বিজ্ঞাপন

‘পশ্চিম থেকে যে বাণী আসে, সেভাবে তারা ছবক দেওয়ার চেষ্টা করেন’

September 13, 2023 | 11:41 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সুশীল সমাজ হিসেবে পরিচিত কিছু ব্যক্তির সমালোচনা করেছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। বলেছেন, কিছু মানুষ যারা নিজেদের সুশীল সমাজ বলে মনে করে, তারা দেশের উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিমে তাকান না। তারা তাকিয়ে থাকেন সুদূর পশ্চিমে। সেখান থেকে যে বাণী আসে, সেভাবে তারা এখানে ছবক দেওয়ার চেষ্টা করেন।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে অধিবেশনে ‘জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন (সংশোধন) বিল-২০২৩’ পাসের আলোচনায় আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী তার বক্তব্যে নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মতামত দেওয়া সুশীল সমাজের ব্যাক্তিদের কঠোর সমালোচনা করেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম। এ দেশের জনগণই নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক করবে সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব কারা করবে। কিছু মানুষ, যারা নিজেদের সুশীল সমাজ বলে মনে করে, তারা নিজেদের জনগণের গার্ডিয়ান মনে করে। কিন্তু জনগণের সঙ্গে তাদের কতটুকু সম্পৃক্ততা আছে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তারা পশ্চিম থেকে পাওয়া নানা ডিকটেশন দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবাধ-নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। চলতি সংসদের মেয়াদ শেষ হলে সে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ীই নির্বাচন হবে।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে যে রিভিউ পিটিশন করা হয়েছে, গত সপ্তাহে তার শুনানি হয়েছে। উচ্চ আদালতের অবকাশ শেষে আবার শুনানি হবে। সেই শুনানিই এই পিটিশন নিয়ে শেষ শুনানি হবে বলে মনে করেন আইনমন্ত্রী। জানান, এখন বিচারকদের পদত্যাগের বিধানটি নেই।

বিজ্ঞাপন

এর আগে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, আমাদের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার। তার জন্য আমাদের প্রতিষ্ঠান আছে। টি এন শেসনের (ভারতের সাবেক সিইসি) মতো একজন শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনার থাকবেন, এটা আমরা আশা করি, যিনি মেরুদণ্ড সোজা করে নির্বাচন করবে।

তিনি বলেন, সরকার নির্বাচনের সময়ে রুটিন দায়ত্ব পালন করে। এটা নিয়ে আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ বার বার জোর করে সংসদকে অকার্যকর, সংসদ চলে না এরকম নানা কথা বলেন। এটা হলে তো নির্বাচন লাগে না। ভারতের নির্বাচন নিয়ে তো কেউ কোনোদিন প্রশ্ন করে না। তাহলে আজকের বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্ন কেন?

বাংলাদেশের নির্বাচন সঠিক হচ্ছে মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য বলেন, আমরা চাই ফ্রি, ফেয়ার ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাবে, নিরাপত্তা পাবে— প্রধানমন্ত্রী এটা চান, দেশবাসী চায়, বিশ্ববাসীও এটা চায়। এর বাইরে আর কিছু হবে না। এটা সবাইকে মানতে হবে। কেউ সিট না পেলে জোর করে সিট দেওয়া যায় না। প্রার্থী হতে স্বতন্ত্র সদস্যের ভোটারদের সমর্থন থাকার বাধ্যবাধকতা সংবিধানের ব্যত্যয়, এটি সংশোধনের প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে মানুষের মধ্যে একটি অস্পষ্টতা, আতঙ্ক ও হতাশা রয়েছে। অনেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কখন ও কীভাবে নির্বাচন হবে— এ বিষয়ে সরকার তার অবস্থান পরিষ্কার করছে না।

২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে গণফোরামের এই সংসদ সদস্য বলেন, বিএনপি ওই নির্বাচন প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিল। ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতার দাপটে নির্বাচন করেছে। সরকার গঠনের যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দরকার, সেইসংখ্যক সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। সেই নির্বাচনে জনগণের মতামতের সঠিক প্রতিফলন ঘটেনি। ২০১৮ সালে অধিকাংশ জায়গায় আগের রাতে ভোট হয়ে যায়। এখানেও জনমতের প্রতিফলন হয়নি। সংসদে বিল পাস হয়েছে, দলিল যার জমি তার। সংবিধান অনুযায়ী জনগণ দেশের মালিক। কিন্তু রাষ্ট্রের এই মালিক গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তারা দলিল নিয়ে বসে আছে, কিন্তু মালিকানা তাদের হাতে নেই।

জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন নিয়ে একটি মানসিক সমস্যা হয়— যারা নির্বাচিত হন তাদের কোনো নির্বাচনি এলাকা আছে কি না, এই বিষয়টি তারা বুঝতে পারেন না। এটি নিয়ে তারা নিজেরাও বিব্রতবোধ করেন। নির্বাচনে নারীদের বেশিসংখ্যক মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা যায় কি না, দেখতে হবে।

এদিকে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনে প্রার্থীদের জামানতের পরিমাণ বাড়িয়ে আইনের সংশোধনী পাস হয়েছে। জামানতের পরিমাণ ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন (সংশোধন) বিল-২০২৩’ পাসের জন্য সংসদে উত্থাপন করেন। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।

বিজ্ঞাপন

বিলে বলা হয়েছে, সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীদের জামানত হবে ২০ হাজার টাকা। বিদ্যমান আইনে সংরক্ষিত আসন শূন্য হলে ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান আছে। সেখানেও সংশোধনী আনা হয়েছে। বিলে আসন শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া নারী আসন বণ্টন পদ্ধতিতেও সংশোধন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন