বিজ্ঞাপন

সিগারেটের দাম আরও বাড়ানোর সুপারিশ

April 3, 2024 | 3:13 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আসছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১০ শলাকার সিগারেট প্যাকেটের দাম ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা নির্ধারণ করে ৬৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের সুপারিশ করেছে তামাক নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। একইসঙ্গে ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ১৮ টাকা থেকে ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার সুপারিশ করেছেন তারা। এছাড়া ধোঁয়াবিহীন তামাকের দামও বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৩ এপ্রিল) রাজধানীর বিএমএ ভবনে বেসরকারি সংস্থা প্রজ্ঞা এবং প্রজ্ঞার মিডিয়া সেল আত্মা আয়োজিত এক কর্মশালায় এ সুপারিশের বিষয়ে আলোচনা হয়।

সংস্থাটির সুপারিশে তিন স্তরে সিগারেটের কর বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে নিম্ন স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের চূড়ান্ত খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা নির্ধারণ করে ৬৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা, মধ্যম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের চূড়ান্ত খুচরা মূল্য ৬৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বহাল রাখা, উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের চূড়ান্ত খুচরা মূল্য ১১৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বহাল রাখা এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের চূড়ান্ত খুচরা মূল্য ১৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বহাল রাখার সুপারিশ করা হয়।

অন্যদিকে ফিল্টারযুক্ত ও ফিল্টারবিহীন বিড়িতে অভিন্ন করভার (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৪৫%) প্রচলন করা, ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ১৮ টাকা থেকে ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ১৯ টাকা থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।

বিজ্ঞাপন

আর ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের ক্ষেত্রে জর্দা এবং গুলের কর ও দাম বৃদ্ধি করা, প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা থেকে ৫৫ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা, আর প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৩ টাকা থেকে ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। তবে সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়।

সেখানে আরও বলা হয়, ২০২৪-২৫ সালে এ সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে তামাকের ব্যবহার কমবে, জীবন বাঁচবে এবং রাজস্ব আয় বাড়বে। উদাহরণস্বরূপ বলা হয়, সিগারেটের ব্যবহার ১৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশে নেমে আসবে। কমপক্ষে ১০ লাখ তরুণ ধূমপান করতে নিরুৎসাহিত হবে, ১৫ লাখ ধুমপায়ী ব্যক্তি ধুমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবে এবং দশ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হবে।

তাদের প্রস্তাবের যৌক্তিকতা তুলে ধরতে গিয়ে আলোচকরা জানান, মূল্যস্ফীতি ও আয় বৃদ্ধির কারণে সিগারেট অধিক সহজলভ্য হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি ও মাথাপিছু আয়বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বাড়েনি। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০২২ সালে খানা প্রতি মাসিক গড় আয় বেড়েছে ১০৩ শতাংশ, মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৯৩ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ এবং এগুলো তামাকপণ্যকে আরও সহজলভ্য করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১০০ প্যাকেট সিগারেট ক্রয়ে ব্যক্তির আয়ের যতটুকু ব্যয় করতে হয় তা আগের তুলনায় ১৫ শতাংশ কম, যা সিগারেটে উল্লেখযোগ্যহারে মূল্য বৃদ্ধির পরামর্শ দেয়।

বিজ্ঞাপন

আরও বলা হয়, অতীতে নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেটে দাম বৃদ্ধি বিড়ির ব্যবহার বৃদ্ধিতে তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনি। গত পাঁচ বছরে নিম্নস্তরের সিগারেটের বিক্রি অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকলেও বিড়ির বিক্রি ক্রমশ কমেছে। এ থেকে বোঝা যায়, ধূমপায়ীরা সিগারেট ছেড়ে বিড়ি বেছে নেওয়ার চেয়ে বিড়ির পরিবর্তে সিগারেট বেছে নিতেই বেশি অগ্রহী। নিম্নস্তরে সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধিতে দেশীয় তামাক কোম্পানিগুলোর কোনো ক্ষতি হবে না। নিম্নস্তরের সিগারেটের খুচরা মূল্য ও সম্পূরক শুল্ক একসঙ্গে বৃদ্ধির পদ্ধতি গ্রহণ করা হলে প্যাকেট প্রতি রাজস্ব আয় এবং কোম্পানিপ্রতি রাজস্ব আয় উভয়ই বাড়বে। কাজেই সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ও সম্পূরক শুল্ক সমন্বিতভাবে বাড়ালে সরকার ও তামাক কোম্পানি উভয়ের জন্যই বধির্ত আয়ের সুযোগ তৈরি হবে।

সারাবাংলা/জেআর/এনএস

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন