বিজ্ঞাপন

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা: কলকারখানার পক্ষে আরও এক আইনজীবী নিয়োগ

September 4, 2023 | 3:48 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় কলকারখানা প্রতিষ্ঠান ও পরিদর্শন অধিদফতর নতুন করে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলীকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানটির আরেক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছেন, ড. ইউনূসের মামলায় কলকারখানা অধিদফতর দুইজন আইনজীবী নিয়োগ দিলে তিনি এ মামলায় অংশ নেবেন না।

বিজ্ঞাপন

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলায় আমি আইনজীবী হিসেবে কাজ করছি। শুনেছি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের পক্ষে আরও একজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমি তা জানি না। যদি অন্য কাউকে নেওয়া হয়, তবে আমি থাকব না। কারণ, এই মামলা পরিচালনায় আমার একটা প্রস্তুতি আছে আমার মতো করে। সেখানে আর একজন আইনজীবী যদি নেওয়া হয়, তাহলে তার ভিন্ন প্রস্তুতি ও ভিন্ন স্টাইলে উপস্থাপন হতে পারে। তাই অন্য কেউ যুক্ত হলে আমি এ মামলায় থাকব না।

এদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলায় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের আইনজীবী হিসেবে গত সপ্তাহে নিয়োগ পাওয়া আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী সাংবাদিকদের বলেছেন, উনি (খুরশীদ আলম খান) এই মামলায় যাবেন বলেই আশা করি। এর আগে, আমরা একসঙ্গে মামলা করেছি। আর আমি আমরাতে বিশ্বাসী, আমিত্বে নই। কারণ দুজন একসঙ্গে মামলাটি পরিচালনা করলে শক্তি বাড়বে। কমবে না। ড. ইউনূসের শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় খুরশীদ আলম খান ও আমি একসঙ্গে আইনি লড়াই করতে চাই।

গত ২০ আগস্ট গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ প্রতিষ্ঠানটির চার পরিচালকের নামে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় অভিযোগ গঠন বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুল খারিজের বিরুদ্ধে করা আবেদন নামঞ্জুর করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে শ্রম আদালতে এ মামলার বিচার চলবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

বিজ্ঞাপন

প্রধান বিচারপতি বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।

আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আবদুল্লাহ-আল-মামুন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। আর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

চলতি বছরের ৬ জুন ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের চারজনের নামে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা।

বিজ্ঞাপন

বিচার শুরু হওয়া অন্য তিন আসামি হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের এমডি মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।

পরে গত ১৯ মে শ্রম আদালতের আদেশটি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন ড. ইউনূস।

ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের হাইকোর্ট বেঞ্চ ২৩ জুলাই শ্রম আদালতে মামলার অভিযোগ গঠনের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। পরে রুলের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

গত ২৫ জুলাই চেম্বার আদালত স্থগিতাদেশ না দিয়ে ৩ আগস্ট পর্যন্ত মামলাটিতে স্থিতাবস্থা দেন। একইসঙ্গে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে আবেদনটি শুনানির জন্য ৩ আগস্ট দিন ঠিক করে দেন। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার আদালত এ আদেশ দেন।

বিজ্ঞাপন

এরপর গত ৩ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার জনের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের অভিযোগ গঠন বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুল শুনানির জন্য নতুন বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ।

বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুল নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে গতকাল (৭ আগস্ট) এ বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। এরপর আজ চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত অভিযোগ গঠন বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুল খারিজ করে রায় দেন। এরপর অভিযোগ গঠন বাতিলে রুল খারিজের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন ড. ইউনূস। গত ২০ আগস্ট আপিল বিভাগ ড. ইউনূসের আবেদন খারিজ করে দেন। এর ফলে শ্রম আদালতে ড. ইউনূসসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা চলতে বাধা দূর হয়। বর্তমানে শ্রম আদালতে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে ড. মুহম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।

পরে ওই মামলার আইনগত বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়।

এরপর ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করেন। তারপর হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আপিল করা হলে জারি করা রুল দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০২২ সালের ১৭ আগস্ট সেই রুল খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।

পরবর্তীতে ড. ইউনূস আপিল বিভাগে আবেদন করেন। এবং যা গত ৮ মে ড. ইউনূসের লিভ টু আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।

এরপর গত ৬ জুন শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা এ আদেশ দেন।

সারাবাংলা/কেআইএফ/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন