বিজ্ঞাপন

রংপুর থেকে ঢাকায় আসা যাবে ৫ ঘণ্টায়

March 8, 2024 | 10:33 am

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রংপুর: মহাসড়ক নির্মাণে ব্যস্ত সময় কাটছে পার করছেন শ্রমিক ও প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। খুট-খাট শব্দ আর নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন করতে দম ফেলার ফুসরত নেই। এরইমধ্যে মহাসড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে ৮০ শতাংশ। ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হওয়া মহাসড়কে যেমন ফিরছে স্বস্তি, তেমনি বাড়ছে সাধারণ মানুষের আগ্রহ। চলমান বাকি কাজ শেষ হলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় যেমন আসবে আমূল পরিবর্তন তেমনি বাড়বে বাণিজ্য। সৃষ্টি হবে বিনিয়োগেরও পরিবেশ। বলছি রংপুর-ঢাকা চার লেন মহাসড়কের নির্মাণের কথা।

বিজ্ঞাপন

২০১৬ সালে শুরু হওয়া মহাসড়ক নির্মাণ কাজ করোনার কারণে থমকে থাকলেও উন্নয়ন কাজে এখন গতি ফিরেছে। দেশের প্রথম ডিজিটাল এই মহাসড়ক নির্মাণের কর্মযজ্ঞ চলছে দিনরাত- চলছে পুরোদমে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৪ লেন ও ইন্টারচেঞ্জের কাজ সম্পন্ন হলে উত্তরবঙ্গসহ ২২ জেলার যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। সুফল পাবে ঢাকায় যাওয়া-আসা করা হাজারো যাত্রী-চালকেরা। মাত্র ৫ ঘণ্টাতেই রংপুর থেকে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত সম্ভব।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সড়ক সংযোগ স্থাপনসহ সাসেক করিডোর, এশিয়ান হাইওয়ে, বিমসটেক করিডোর ও সার্ক হাইওয়ের সঙ্গে সংযুক্তির জন্য এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য ২০১৬ সালে মহাসড়কটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নত করার মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রাজধানীসহ সারাদেশের নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘সাসেক সংযোগ প্রকল্প – ২’ গ্রহণ করা হয়। এ জন্য টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুরের মডার্ন মোড় পর্যন্ত ১৯০ দশমিক ৪ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশনের (সাসেক-২)। বাংলাদেশ সরকার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)’র যৌথ অর্থায়নে এই প্রকল্পে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকবে উড়ালসড়ক, আন্ডারপাস, ছোট-বড় সেতু ও কালভার্ট। ফলে গাড়ির ক্রসিং কম হবে, পাশাপাশি সার্ভিস রোড থাকার কারণে লোকাল গাড়িগুলো চলাচল করতে পারবে। নিরাপদ ও টেকসই সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় মহাসড়কের শিল্প ও বাজার অঞ্চলে ৫০ কিলোমিটার কংক্রিট পেভমেন্ট, ২৬টি সেতু, ৩৯টি আন্ডারপাস, ছয়টি ফ্লাইওভার, ১৮০টি কালভার্ট এবং পথচারী পারাপারের জন্য ১১টি পথচারী সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্পে প্যাকেজ-৮ এর আওতায় ২৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার অংশের কাজ ৮৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। রংপুরের পীরগঞ্জ বড়দরগা থেকে মিঠাপুকুর হয়ে রংপুর নগরীর প্রবেশদ্বার মডার্ন মোড় পর্যন্ত এই মহাসড়কে ১৭টি কালভার্ট ও ৪টি সেতু রয়েছে। দিন যতই যাচ্ছে, ততই এসবের নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।

এদিকে, জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ি এলাকার দেড় কিলোমিটার অংশের কাজ এখনো বন্ধ রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিগগিরই এ জটিলতা কাটিয়ে ওই এলাকায় মহাসড়কের নির্মাণকাজ শুরু হবে।

বিজ্ঞাপন

পরিবহণ ও ব্যবসায় জড়িত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৪ লেন মহাসড়কের নির্মাণকাজ শেষ হলে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা আমূল পরিবর্তন ঘটবে। পাশাপাশি গড়ে উঠবে শিল্প কলকারখানা। প্রসারিত হবে ব্যবসা-বাণিজ্য। এ সব কর্মকাণ্ডে সৃষ্টি হবে ব্যাপক কর্মসংস্থান।

চাকরিপ্রত্যাশী তোহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চাকরির পরীক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে রংপুর থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে বিভিন্ন জায়গায় যানজটের শিকার হতে হয়। এতে করে আমার মূল্যবান সময় নষ্ট হয় অন্যদিকে মানসিকভাবে প্রচণ্ড চাপ বোধ করি। বগুড়ার যেতেই যানজটের কারণে মানুষ অসুস্থ হয়ে যায়। ঈদের সময় এই সড়কে ভয়াবহ রকমের যানজট হয়। হয়ত উত্তরবঙ্গের জন্য এই প্রকল্প আশীর্বাদ হবে।’

সাসেক-২, প্যাকেজ-৮ এর উপ-প্রকল্প ম্যানেজার নাশিদ হাসান সিরাজী জানান, রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের মূল চারলেনের প্রশস্ত রয়েছে ১৮ মিটারেরও বেশি। ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য আলাদা যে ২ লেন রয়েছে তার প্রশস্ত হচ্ছে ১১ মিটার। এ মহাসড়কের রংপুরের বড়দরগায় ৫৪ মিটার, শঠিবাড়িতে ৫৪ মিটার, মিঠাপুকুরে ৬৯ মিটার ও জায়গিরহাটে ৩০ মিটার আন্ডারপাস রয়েছে। এছাড়া ২৫ দশমিক ৫ মিটার মর্ডান ব্রিজ ও ৬৭ দশমিক ১৫ মিটার দমদমা ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। বৈরাগীগঞ্জ ও পায়রাবন্দরে দুটি ইউটার্ন রয়েছে। মিঠাপুরের গড়ের মাথায় সংযোগ সড়ক (ইন্টারসেকশন) রয়েছে। এরইমধ্যে ৮৫ কাজ শেষ হওয়াতে মহাসড়কের বেশির ভাগ অংশ এখন দৃশ্যমান।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ২০১৯ সালের জুনেই রংপুর-ঢাকামহাসড়কের নির্মাণকাজ রংপুর অংশে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতার কারণে শুরুতেই হোঁচট খেতে হয়। তবে এখন আর থেমে নেই কাঙ্ক্ষিত এই মহাসড়কের নির্মাণকাজ। দিন যতই যাচ্ছে, ততই নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আকবর আলী বলেন, ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক উন্নিত হওয়ার পর উত্তরবঙ্গসহ ২২ জেলার যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। প্রকল্প এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাবে। দুর্বল সড়ক যোগাযোগের কারণে উত্তরবঙ্গে বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছিল এতদিন সেটিও সমাধান হবে। পাশাপাশি বুড়িমারি ও বাংলাবান্ধা হয়ে ভারত-নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য প্রসারে বড় ভূমিকা রাখবে।

সাসেক-২ প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. ওয়ালিউর রহমান বলেন, ‘মহাসড়কের পাশে অনেক জমির মালিক মালিকানা দাবি করে আপত্তি দিয়ে মিস কেস করেছিলেন সেগুলো শুনানি করে নিষ্পত্তি করতে দেরি হয়েছে। নিষ্পত্তি না করে টাকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছিলো না। মহাসড়কটি হলে উত্তরাঞ্চলের মানুষের সুবিধা হবে। আগামী ৩০–৪০ বছর তাদের যাতায়াতের দুর্ভোগ কমবে।’

সম্প্রতি এই মহাসড়কের অগ্রগতি দেখতে রংপুরে এসে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ‘রংপুর-এলেঙ্গা মহাসড়কের ফোর লেনের কাজ ৮০ ভাগ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতায় কাজের গতি কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। আশা করা যায়, চলতি বছরের শেষের দিকে সম্পন্ন হবে মহাসড়কের কাজ।’

সারাবাংলা/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন