বিজ্ঞাপন

নির্বাচনি ইশতেহারে উপকূলের উন্নয়নে অঙ্গীকার তুলে ধরার ঘোষণা

October 16, 2023 | 7:34 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নির্বাচনি ইশতেহারে উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার তুলে ধরার ঘোষণা দিয়েছেন সরকার ও বিরোধী দলের নেতারা।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৬ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘উপকূলের মানুষের ইশতেহার’ শীর্ষক জাতীয় উপকূল সংলাপে অংশ নিয়ে এ ঘোষণা দেন তারা। উন্নয়ন সংস্থা ‘লিডার্স’ ও ‘পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক’ (প্রান) আয়োজিত সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র।

সংলাপে অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগে নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির সদস্য শেখর দত্ত, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সদস্য মানবেন্দ্র দেব, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোস্তফা আলমগীর রতন ও সাব্বাহ আলী খান কলিন্স।

সংলাপে প্রধান আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মনজুরুল আহসান বুলবুল। আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি কাওসার রহমান, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, অ্যাকশন এইডের ব্যবস্থাপক নাজমূল আহসান, অধ্যক্ষ আকমল হোসেন, কাপের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মাহবুবুল হক প্রমুখ।

বিজ্ঞাপন

সংলাপে মূল প্রবন্ধ উত্থাপন করেন লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মণ্ডল। স্বাগত বক্তৃতা করেন প্রানের প্রধান নির্বাহী নুরুল আলম মাসুদ।

সংলাপে উত্থাপিত দাবিনামায় বলা হয়, উপকূলীয় অঞ্চলকে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ বিশেষ এলাকা ঘোষণা করতে হবে। ওই জনপদের সুরক্ষা ও উন্নয়নে প্রতি অর্থবছরে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য উপকূলীয় উন্নয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে। নিরাপদ খাবার পানির স্থায়ী ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে উপকূলীয় এলাকায় ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের আদলে ‘একটি বাড়ি একটি শেল্টার হোম’, কার্যক্রম শুরু করতে হবে। উপকূলের রক্ষাকবচ বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনের ইকোসিস্টেম রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে উপকূলে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তুলতে হবে। স্থায়ী ও মজবুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার করতে হবে।

সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, নির্বাচনি ইশতেহার একটি রাজনৈতিক দলের লিখিত দলিল। এবারে ইশতেহার জলবায়ু ইস্যু লিপিবদ্ধ করলে এটা বড় অর্জন হবে। যারা ক্ষমতায় আসবে তারা কতটুকু ইশতেহার বাস্তবায়ন করেছে তাও দেখা যাবে। বিরোধী দলগুলো প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকারকে ওপর চাপ তৈরি করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

সংলাপে উত্থাপিত দাবির সঙ্গে একমত প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ নেতা শেখর দত্ত বলেন, সারাদেশের সুষম উন্নয়নই বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে দীর্ঘ দিন পুরো উপকূলীয় অঞ্চল অবহেলিত ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ওই অঞ্চলের উন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। টেকসই বেড়িবাধ নির্মাণ, সুপেয় পানি ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আগামীতে সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য ইশতেহারে উপকূলের জন্য পৃথক অনুচ্ছেদ উল্লেখ করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় বলেন, যারা ক্ষমতায় থাকে শুধুমাত্র তাদের ইশতেহার বাস্তবয়ন হয়। বিরোধী দলগুলোর ইশেতার গুরুত্ব দেওয়া না। তাই জনগণের স্বার্থে সরকারকে বিরোধীদের প্রস্তাবনাগুলোও বিবেচনায় নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় অঞ্চলভিত্তিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান তিনি।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে কিশোরীদের জন্ম প্রজনন স্বাস্থ্য যেভাবে ব্যাহত হচ্ছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগের কারণ। আর কয়লাভিত্তিক বিদুৎকেন্দ্র দক্ষিণঞ্চলের জন্য হুমকি। পরিবেশ ও প্রাকৃতিতে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করবে। আগামী কয়েক বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কয়েক লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে। তাই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল রক্ষায় এসব প্রকল্প বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তুচ্যুত মানুষ রক্ষা করতে হবে।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী বলেন, যে দেশে নির্বাচন হয় না, সেই দেশে ইশতেহার দিয়ে কী হবে? বিদেশ থেকে ভিক্ষা করে আমরা জলবায়ু তহবিল আনছি। কিন্তু সেই তহবিলের টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। আজকে নদী-সাগর-পাহাড়ও দখল করছে রাজনৈতিক নেতারা।

বিজ্ঞাপন

সংলাপে মূল প্রবন্ধে মোহন কুমার মণ্ডল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা খুবই সীমিত হলেও জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উপকূলের মানুষ। ভৌগোলিক অবস্থা, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভঙ্গুর অবকাঠামো, দীর্ঘমেয়াদি লবণাক্ততা প্রভৃতির কারণে জীবন-জীবিকা, সম্পদ, খাদ্য, পানি, বাসস্থান সংকটে রয়েছে সমগ্র উপকূলীয় এলাকার মানুষ। জীবনের তাগিদে মানুষ তাই উপকূল ত্যাগ করছে। এই সংকট উত্তরণে উপকূলের প্রান্তিক মানুষ, সুশীল সমাজ ও জনপ্রতিনিধিগণ দীর্ঘদিন সংগ্রাম করছে। দীর্ঘমেয়াদি এই সংকট মোকাবেলায় দরকার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ও উদ্যোগ।

মোহন কুমার মণ্ডল আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভয়াবহ দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকলেও জাতীয় বাজেটে বরাদ্দের ক্ষেত্রে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের জনগণ সবসময় বৈষম্যের শিকার। এই বৈষম্য অবসানের বিষয়ে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ঘোষণা প্রত্যাশা করে জনগণ।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন