বিজ্ঞাপন

‘ভিসা নীতি’র সুযোগ কাজে লাগাতে চায় বিএনপি

September 26, 2023 | 8:22 pm

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভিসা নীতিকে’ আন্দোলনের সহায়ক হিসেবে দেখছে রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। ভিসা নীতির প্রয়োগ শুরু হওয়ায় সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনের পালে হাওয়া লাগবে বলে মনে করছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন দলটির কর্মী-সমর্থকেরা।

বিজ্ঞাপন

দলীয় সূত্রমতে, আগামী ৫ অক্টোবর চলমান কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর আরও কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে বিএনপি। ওই কর্মসূচিতে বাধা আসার সমূহ সম্ভাবনা দেখছে দলটি। ওই বাধা টপকানোর মিশনে মার্কিন ‘ভিসা নীতি’ প্রয়োগের সুযোগ কাজে লাগাতে চায় বিএনপি।

যদিও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন ভিন্ন কথা। সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, ‘ভিসা নীতি’ প্রয়োগ হওয়ায় আমরা মোটেও খুশি হইনি। কারণ, এটি বাংলাদেশের জন্য লজ্জার। তবে, আমরা যেহেতু গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন করছি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র নিশ্চিত করার জন্য ভোটাধিকার প্রয়োগে বাধাদানকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘ভিসা নীতি’ প্রয়োগ শুরু করেছে, সেহেতু এটি আমাদের আন্দোলনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা মনে করি।’

এদিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও ক্ষমতাসীন দলের লোকদের পাশাপাশি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী বিরোধীদলের সদস্যদের ভিসা নীতির আওতায় আনার কথা বলা হলেও এ ব্যাপারে নির্ভার রয়েছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, বিরোধীদল বলতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মূলত সংসদের বিরোধীদলকে বুঝিয়েছে। আর বাংলাদেশে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যে ক্ষমতাসীন দলই প্রধান অন্তরায়, সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভালো করেই জানে।

বিজ্ঞাপন

দলীয় সূত্রমতে, বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন- দ্রুত ভিসা নীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার বিষয়টি আমলে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে, ভিসানীতির প্রয়োগ শুরু হওয়ায় আগামীর দিনগুলোতে বিরোধীদলের আন্দোলন কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার আগে দুইবার ভাবতে হবে ক্ষমতাসীন দলকে। আর এ সুযোগটিই কাজে লাগাতে চায় বিএনপি।

বিএনপি নেতাদের বিশ্বাস, মার্কিন ভিসা নীতি প্রয়োগের ফলে ক্ষমতাসীন দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ও প্রশাসনের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করবে। ফলে তারা আগের মতো অতি উৎসাহী হয়ে ‘বিরোধীদল দমনে’ খড়গহস্ত হতে পারবে না। কারণ, গত ১৪ বছরে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, সরকারি আমলা এবং সরকারের ঘনিষ্ঠজনরা আমেরিকায় গাড়ি-বাড়ি করে ফেলেছে। তারা আর তাদের ঝুঁকি বাড়াতে চাইবে না। নিজেদের বাঁচাতে নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় থাকবে।

অবশ্য ভিসা নীতি প্রয়োগের পরের দিন সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) আমিন বাজারে বিএনপির সভামঞ্চ ভেঙে দেওয়ায় কিছুটা হতাশাও কাজ করছে দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে। কোনো অংক মেলাতে পারছে না তারা। তবে, চূড়ান্ত আন্দোলনের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা বিশ্ব আরও বেশি সরব হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। তাদের বিশ্বাস, সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রেখে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের যে এজেন্ডা ফিক্সিড করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তা থেকে সরে আসবে না তারা।

বিজ্ঞাপন

ফলে, গত বছর ১০ ডিসেম্বর ও চলতি বছরের ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘিরে যে ধরনের রাজনৈতিক উত্তাপ তৈরি করেছিল বিএনপি, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির প্রেক্ষাপটে অক্টোবর-নভেম্বর মাসেও সে রকম পরিস্থিতি তৈরি করতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের মধ্যে চাঙ্গা ভাব ফিরিয়ে আনতে আবারও ঢাকায় মহাসমাবশে, ঘেরাও, অবস্থান কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছে তারা। মাথার ওপর ভিসা নীতির খড়গ ঝুলতে থাকায় এসব কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে বাধার সম্ভাবনা কম দেখছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তার মনে করছেন, নেতাকর্মীরা বাধাহীনভাবে কর্মসূচিতে আসতে পারলে পশ্চিমা বিশ্বকে নিজেদের দাবির পক্ষে আরও জোরালোভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘গণতন্ত্রের পক্ষে পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। প্রথমে পুলিশ ও র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে স্যাংশন, এখন আবার ভিসা নীতি আরোপ শুরু করেছে। এরপরও যদি তাদের বোধোদয় না হয়, তারা যদি বিরোধীদল দমনের নীতি থেকে সরে না আসে, তাহলে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে।’

সারাবাংলা/এজেড/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন