বিজ্ঞাপন

বইমেলায় বিদায়ের সুর, বিক্রিতে সন্তুষ্ট নন প্রকাশকরা

February 25, 2024 | 10:21 pm

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: অমর একুশে বইমেলায় বিক্রিয়কর্মীদের দম ফেলার ফুসরত নেই। শেষ সময়ে বই কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন পাঠক। প্রতিটি স্টলে বিদায়ের সুরে শেষ সময়ের কেনাবেচা এখন জমজমাট।

বিজ্ঞাপন

তবে বইমেলার সব স্টলের চিত্র এমন নয়। হাতেগোনো কয়েকটি প্রকাশনার স্টল ও প্যাভিলিয়ন বাদ দিলে বাকি স্টলগুলো এখনো ক্রেতা ও পাঠকশূন্য। প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, এবার মেলায় দর্শনার্থী বেশি এলেও গত বছরের তুলনায় বিক্রি কম। ফলে বিক্রি নিয়ে তারা সন্তুষ্ট নন।

রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) মেলার ২৫তম দিনের সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে বিক্রেতা ও প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

এবার অমর একুশে বইমেলা শেষ হবে ২৯ ফেব্রুয়ারি। সে হিসাবে মেলার বাকি রয়েছে আর মাত্র চার দিন। গত কয়েক দিনের তুলনায় রোববার সন্ধ্যায় মেলায় ভিড় কম দেখা গেছে। শবে বরাত ও বেশ কিছু ছুটির প্রভাব মেলায় দেখা গেছে। অন্যান্য দিনগুলোর তুলনায় ভিড় নেই বললেই চলে। এর মধ্যেও বেশ কিছু প্রকাশনা সংস্থার স্টলে রীতিমতো হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন পাঠক। কিছুটা হলেও লাইনে অপেক্ষা করেই তাদের পছন্দের প্রিয় বইটি কিনতে হচ্ছে। সেসব স্টলগুলোতে বিক্রিয়কর্মীদের ব্যস্ততাও বেশি।

বিজ্ঞাপন

রোববার বইমেলার ২৫তম দিনে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল তুলনামূলকভাবে কম। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

এমনই একটি প্যাভিলিয়ন তাম্রলিপি। প্রতিষ্ঠানটির প্যাভিলিয়নে রীতিমতো উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। এই প্যাভিলিয়নের সুপারভাইজর নাইমুর রহমান হৃদয় সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভালোই বই বিক্রি হচ্ছে। বিক্রয়কর্মীদেরও শেষ দিকে এসে ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে। তবে বিক্রি গত বছরের মতো নয়। ভিড় থাকলেও এবার পাঠক ও ক্রেতা কম। নতুন বইগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে।’

পাঞ্জেরী, অন্বেষা, অনন্যা, সেবা, অন্যপ্রকাশ ও প্রথমার প্যাভিলিয়নগুলোতেও বেশ ভিড় দেখা গেছে। তবে এসব প্রকাশনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিক্রি নিয়ে তারাও সন্তুষ্ট নন।

নালন্দার প্রকাশক রেদওয়ানুর রহমান জুয়েল সারাবাংলাকে বলেন, গত বছর ২৫ দিনে যে বিক্রি হয়েছিল, এবার বিক্রি সে তুলনায় অর্ধেক। হয়তো অর্ধেকের কিছুটা বেশি হবে। দর্শনার্থী বা মেলায় জনসমাগম বাড়লেও বিক্রি বাড়েনি।

বিজ্ঞাপন

কিছু প্রকাশনী বাদ দিলে বেশির ভাগ স্টলেই ক্রেতা-দর্শনার্থী-পাঠকের উপস্থিতি খুব একটা ছিল না। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

জানতে চাইলে অন্যপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যে রকম আশা করেছিলাম মেলা সে রকম হয়নি। প্রত্যাশা অনুযায়ী মেলায় এবার বিক্রি বাড়েনি। বিশ্বজুড়ে একটি মন্দা চলছে। হয়তো মেলাতেও তার প্রভাব পড়েছে। মেলায় এবার গত বছরের চেয়ে ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত বিক্রি কম রয়েছে।’

মাজহারুল ইসলাম আরও বলেন, আমাদের মেলাটি শুরুই হয় অগোছালো পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে। কোন দিকে প্যাভিলিয়ন হবে, কোন দিকে লিটল ম্যাগ চত্বর হবে— এসব নিয়ে আমরা প্রতিছরই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই যাচ্ছি। বাংলা একাডেমীরই উচিত মেলাটি প্রকাশকদের দায়িত্বে দিয়ে দেওয়া। বিশ্বের অন্যান্য মেলা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পরের বছরের মেলা নিয়ে কাজ শুরু হয়। আমাদের এখানে সেটিও হয় না। মেলা শুধু আমাদের এখানে আকারেই বেড়েছে, মানে নয়। বাংলা একাডেমি যদি মেলা তাদের হাতেই রাখে, তাহলে মেলা আয়োজনের জন্য আলাদা একটি উইং করা দরকার। কারণ বাংলা একাডেমির সারাবছর কোনো না কোনো কাজ থাকে। সেক্ষেত্রে আলাদা উইং থাকলে তারা সারাবছর মেলা নিয়েই কাজ করতে পারবে।

প্রকাশকরা বলছেন, মেলায় দর্শনার্থীর উপস্থিতি গত বছরের তুলনায় বেশি হলেও বিক্রি কম। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

এ বছর মেলা দুদিন বাড়ানোর আবেদনের কথা জানিয়ে এই প্রকাশক বলেন, মেলা দুদিন বাড়ানোর জন্য আমরা বাংলা একাডেমির কাছে আবেদন করেছি। ১ ও ২ মার্চ ছুটির দিন। এই দুই দিন শুক্র ও শনিবার মেলা বাড়ালে আমরা প্রকাশরা হয়তো কিছুটা লাভবান হব।

কিছুটা ভিন্নমত অবশ্য জানাচ্ছে মাওলা ব্রাদার্স। প্রতিষ্ঠানটির প্রকাশক আহমেদ মাহমুদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, এবার মেলায় বিক্রি বেড়েছে। বিক্রি বাড়ার প্রধান কারণ এবার মেলায় মেট্রেরেল নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আমরা এক শ্রেণির নতুন পাঠক ও দর্শনার্থী পাচ্ছি। তারা মেলায় ৮টা পর্যন্ত অবস্থান করেন। এবার গত বছরের চেয়ে বইয়ের বিক্রি বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন