বিজ্ঞাপন

আ.লীগে তাজকন্যা সিমিন এগিয়ে, বিএনপিতে রিয়াজুল হান্নান

November 20, 2023 | 10:42 pm

মো. তাওহীদ কবির, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

গাজীপুর: একটি সমৃদ্ধ ও প্রাচীন জনপদের নাম গাজীপুর। এই জেলাটিতে জ্ঞান-বিজ্ঞানে, শিল্প-সাহিত্যে, সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানকারী বিখ্যাত ব্যক্তিদের জন্ম হয়েছে। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে উঠে এই গাজীপুরে। বাংলাদেশকে বিশ্বে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর যার নাম উচ্চারিত হয় তিনি হলেন বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমেদ। তিনি ছিলেন বিরল মেধা ও প্রজ্ঞার অধিকারী এবং প্রচণ্ড ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যে চিহ্নিত ক্ষণজন্মা এক ব্যক্তিত্ব। তাজউদ্দীনের বাইরেও সুস্থ রাজনীতির বাহক, দেশ উন্নয়নে নিবেদিত প্রাণ ও মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় যাদের নাম উচ্চারিত হয় তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন- প্রয়াত শামসুল হক, শহিদ আরজ উদ্দিন, শহিদ মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন, গাজী গোলাম মোস্তফা, প্রয়াত হাবিবুল্লাহ, শহিদ হুরমত আলী, শহিদ আহসান উল্লাহ মাস্টার, মো. রহমত আলী ও আ ক ম মোজাম্মেল হক।

বিজ্ঞাপন

পোশাক শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এই গাজীপুরকে এক কথায় বলা চলে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। এই জেলার পাঁচটি আসনই বর্তমানে আওয়ামী লীগের দখলে। রাজনীতির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এই গাজীপুরের রাজনীতি আবর্তিত হয় স্থানীয় জনগণ ও পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে। এই জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার পোশাক কারখানা রয়েছে। ফলে এখানে স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। যে কারণে এই জেলার আসনগুলোতে ভোটার অন্যান্য আসনের চেয়ে বেশি।

আসছে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে গাজীপুরের আসনগুলোতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বড় দল এবং দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় এই জেলার কয়েকটি আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়া প্রার্থীর সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। তবে রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির প্রার্থীর সংখ্যাও কম নয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেকেই মাঠে নেমেছেন। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি কেন্দ্রেও যোগাযোগের চেষ্টা করছেন তারা। তবে দুই দলেই মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় অনেক জায়গায় অভ্যন্তরীণ বিরোধের খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

বর্তমানে সারাদেশে বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় থেমে নেই সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা ও ভোটারের জেলা গাজীপুরের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও। মিছিল-মিটিং, উঠান বৈঠকসহ নিজেকে যোগ্য প্রমাণে উঠে-পড়ে লেগেছেন তারা। এবারও জাতীয় পার্টি মহাজোটে থেকে নির্বাচন করছে। আর রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি রয়েছে আন্দোলনে। তবে বিএনপি নির্বাচনে এলে ভোটের হিসাব-নিকাশ কিছুটা হলেও পাল্টে যাবে। কারণ, তারাও দুয়েকটি আসন দখলে ভোটের মাঠে নামবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসনভিত্তিক পরিক্রমায় এবার সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে সারাবাংলার আয়োজনে থাকছে গাজীপুর-৪ আসনের চিত্র।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: 

আ.লীগে সহজেই পার পাচ্ছেন না সবুজ, বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী

রাজধানীর কোলঘেঁষা শিল্পনগরী গাজীপুরের গুরুত্বপূর্ণ একটি আসন গাজীপুর-৪। স্বাধীনতার আগ থেকে এই আসনটি আওয়ামী লীগের নিরাপদ ঘাঁটি। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহিদ তাজউদ্দীন আহমদের জন্মভূমি এই আসনে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ছয় বার জয়লাভ করেছে আওয়ামী লীগ। আসনটি আওয়ামী লীগের অনেকটা নিরাপদ ও শক্ত ঘাঁটি হলেও দলীয় কোন্দল ও বিভক্তি রয়েছে। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আফসার উদ্দীন খান। এরপর ২০০১ ও ২০০৮ সালে এমপি হন তাজউদ্দীনপুত্র আওয়ামী লীগের তানজিম আহমদ প্রকাশ সোহেল তাজ। পরবর্তীতে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে এমপি হন তাজউদ্দীনকন্যা আওয়ামী লীগের সিমিন হোসেন রিমি।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে এই আসনের সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি। ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ হিসেবে এলাকায় তার রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। তবে এবারের দ্বাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগে তিনিই একমাত্র প্রার্থী নন। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আরও রয়েছেন শহিদ তাজউদ্দীন আহমদের ভাগ্নে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা আলম আহমেদ, গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান ও আনিছুর রহমান আরিফ। তবে নেতাকর্মীদের দাবি, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা হাতেই ঐতিহ্যবাহী এই আসনে নৌকার টিকিট আসবে তাকেই জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।

এদিকে, বিএনপি সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে থাকলেও যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যায় তবে সেখানে দলটির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন- দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেকমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ’র ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান, কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জামাল উদ্দিন আহমেদ, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আজিজুর রহমান ও সাখাওয়াত হোসেন সেলিম।

এই আসনে নির্বাচন করতে চায় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্ও। তিনিও খুব তোড়জোড় করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি মাঠেও নেমেছে পড়েছেন।

অপরদিকে, এই আসনে সাংগঠনিকভাবে জাপার তেমন কোনো তৎপরতা নেই। তবে দলটি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যাও কম নয়। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবীর, সাইদুর রহমান মোড়ল ও যুগ্ম সম্পাদক মোশারফ হোসেন জয়। এ ছাড়া এই আসনে জাকের পার্টিও পিছিয়ে নেই। এই দলটি মাঠে তৎপর না থাকলেও নেতাকর্মীদের মুখে প্রার্থীর আলোচনা ঠিকই শোনা যাচ্ছে। এ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন ডা. জুয়েল কবির।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচনে মনোনয়ন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সিমিন হোসেন রিমি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি আশাবাদী, এবারও মনোনয়ন পাব। আমি জনগণের জন্য কাজে করেছি। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে আমি তার জন্যই কাজ করব। দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’

দলের মনোনয়ন নিয়ে গাজীপুর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করব। তবে আমরা আশাবাদী আমাদের দল শাহ রিয়াজুল হান্নানকে মনোনয়ন দেবে। হান্নানকে মনোনয়ন দিলে এই আসন থেকে বিপুল ভোটে তিনি নির্বাচিত হবেন। দল যদি নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে অবশ্যই দলের স্বার্থে ও দলের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি বিগত দিনে সাধারণ মানুষের কথা বলেছে। তবে এই সরকারকে মানুষ পছন্দ করে না। কারণ, তারা জনগণকে অতিষ্ট করে তুলেছে। মানুষ পরিবর্তন চায়। বিএনপি ক্ষমতা এলে দ্রবমূল্যের দাম কমবে। সাধারণ মানুষ স্বস্তি ফিরে পাবে।’

নির্বাচনে নিয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি মনোনয়নের ক্ষেত্রে শতভাগ আশাবাদী। এলাকার মানুষ পরিবর্তন চায়, এলাকার মানুষ তারুণ্য চায়। যদি জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে আমি বিগত দিনে যেভাবে কাজ করেছি, তার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করব। আমি সংসদ সদস্য হওয়া মানেই আমার এলাকার প্রতিটি মানুষ সংসদ সদস্য।’

উল্লেখ্য, এই আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৬৭ হাজার ১৮৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩১ হাজার ৭৬৯ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৩৫ হাজার ৪১৮ জন। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ১ লাখ ১০ হাজার ৬৮২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের তানজীম আহমেদ সোহেল তাজ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আব্দুল মজিদ মিনু। তিনি পান ৬৪ হাজার ৪৬৬ ভোট। এর পর ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান সিমিন হোসেন রিমি। ওই নির্বাচনে তিনি ১ লাখ ১২ হাজার ৮৮৭ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির এম এম আনোয়ার হোসেন পান ৭ হাজার ৮৩৩ ভোট। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান তাজকন্যা সিমিন হোসেন রিমি। ওই নির্বাচনে তিনি ২ লাখ ৩ হাজার ২৫৮ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শাহ রিয়াজুল হান্নান পান ১৮ হাজার ৫৮২ ভোট।

সারাবাংলা/টিকে/পিটিএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন