খুন-গুম বিএনপি সরকারই শুরু করেছিলো: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটের আমলে ব্যাপক খুন-গুম ছিল। এখন খুন-গুম আমরা সচরাচর দেখছি না। আমরা এসব কমিয়ে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করছি।’

রোববার (১০ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

বিএনপির মানববন্ধনে বক্তারা বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে খুন ও গুমের দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত করেছে এর প্রতিক্রিয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে কতটুকু খোঁজখবর রাখেন সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। বাংলাদেশ এখন একটি শান্তিপূর্ণ দেশ। এখানে সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চরমপন্থী, বনদস্যু, জলদস্যু ক্রমান্বয়ে সারেন্ডার করেছে। এগুলো বিদায় নিয়েছে।’

‘এখন খুন-গুম আমরা সচরাচর দেখছি না, এগুলো আমরা ব্যাপক হারে দেখেছিলাম ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত। আমরা জঙ্গি-সন্ত্রাসের উত্থান দেখেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্যটা আপনারা দেখেছেন, খোদা তাকে রক্ষা করেছেন। ৬৩টি জেলায় একসঙ্গে বোমা হামলা করেছিল। এসব কিন্তু সেই আমলেই হয়েছে। এগুলো একটা ইতিহাস হয়ে রয়েছে’, বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সেই খুন-গুমের কথা হয়তো অনেকেই ভুলে গেছেন। আমি আবারও তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই। খুন-গুমের শুরুই করেছিলেন তারা (বিএনপি)। আমরা এগুলো বন্ধ করে আজকে একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছি।’

অবৈধভাবে বিরোধী দলকে গ্রেফতার করে গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন করছে সরকার- বিএনপির এমন অভিযোগের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘গত দুই বছর ধরে বিএনপির-জামায়াত কিংবা অন্য দল, যত ধরনের প্রোগ্রাম করতে চেয়েছে, আমরা কোনটাতেই বাধা দেইনি। তারা মানববন্ধন, মিছিল, লংমার্চ, অবরোধ, ধর্মঘট করেছে। আমরা কোনটিতেই বাধা দেয়নি। গত ২৮ অক্টোবরও আমরা বাধা দেইনি।’

কাউকে অন্যায়ভাবে কিংবা বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করা হচ্ছে না দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘গত ২৮ নভেম্বর বিএনপির সমাবেশে উচ্চ প্রযুক্তির ড্রোন ক্যামেরা ওড়ানো হয়েছিল। ড্রোনের সাহায্য নেওয়াতে সেখানে কখন কতজন লোক উপস্থিত ছিল, আমরা মাথাগুণে সেটা বের করেছি। সেখানে কারা কাকে পিটিয়েছে তারা কোথা থেকে আসছে, সবকিছু আমাদের ক্যামেরায় রয়ে গেছে। ক্যামেরা থেকে খুঁজে কারা কারা জড়িত ছিল তা বের করা হয়েছে। যে যেখানেই থাকুক… সে যদি সাতক্ষীরা থেকে এসে থাকে আমরা সাতক্ষীরায় তাদের চেহারা পাঠিয়ে দিয়েছি। তাকে চিহ্নিত বা শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এখানে প্রায় ২ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটিয়েছিল, মাথা গুণে আমরা দেখেছি। আরও ছোট ছোট দল এখানে সমাবেশ করেছিল। সবার চেহারা আমাদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।’

বিএনপির মানববন্ধনেও বাধা দেওয়া হয়েছে অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘পুলিশ অন্য জায়গায় গিয়ে মানববন্ধন করার অনুরোধ জানিয়েছিল। যানজট সৃষ্টি হতে পারে, সেজন্যই তারা অন্য জায়গায় করতে বলেছিল। করতে দেয়নি ঘটনা সত্যি নয়।’

হেফাজতে ইসলাম ঢাকায় সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে, এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের যদি আপত্তি থাকে, তবে তারা তা করতে পারবে না। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী যদি মনে করে এখানে সমাবেশ হলে পরিবেশ নষ্ট হবে, সেখানে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীরও দেখার বিষয় রয়েছে।’

যেসব পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে। সেগুলো দেখে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের মাধ্যমে তাদের বদলি করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে পুলিশের প্রতি আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই। নির্বাচন কমিশনার যে নির্দেশনা দিচ্ছে সেটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন যেভাবে চাচ্ছে, আমাদের পুলিশ সেভাবেই কাজ করছে।’

রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেবে নির্বাচন কমিশন- এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কাছে চিঠি আগে আসুক। নির্বাচন কমিশন এগুলো স্টাডি করে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই একটা সিদ্ধান্ত আমাদের দিচ্ছেন। সে সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে না এলে তো আমরা অ্যাডভান্স কিছু বলতে পারি না।’

সারাবাংলা/জেআর/এমও