বিজ্ঞাপন

ফিরে দেখা: প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৭৩

January 5, 2024 | 9:15 pm

তরিকুর রহমান সজীব

দুয়ারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এরই মধ্যে এই নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ। প্রার্থী মনোনয়ন, প্রার্থী বাছাই, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ও প্রতীক বরাদ্দের সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে বৈধ প্রার্থীরা সবাই নির্বাচনি প্রচারও শেষ করেছেন। এখন কেবল ভোটের অপেক্ষা। নির্বাচন কমিশনও (ইসি) ভোট আয়োজনের সব প্রস্তুতি নিয়েছে। ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে সেই ভোটগ্রহণ। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে আরও ১১টি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সারাবাংলার পাঠকদের জন্য আগের জাতীয় নির্বাচনগুলোর সব তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে। আজ থাকছে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা।

বিজ্ঞাপন

১৯৭১ সালে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণার পর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাকে কারাগারে বন্দি করে। তার অনুপস্থিতিতে তাকেই রাষ্ট্রপ্রধান করে ১০ এপ্রিল গঠন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ীর সরকার। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় (বর্তমান মুজিবনগর) সেই সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা শপথ নেন।

স্বাধীনতার আগে সবশেষ ১৯৭০ সালে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় লাভ করলেও পশ্চিম পাকিস্তানিরা সরকার গঠন করতে দেয়নি। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরেন। পরদিন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনি অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করেন এবং সেই আদেশের ক্ষমতাবলে দেশে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যাত্রা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী ২৩ মার্চ গণপরিষদ আদেশ জারি করেন। ওই আদেশ ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ কার্যকর হয়।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে যে ৪৬৯ জন জয়লাভ করেন, তাদের মধ্যে ৪০৩ জন সদস্য নিয়ে গঠিত দেশের প্রথম গণপরিষদ। ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। গণপরিষদ সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করে। সংবিধান পাসও হয় গণপরিষদের অধিবেশনেই। সেই সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচনের আগে বিচারপতি এম ইদ্রিসকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৭২ সালের ৭ জুলাই এই নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালন করে। তাদের অধীনেই ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ১৪টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে।

নির্বাচনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলো হলো— আওয়ামী লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ন্যাপ (মোজাফফর), ন্যাপ (ভাসানী), কমিউনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ (সিপিবি), কমিউনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ (লেলিনিস্ট), বাংলাদেশ জাতীয় লীগ (বিডিজেএল), বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (বিসিপি), বাংলা জাতীয় লীগ (বিজেএল), শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল, বাংলাদেশ জাতীয় কংগ্রেস (বিজেসি), জাতীয় গণতান্ত্রিক দল (জেজিডি), বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন (বিএসএফ) ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন (বিসিইউ)।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচনে অংশ নিতে এক হাজার ২০৩ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। বাছাই ও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার শেষে চূড়ান্ত প্রার্থী দাঁড়ায় এক হাজার ৮৯ জনে। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ১২০ জন। ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন ১১ জন, তাদের সবাই আওয়ামী লীগের।

তিন কোটি ৫২ লাখ পাঁচ হাজার ৬৪২ জন ভোটার ছিলেন এই নির্বাচনে। ভোট পড়ার হার ছিল ৫৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। ১১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ভোট হয় ২৮৯ আসনে। মোট ভোটকেন্দ্র ছিল ১৫ হাজার ৮৪টি। ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা ছিলেন এক লাখ ৯২ হাজার ৪২৩ জন। নির্বাচনে মোট খরচ হয় দুই কোটি ৯৬ লাখ ১৭ হাজার ৭৫৬ টাকা।

নির্বাচনের আগেই ধারণা ছিল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পাবে। হয়েছেও তাই। ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৩ আসনে জয় পায় আওয়ামী লীগ। একটি আসনে জয় পায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), একটি আসনে জয় পায় বাংলাদেশ জাতীয় লীগ (বিডিজেএল)। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পান পাঁচটি আসনে। সংরক্ষিত ১৫টি নারী আসনের সবগুলোতেও জয় পায় আওয়ামী লীগ।

প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল। এই সংসদে সংসদ নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মোহাম্মদ মনসুর আলী। স্পিকার ছিলেন শাহ আব্দুল হামিদ, মোহাম্মদউল্লাহ ও আব্দুল মালেক উকিল। ডেপুটি স্পিকার ছিলেন মোহাম্মদ বায়তুল্লাহ।

বিজ্ঞাপন

তথ্যসূত্র:
১. নির্বাচন কমিশন
২. সংসদ সচিবালয়
৩. বাংলাদেশের নির্বাচনি ব্যবস্থা ও ফলাফল, নেসার আমিন, ঐতিহ্য, ২০২৩

সারাবাংলা/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন