব্যায়াম, লিফটে না চড়ে সিঁড়ি ব্যবহার ইত্যাদি।

ধূমপান বর্জন: ধূমপান অবশ্যই বর্জনীয়। ধূমপায়ীর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকুন। তামাকপাতা, জর্দা, গুল লাগানো ইত্যাদিও পরিহার করতে হবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: যাদের ডায়াবেটিস আছে তা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

মানসিক ও শারীরিক চাপ সামলাতে হবে: নিয়মিত বিশ্রাম, সময় মতো ঘুমানো, শরীরকে অতিরিক্ত ক্লান্তি থেকে বিশ্রাম দিতে হবে। নিজের শখের কাজ করা, নিজ ধর্মের চর্চা করা ইত্যাদির মাধ্যমে মানসিক শান্তি বেশি হবে।

রক্তচাপ নিয়মিত পরীক্ষা: নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে রক্তচাপ পরীক্ষা করানো উচিত। যত আগে উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে তত আগে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং জটিলতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ পরিস্থিতি কী?

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, দেশে উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ২০১০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১২ থেকে ১৩ বছর সময় বিবেচনা করলে দেখা যায় উচ্চ রক্তচাপের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে প্রায় সাত শতাংশের মতো। এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে প্রতি চারজনের মাঝে একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে যাদের বয়স ১৮ বছর থেকে ৬৯ বছর পর্যন্ত।

তিনি বলেন, মহিলাদের তুলনায় দেশে পুরুষের মাঝে উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা কিছুটা কম। জরিপে পুরুষদের মাঝে উচ্চ রক্তচাপ পাওয়া গেছে ২৪.৫ শতাংশের মাঝে। মহিলাদের মাঝে উচ্চ রক্তচাপ পাওয়া গেছে ২৪. ৬ শতাংশের মাঝে। অথচ এক সময় মাত্র ১৭ থেকে ১৯ শতাংশের পুরুষের মাঝে উচ্চ রক্তচাপ রোগ দেখা গেছে। সেটা এখন অনেক বেড়ে গেছে। মহিলাদের পরিসংখ্যান বিবেচনা করলে এটা প্রায় আগের অবস্থানেই আছে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বজুড়ে প্রতি সাতজনে একজনের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে ওষুধ গ্রহণের পরে। অর্থাৎ ১৪ শতাংশ রোগী ওষুধ গ্রহণের পরে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। এক্ষেত্রে বলা যায় এক বিলিয়ন মানুষকে ডায়াগনোসিস করার পরে দেখা গেলো ৭৪০ মিলিয়ন মানুষ চিকিৎসার আওতাধীন আছে। এর অর্ধেক সংখ্যা দেখা যায় ওষুধ নিয়মিত খাচ্ছে। তারও অর্ধেক সংখ্যক মানুষের দেখা যায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আছে।

অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, বাংলাদেশে ৩০ শতাংশ রোগীর মাঝে দেখা যায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আছে। আমাদের এনসিডি কর্নারের উদ্দেশ্যই ছিল ব্লাড সুগার ও ব্লাড প্রেশার কন্ট্রোলে রাখা। হাইপার টেনশন যদি নিয়ন্ত্রণে থাকে তবে দেখা যায় কার্ডিয়াক এরেস্ট বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে আসে।

তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে কন্ট্রোল রেট ৫৪ শতাংশ। এটা তিন মাস আগেও ৬৬ শতাংশের মতো ছিল। এটা ড্রপ হয়ে যাওয়ার একটা কারণ হিসেবে আমরা দেখেছি যে ওষুধগুলোর নিয়মিত সরবরাহ না থাকে। যখনই ওষুধে গ্যাপ হচ্ছে তখনই কন্ট্রোল রেইট কমে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, বুধবার (১৭ মে) সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও উদযাপিত হবে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস-২০২৩। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তত্ত্বাবধানে ওয়ার্ল্ড হাইপারটেনশন লীগ ও ইন্টারন্যাশনাল হাইপারটেনশন সোসাইটি এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘সঠিকভাবে রক্তচাপ মাপুন, নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং দীর্ঘজীবী হোন।’

সারাবাংলা/এসবি/ এনইউ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন