বিজ্ঞাপন

প্রতিবেশী দেশগুলোর জিডিপিতে এসএমই’র অবদান ৪০-৬০%, বাংলাদেশে ৩০%

December 18, 2023 | 8:52 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা : প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী দেশগুলোর জিডিপিতে যেখানে এসএমই খাতের অবদান ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশ এখনও ৩০ শতাংশেরও কম। অর্থাৎ আমরা এসএমই খাতে অনেক পিছিয়ে রয়েছি। অথচ লার্জ ইন্ড্রাস্ট্রিকে টিকিয়ে রাখতে একইসঙ্গে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে এসএমই খাতের বিকল্প নেই। তাই এসএমই খাতকে এগিয়ে নিতে ব্যাংকিং ফাইন্যান্সকে সহজ করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৮ ডিসেম্বর ) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘অপরচুনিটিস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জ ইন দ্য এসএমই সেক্টর’ শীর্ষক সেমিনারের বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ’র সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মিরধা। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ইআরএফ’র সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, এসএমই মার্কেট সম্পর্কে জানাতে ও ডকুমেন্টেশন তৈরির জন্য দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি আলাদা সেল বা মন্ত্রণালয় তৈরি ও প্রয়োজনীয় পলিসি সাপোর্ট দেওয়াও প্রয়োজন। এসব করা সম্ভব হলে এসএমই খাতের ব্যাপক সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন করে দেশের অর্থনীতির ভিত্তি শক্তিশালী করা যাবে। তবে এগুলোর পাশাপাশি ব্যাংকারদের মানসিক পরিবর্তনও দরকার বলেও মনে করেন তারা।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘উন্নতদেশগুলোতে বড় উৎপাদকরা ব্যাকওয়ার্ডলিংকেজগুলো ছোট উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে কিনে নেয়। ফলে একই শিল্পে ছোট-বড় উদ্যোক্তা তৈরি হয়। যেমন টয়োটা গাড়ির ইঞ্জিনটা তৈরি করে বাকি সব পার্টস বাইরে থেকে তৈরি করে নেয়। কিন্তু আমাদের দেশে বড়রা ছোটদের সুযোগ দেয় না। তারা নিজেরাই সবকিছু তৈরি করে। অনেক বড় গ্রুপ চানাচুর মুড়িও তৈরি করেন।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘এই বৈষম্য দূর কর করতে ছোট উদ্যোক্তাদের ব্যাংকের অর্থায়ন দরকার। কিন্তু এসএমই উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় অর্থায়ন পাচ্ছেন না। এখাতে অর্থায়ন এখনও বড় সমস্যা। প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে অনেক তহবিল থাকলেও প্রকৃত হকদাররা তা পাচ্ছেন না। যারাই পাচ্ছেন তাদের ইন্টারেস্ট রেটও ১২-১৪ শতাংশ হয়ে যায়।’

এছাড়া এসএমই খাতের জন্য ১ শতাংশ সোর্সট্যাক্স রয়েছে। যা থাকা উচিত নয় বলে মনে করেন মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক চেষ্টা করছি, যাতে সরকার এটি তুলে নেয়। কারণ এসএমই উদ্যোক্তাদের যদি সুযোগ না দেওয়া হয় তাহলে দেশের অর্থনীতি বড় হবে না। স্মার্ট বাংলাদেশ করতে হলে এসএমইর কোনো বিকল্প নেই। দেশকে এগিয়ে নিতে এসএমইকে এগিয়ে নিতে হবে। পেছনে ফিরে দেখার সময় নেই, বড় চিন্তা করতে হবে।’

ন্যাশনাল ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মেহমুদ হোসেন বলেন, ‘এসএমই খাতে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সাইকোলজিক্যাল সমস্যা রয়েছে। একটি ঋণে অনেক কাগজপত্র দরকার হয়। কিন্তু ব্যাংকার-উদ্যোক্তারা এ বিষয়ে আগ্রহী হন না। দক্ষতার ঘাটতি এর অন্যতম কারণ। এই আগ্রহের ঘাটতিতে এসএমই খাত পিছিয়ে পড়ছে।’

বিজ্ঞাপন

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি সামির সাত্তার বলেন, ‘এসএমই খাতের জন্য এক্সসেস টু ফাইন্যান্স ছাড়াও এখন বড় চারটি পদক্ষেপ দরকার। সেগুলো হলো- মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজকে এসএমই থেকে বের করে দেওয়া, যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এসএমই খাতকে টেনে তুলতে ট্যাক্স মওকুফ এবং এলসি মার্জিন লেয়ার তৈরিসহ নানা ধরণের সরকারি পলিসি সাপোর্ট দেয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের উপযোগী করে গড়ে তুলতে উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া ও আলাদা এসএমই মন্ত্রণালয় তৈরি করতে হবে।’

এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের এসএমই খাত প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে আছে। কারণ, অর্থায়নে ঘাটতি আছে এবং সুদ হার বেশি। প্রত্যেক ক্ষেত্রে এসএমই খাত বাধার মুখে পড়ছে। এসএমই খাতের জন্য একটি ইনডিজিনিয়াস লোন প্রসেস তৈরি করতে হবে। কীভাবে সহজে ঋণ দেওয়া হবে সেজন্য উদ্ভাবনী আইডিয়া দরকার।’

তিনি বলেন, ‘এসএমই খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বাজার প্রবেশাধিকার সহজ করতে হবে। অনেক সময় মধ্যস্বত্ত্বভোগীর কারণে এসএমই উদ্যোক্তারা মার্কেটে ঢুকতে পারেন না। মধ্যসত্ত্বভোগীরা উদ্যোক্তাদের বড় হতে দেয় না। প্রকৃত উদ্যোক্তারা পণ্য বিপণনে মধ্যস্বত্বভোগীদের উপর নির্ভরশীল।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফেসবুকের সঙ্গে এসএমই ফাউন্ডেশনের চুক্তি হয়েছে। ফেসবুক উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এর মাধ্যমে উদ্যোক্তারা তাদের মার্কেটিং ও প্রচার করতে পারবেন।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন