বিজ্ঞাপন

পেঁয়াজের দাম বাড়ায় আমদানিকারকদের দুষছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা

December 11, 2023 | 6:02 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: পেঁয়াজের আকস্মিক দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে ভারত সীমান্তের দেশীয় আমদানিকারকদের দায় দেখছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও আড়তদারেরা। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের ডাকা মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীরা এমন অভিযোগ করেন। তবে ওই সভায় আমদানিকারকদের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। জেলা প্রশাসন ডাকলেও আমদানিকারকদের কেউ সেই সভায় হাজির হননি।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ‘আমদানিকারকদের সঙ্গে’ এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। সভায় ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই ও পাহাড়তলীর ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সীমান্তের সোনা মসজিদ, হিলি ও ভোমরা স্থলবন্দরের আমদানিকারকেরা দাম বাড়িয়ে দেন। অনেক আমদানিকারক ঢাকায় বসেও দাম নিয়ন্ত্রণ করেন। চট্টগ্রামে আমদানিকারকের সংখ্যা কম। খাতুনগঞ্জের বেশিরভাগ ব্যবসায়ী কমিশন এজেন্ট। সীমান্ত থেকে আমদানিকারকরা যেভাবে বিক্রির নির্দেশনা দেন, তারা সেই দামে বিক্রি করতে বাধ্য।

সভায় খাতুনগঞ্জ আড়তদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা যারা সাধারণ ব্যবসায়ী তারা প্রতি কেজিতে ৪০ পয়সা ধরে কমিশন পাই। সেটি কেজিতে ১১০ টাকা ধরে বিক্রি হোক বা ২২০ টাকা। পেঁয়াজের বাজার বর্ডার থেকে নিয়ন্ত্রণ হয়। সেখানে আমাদের হাত থাকে না। বর্ডার থেকে যে সিদ্ধান্ত আসে সে অনুযায়ী আমরা পেঁয়াজ বিক্রি করি।’

বিজ্ঞাপন

‘বর্ডার থেকে আমদানিকারকরা মানা করলে আমাদের পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে রাখতে হয়। বর্ডারে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী যাদের ভালো সম্পর্ক, তারাই এসব ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। সরকার চাইলেই তাদের এ সিন্ডিকেট ভাঙতে পারে। সরকার এক ঘন্টার মধ্যে ১০০ টাকার পেঁয়াজ ৪০ টাকায় নামিয়েছিল, সে নজির আছে বাংলাদেশে।’

জবাবে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামান বলেন, ‘আড়ত আপনাদের, ব্যবসা আপনাদের। আরেকজন বর্ডার থেকে কল দিয়ে আপনাদের নিয়ন্ত্রণ করবে এটি কী করে হয়। এটা কেমন ব্যবসা। তাদের তথ্য আমাদের দেন। যে পেঁয়াজ ৯০ টাকা করে কেনা, সে পেঁয়াজ এক লাফে ২২০ টাকা কিভাবে হয়। ১২০-১২৫ টাকার বেশি দামে পেঁয়াজ আপনারা বিক্রি করতে পারেন না।’

সভায় চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক অহীদ সিরাজ স্বপন বলেন, ‘চট্টগ্রামে পেঁয়াজের আমদানিকারক নেই। থাকলেও হাতেগোনা। দুই-একজন ব্যবসায়ীর জন্য পুরো ব্যবসায়ী সমাজ কলঙ্কিত হবে না। তাদের অপকর্মের দায় আমরা নেব না।’

বিজ্ঞাপন

খাতুনগঞ্জ আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩৪ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ লাগে। ১০ থেকে ১২ মেট্রিক টন পেঁয়াজ দেশে উৎপাদিত হয়। বাকিগুলো বাইরে থেকে আসে। যার বেশিরবাগই ভারতের। পেঁয়াজের ব্যবসা বলতে গেলে পুরোই বর্ডার কেন্দ্রিক। এক্সপোর্ট, ইমপোর্ট সব ওখানেই। তারা চাইলে সব করতে পারে।’

জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামান বলেন, ‘এখন থেকে চট্টগ্রামের চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলীতে যেসব গোডাউন রয়েছে, সব গোডাউনের তথ্য নেওয়া হবে। এ তথ্য নিশ্চিত করার জন্য আমরা গণবিজ্ঞপ্তি জারি করব। তালিকা ছাড়া কোনও গোডাউনে মালামাল পেলে সেগুলো সঙ্গে সঙ্গে জব্দ করব। শুধু পেঁয়াজের ক্ষেত্রে নয়, চিনির ক্ষেত্রেও আমরা সব তথ্য চাইব। সব কাগজে কলমে থাকবে হবে। কাগজপত্রহীন কোনও কিছুই আমরা ছাড় দেব না।’

‘গোডাউনে মালামাল যতই থাকুক না কেন, আমরা সেটার রশিদ চাইব। রশিদ ছাড়া কোনও মালামাল পাওয়া গেলে সেগুলো আমরা নিলামে ন্যায্যমূল্যে জনসাধারণের মাঝে বিক্রি করে দেব। বর্ডারে কারা এসব ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেব। আপনারা আমাদের তাদের তালিকা দিয়ে সহযোগিতা করুন।’

জনসাধারণকে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু কেনার আহ্বান জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আপনাদেরকেও একটু ধৈর্য ধারণ করতে হবে। দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে এক সঙ্গে ১০ কেজি কিংবা ৫ কেজি কিনে নিয়ে যাবেন-এটি কাম্য নয়। এক বা দুই কেজিরে বেশি পেঁয়াজ নেবেন না।’

বিজ্ঞাপন

অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ও দাম ঠিক রাখতে শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) থেকে ভারত পেঁয়াজ রফতানিতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করে। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই ঢাকাসহ সারাদেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। চট্টগ্রামে খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে। গত দু’দিন ধরে জেলা প্রশাসন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বিভিন্ন আড়তে ও দোকানে অভিযান চালিয়েও দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।

সারাবাংলা/আইসি/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন