বিজ্ঞাপন

অন্য এক আঁধার (প্রথম পর্ব)

April 8, 2024 | 5:50 pm

ইকবাল খন্দকার

। এক ।

বিজ্ঞাপন

সময় মাত্র বারো মিনিট।
এর মধ্যেই গোসল সারতে হবে সুমিকে।
তারপর তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়তে হবে বাসা থেকে।

অথচ গোসলেই সে প্রায় এক ঘণ্টা সময় ব্যয় করে অভ্যস্ত। আর তৈরি হওয়ার কাজে ব্যয় করে ঘণ্টা দেড়েক। তারপর জুতো পরা, টাকা নেওয়া, শেষবারের মতো আয়না দেখা ইত্যাদির পেছনেও একেবারে কম সময় খরচ হয় না। তাহলে আজ বারো মিনিটে যাবতীয় কাজ সেরে কীভাবে বের হওয়া সম্ভব? প্রশ্নটার উত্তর জানা নেই সুমির। শুধু এইটুকু জানা আছে- চেষ্টায় সব হয়। অতএব সে চেষ্টা চালিয়ে যাবে। প্রাণপণ চেষ্টা। তারপর যা আছে কপালে।

সুমিকে সময় বেঁধে দিয়েছে তার স্বামী। কর্মস্থলের লোকজন যাকে চেনে নাইমুর রহমান নামে। তবে তার আরও একটা নাম আছে। রনি। এই নামটা ব্যবহার করে পরিবারের লোকজন, আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুমহল। রনি মাসের ত্রিশ দিনের মধ্যে ত্রিশদিনই ব্যস্ত থাকে। কোনও মাস যদি একত্রিশ দিনে হয়, ওই একদিনও তার নিস্তার নেই। দৌড়ের উপর দৌড়, কাজের উপর কাজ। তবে আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে, কাজটা সে উপভোগ করে।

বিজ্ঞাপন

কিছুদিন ধরে যেন হাঁপিয়ে উঠেছে রনি। প্রায়ই সে বলে একটু বিশ্রাম নাকি দরকার। ছুটি পেলে ভাল হয়। তবে সেটা অফিসের কর্তা-ব্যক্তিদের সামনে বলে না। যেন ভয় পায়- তারা শুনলে যদি ছুটি দিয়ে দেন! দুদিন আগে যখন সে বিশ্রামের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছিল, তখন খোঁচা মেরেছিল সুমি। বলেছিল- অফিসে ছুটি চাইলে কবিরা গুনাহও হয় না, মহাভারত অশুদ্ধও হয় না। তাহলে চাইতে সমস্যা কী? আর যদি মনে করো শুক্রবারেও অফিস করবে, করতে পারো। কাজের মধ্যে থাকা ভাল।

শুক্রবার কিংবা সরকারি অন্যান্য ছুটির দিনগুলোতে রনি যদি অফিস করতো, তাহলে হয়তো খানিকটা বেঁচে যেত। কারণ, অফিসের কাজ এক ধরনের। অথচ ছুটির দিনগুলোতে যে কাজগুলো তাকে করতে হয়, সেগুলো হরেক ধরনের। নানা মাত্রিক। নানা চাপের। নানা যন্ত্রণার। বাজার করা, ঘর-দুয়ার পরিচ্ছন্নতার কাজে সহযোগিতা করা, অসুস্থ আত্মীয়-স্বজনকে দেখতে যাওয়া, অমুক দাওয়াত তমুক দাওয়াতে অংশ নিয়ে সামাজিকতা রক্ষার মহান দায়িত্ব পালন করা- আরও কত কাজ!
আজ সন্ধ্যার ঠিক আগে একটা ফোন পায় সুমি।
ফোনটা যেমন অদ্ভুত, তেমনই বিস্ময়কর।
আবার অবিশ্বাস্যও।
ফোনটা করেছিল রনি। আর সুমি রিসিভ করে জানতে চেয়েছিল অফিস ছুটির পর সরাসরি বাসায় চলে না এসে ফোন কেন করেছে। কোনও সমস্যা কি না। রনি তখন বলেছিল- অফিস অফিস করে একটা জীবন কাটিয়ে দিলাম। কিন্তু এই অফিসের বাইরেও তো মানুষের কিছু সাধ-আহ্লাদ থাকতে পারে, নাকি? এখন থেকে ওইসব সাধ-আহ্লাদের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। ‘এখন থেকে’ মানে আজ থেকেই।

সুমি তখনও বুঝতে পারছিল না রনি কী বলতে যাচ্ছে। তাই মোবাইল কানে চেপে ধরে অপেক্ষা করছিল ‘পাঞ্চ লাইন’ শোনার জন্য। অবশেষে রনি শোনায় কাক্সিক্ষত সেই লাইনগুলো- আমার কলিগরা প্রায়ই বউ নিয়ে সিনেমা দেখতে চলে যায়। আজ যাবো আমি। অবশ্যই তোমাকে নিয়ে। শো ছয়টায়। এখন বাজে পাঁচটা তেতাল্লিশ। বুঝতেই পারছো, মাত্র সতেরো মিনিট সময় আছে হাতে। এই সময়ের মধ্যে কীভাবে সিনেমা হলে পৌঁছাবে, জানি না। তবে পৌঁছাতে হবে। রাখলাম।

বিজ্ঞাপন

রনির কথায় সুমি এতটাই খুশি হয়, তার শরীরে যেন অলৌকিক শক্তি ভর করে। সে একদৌড়ে ঢুকে যায় বাথরুমে। তবে চুল তেল চিটচিটে না থাকলে গোসলটা এখন করতো না। আবার এটাও ঠিক, গোসল ছাড়া বাইরে গেলে তার অস্বস্তি লাগে। মনে হয় এই বুঝি কেউ গলার স্বর চড়িয়ে বলে উঠলো- আপনার গা থেকে তো ডাস্টবিনের তরতাজা গন্ধ বের হচ্ছে। কয় মাস ধরে গোসল করেন না শুনি?

বাথরুমে ঢুকেই সময়টা ভাগ করে নিয়েছে সুমি। সিনেমা হলে পৌঁছাতে লাগবে পাঁচ মিনিট। থাকলো বাকি বারো মিনিট। এই বারো মিনিটের এক সেকেন্ডও অপচয় করবে না সে। তারপর যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছে তাক লাগিয়ে দেবে রনিকে। যদিও সে জানে না গন্তব্যটা কোথায়। প্রেয়সী হল নাকি নীলাঞ্জনা হল। তবে সে শতভাগ নিশ্চিত, রনি প্রেয়সী হলের কথাই বলেছে। কারণ, এই হলটা বাসার সবচেয়ে কাছে। আর নীলাঞ্জনা হলের দূরত্ব প্রায় আধঘণ্টার। তবু সে সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে রনিকে ফোন করবে, গন্তব্য জেনে নেবে।
গোসল করা শেষ হয় সুমির।
সে হাত বাড়ায় তোয়ালের দিকে।
কিন্তু ভেন্টিলেটর দিয়ে তার চোখ চলে যায় রাস্তায়।
যেখানে একটা ছেলে পায়চারি করছে সন্দেহজনকভাবে।

সুমি এক পা এগোয়। ভেন্টিলেটরের কাছাকাছি যায়। ভেজা চুল থেকে কপাল বেয়ে পড়তে থাকা পানি মুছে তাকায় পরিষ্কার চোখে। বুঝতে চেষ্টা করে ছেলেটা সত্যিই সন্দেহজনকভাবে পায়চারি করছে, নাকি তার মনের ভুল। সুমি স্থির তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। না, তার মনের ভুল না। অবশ্যই এই ছেলের পায়চারিটা সন্দেহজনক। কারণ, সে বারবার তাকাচ্ছে বাসার দিকে। হাঁটতে হাঁটতেও তাকাচ্ছে, অল্পক্ষণের জন্য যে থামছে, তখনও তাকাচ্ছে।

ছেলেটা যদি বাসার দিকে বারবার না তাকিয়ে নিজের মতো পায়চারি করতো বা দাঁড়িয়ে থাকতো, তবু তাকে সন্দেহ করা যেতো। ডেকে জিজ্ঞেস করা যেতো- ‘এই ছেলে, এখানে কী করো? ’ কিংবা বলা যেতো- ‘এটা দাঁড়ানোর জায়গা না। যাও, চলে যাও।’ আসলেই জায়গাটা দাঁড়ানো বা অকারণ পায়চারির জায়গা না। এমন জায়গা, যে জায়গা দ্রুত অতিক্রম করতে হয় হেঁটে, রিকশায়, বাইসাইকেলে অথবা মোটরসাইকেলে। সবাই তাই করে।

বিজ্ঞাপন

ছেলেটার গতিবিধি লক্ষ্য করতে গিয়ে মিনিট পনেরো কাটিয়ে দেওয়ার পর হঠাৎ সুমির খেয়াল হয় রনির বেঁধে দেওয়া সময়ের কথা। সে প্রায় চিৎকার করে ওঠে। আর বসে পড়ে মেঝেতে। কিছুক্ষণ পর যখন সে উঠে দাঁড়ায়, দেখে ছেলেটা নেই। আছে এক জোড়া কুকুর। তার পায়চারির জায়গাটায় দাঁড়িয়ে ঘেউঘেউ করছে। মারামারির প্রাথমিক প্রস্তুতি। সুমি ধরে নেয়, কুকুরের ভয়েই ছেলেটা সটকে পড়েছে। নইলে হয়তো এখনও পায়চারি চালিয়ে যেতো।
সুমি বের হয় বাথরুম থেকে।
আর শব্দ শুনতে পায় মোবাইলের।
সে কাছে গিয়ে দেখে স্ক্রিনে রনির নাম ভাসছে।

সুমি মোবাইলটা হাতে নেওয়ার সাহস পায় না। তাই সে দাঁড়িয়ে থাকে কলাগাছের মতো। আর মনে মনে রাস্তা খোঁজে গালাগাল থেকে বাঁচার। পেয়েও যায়। ইতোমধ্যে কলটা কেটে গেছে। সুমি খাটে বসে। আরও কিছুক্ষণ ভাবে। তারপর ফোন করে রনিকে। বলে- অনেক বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। আমি বাথরুমে ঢুকেছিলাম গোসল করার জন্য। হঠাৎ পা পিছলে পড়ে মাথায় এমন বাড়ি খেলাম, জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।

রনি গালাগাল দেওয়ার কথা ভুলে যায়। সে সহমর্মিতা জানায়। জানতে চায় এখন সুমি কেমন আছে। মাথা কেটেকেটে গেছে কি না। সুমি জানায়, সে একদম ঠিক আছে। তারপর বলে- আমার ভাগ্যটাই খারাপ। নইলে এমন চমৎকার একটা দিনে এমন বাজে একটা ঘটনা কেন ঘটবে? তুমি কিছু মনে করো না, প্লিজ। আমার জন্য তোমার সব প্ল্যান মাটি হয়ে গেল। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
: আরে এখানে দুঃখিত হওয়ার কী আছে? অ্যাক্সিডেন্ট তো অ্যাক্সিডেন্টই।
: তা ঠিক। তবুও খারাপ লাগছে।
: খারাপ লাগার কিছু নেই। আজ সিনেমাটা দেখতে পারিনি তো কী হয়েছে? যেকোনওদিনই দেখা যাবে। এখন থেকে সপ্তাহে একটা করে সিনেমা দেখবো। ঠিক আছে? আরে, জীবনে আনন্দ-বিনোদনের দরকার আছে না?

সুমি খুশিতে গদগদ হয়ে ধন্যবাদ জানায় রনিকে। তারপর তাকে দ্রুত বাসায় ফেরার তাগাদা দিয়ে যেই মোবাইলটা রাখে, অমনি কলিংবেল বেজে ওঠে। আর এদিকে ভেতরটা ভয়ে কেঁপে ওঠে সুমির। কারণ, তার মনে হতে থাকে, রাস্তার সেই ছেলেটা এসেছে। নিশ্চয়ই খারাপ কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে।

। দুই।

সুমি দরজার কাছে যায়।
সাবধানে চোখ রাখে ডোরহোলে।
কিন্তু কাউকে দেখতে না পেয়ে জিজ্ঞেস করে- কে?

উত্তর পায় না। তাই প্রশ্নটা সে আবার করে। এবারও উত্তর মেলে না। তবে কলিংবেলটা আবার বাজে। সুমি ঠিক করে, রনিকে ফোন দেবে। সবকিছু খুলে বলবে এবং তার সাহায্য চাইবে। প্রয়োজনে স্বীকার করবে, একটু আগে মোবাইলে যা যা বলেছে, মিথ্যা বলেছে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বলেছে। আর বোঝাবে, বিপদ-আপদে পড়ে গেলে এই প্রকারের ছোটখাটো দু-চারটা মিথ্যা কথা বলাই যায়। এগুলোকে বড় করে দেখলে সংসারজীবন চলে না।

সুমি ফোন দেয়। কিন্তু রনি রিসিভ করে না। দ্বিতীয়বার দেয়। এবারও রিসিভ করে না। এদিকে কলিংবেল বেজেই চলে। সুমি আবার দরজার কাছে যায়। চোখ রাখে ডোরহোলে। কিন্তু এবারও দরজার সামনের জায়গাটা ফাঁকাই দেখতে পায়। সুমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। আর এলোমেলো হাঁটতে থাকে ড্রইংরুমজুড়ে। তারপর আবার ফোন দিতে চেষ্টা করে রনিকে। কিন্তু তার নাম্বার ব্যস্ত দেখায়।

সুমি এবার মোবাইলটা ছুড়ে ফেলে দেয় সোফার উপর। তারপর লম্বা লম্বা পায়ে হেঁটে আসে দরজার কাছে। আর খুলে ফেলে ছিটকিনিটা। দুরুদুরু বুকেই খোলে। কিন্তু আগন্তুকের মুখ এবং দুষ্টুমিভরা হাসি দেখে তার সব শংকা মিলিয়ে যায় হাওয়ায়। সে চেঁচিয়ে ওঠে খুশিতে। আর আগন্তুককে জড়িয়ে ধরতেও দেরি করে না। এরপর তার বুকে নাক ঠেকিয়ে বলে- তুমি কিন্তু ভীষণ দুষ্টু। কী ভয়টাই না পেয়েছিলাম। আরেকটু হলে হার্টের বারোটা বেজে যেতো।
: জামাই তো বউয়ের সাথে একটু দুষ্টুমি করতেই পারে, নাকি? সুমিকে বুকের সঙ্গে আরও শক্ত করে চেপে ধরে বলে রনি।
: এইটা ‘একটু’ দুষ্টুমি? এইটাকে যদি একটু দুষ্টুমি বলে, তাহলে বেশি দুষ্টুমি কোনটা?
: এখন বলা যাবে না।
: তাহলে কখন বলা যাবে?
: রাতে। লাইট নেভানোর পর।
: যাও! ফাজিল কোথাকার!

স্বামীর বুক থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় সুমি। আর ঢুকে যায় ঘরে। রনিও ঢোকে। তারপর দরজা বন্ধ করে দেয়। সুমি তাকে নিয়ে সোফায় বসে। আবারও বলে কী পরিমাণ ভয় পেয়েছিল। এবার কিছুটা অবাক হয় রনি। বলে- এত ভয় পাওয়ার কী আছে, বুঝলাম না তো! আমি অনেকবার বেল বাজিয়েছি, তুমি পরিচয় জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও কথা বলিনি, ডোরহোলে দেখা দিইনি। এইসব কর্মকা-ের জন্য তো তোমার রাগ হওয়া উচিত ছিল। বিরক্ত হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু ভয় কেন?

সুমি আমতা আমতা করে। রনি বুঝতে পারে সে কিছু লুকাচ্ছে। তাই জানতে চায় কী হয়েছে। সুমি হাসি দিয়ে আমতা আমতা ভাব আড়াল করতে চায়। কিছুটা সফলও হয়। কিন্তু রনির চোখ-মুখ থেকে সন্দেহ দূর হয় না। সে তার একটা হাত চেপে ধরে বলে- আমি শিওর, কিছু হয়েছে। তোমাকে বলতেই হবে কী হয়েছে। নইলে তোমার সঙ্গে আমি কথা বলবো না। এমনকি এখন জামা-কাপড়ও চেঞ্জ করবো না। যেভাবে এসেছি, সেভাবে বের হয়ে যাবো।

সুমি এবার বলে দেয় সবকিছু। আর রনি বসে থাকে স্তব্ধ হয়ে। অনেকক্ষণ পর সে কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে নিয়ে বলে- বিষয়টা অবশ্যই টেনশনের। ভয় পাওয়ার মতো। তবে আমি আপাতত ভয়ও পেতে চাই না, টেনশনও করতে চাই না। কেন জানো? কারণ, উপরের তলাগুলোতে ইয়াং মেয়েরা থাকে। আবার ভাবিরা যারা আছে, তারাও ইয়াং। কেউ কেউ তো চোখ ধাঁধানো সুন্দরী। অতএব ছেলেপেলেরা এখানে ওখানে দাঁড়িয়ে হাঁ করে তাকিয়ে থাকতেই পারে।
: ও, তাহলে সব তলার আপা-ভাবিদের খোঁজ-খবর অলরেডি নেওয়া হয়ে গেছে? সুমি হঠাৎ করেই মারে খোঁচাটা। যে খোঁচার জন্য তৈরি ছিল না রনি।
: প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর নেওয়া খারাপ কিছু না।
: বুঝতে পেরেছি, তলেতলে অনেক কিছুই হয়। শুধু আমি জানি না।
: তোমাদের, মানে মেয়েদের এই এক সমস্যা। কোনও কারণ ছাড়াই ছেলেদের সন্দেহ করো।
: কারণ ছাড়া কোনও মেয়ে তার হাজব্যান্ডকে সন্দেহ করে না। এই যে আমি সন্দেহটা করছি, ইম্পোর্টেন্ট কারণ আছে বলেই করছি।
: তা সেই ইম্পোর্টেন্ট কারণটা কী?
: বোঝো না কারণটা কী? অ্যাই, অন্যান্য তলার ইয়াং মেয়েরা আর ভাবিরা চোখ ধাঁধানো সুন্দরী না বান্দরী, সেটা তুমি জানো কীভাবে? তুমি না সারাদিন অফিসে থাকো? আরে, জানার তো কথা ছিল আমার। কারণ, আমি সারাদিন বাসায় থাকি। কই, আমি তো এই ব্যাপারে কিচ্ছু জানি না! কী, চুপ মেরে আছো কেন? কথা বলো!

রনি পানসে হাসি হাসে। বলে- আমার আর কথা বলার দরকার কী! সব কথা তো তুমিই বলে ফেলেছো। আর তোমার বলার স্পিডও ভাল। এদিকে আমার শোনার ধৈর্যও ভাল। হাতে সময়ও আছে পর্যাপ্ত। অতএব বলতে থাকো। তারপর যখন বলা শেষ হবে, আমাকে অল্প একটু সুযোগ দিও। আমি শুধু একটা কথা বলবো। আর যদি মনে করো সুযোগ দেবে না, তাহলে বলবো না। কথাটা হজম করে ফেলবো। আমার আবার হজমশক্তি ভাল।

সুমি সুযোগ দেয়। রনি তাকে ধন্যবাদ জানায়। আর বলে- আমি একজন কামলা মানুষ। আমার কাজ হচ্ছে সকাল সকাল ব্যাগটা নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যাওয়া। আবার সন্ধ্যার দিকে ফেরত আসা। যেহেতু আমার আর কোাথাও যাওয়ার নেই, কিচ্ছু করার নেই। তো আমি যখন সকাল সকাল অফিসের উদ্দেশ্যে বিল্ডিং থেকে বের হই আর সন্ধ্যায় বিল্ডিংয়ে ঢুকি, তখন একজন চক্ষুষ্মান মানুষ হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই আমার চোখ চলে যেতে পারে বিভিন্ন তলায়। কী, পারে না?
: কথা শেষ করো।
: কেন মাননীয় স্পিকার? আমার কি টাইম শেষ?
: ফাজলামি করবে না তো!
: ঠিক আছে, করলাম না। যা বলছিলাম। তো কামলা খাটতে যাওয়ার সুবাদে আমি যেহেতু রোজ বিল্ডিং থেকে বের হই আর চক্ষুষ্মান হওয়ার সুবাদে যেহেতু আমার চোখ বিভিন্ন তলায় চলে যেতেই পারে, অতএব আমি দেখতেই পারি কোন তলায় কে থাকে, কে কতটা সুন্দরী বা বান্দরী। কিন্তু তুমি দেখতে পারো না। কেন দেখতে পারো না? কারণ, তুমি বিল্ডিং থেকে বের হও না। সামনে বা পেছনে, এককথায় কোনও জায়গায় দাঁড়িয়ে বিল্ডিংয়ের দিকে তাকাও না, তলায় তলায় চোখ ঘোরাও না। আবার বাসা থেকে বের হয়ে যে বিভিন্ন ফ্ল্যাটে আড্ডা দিতে যাবে, তাও করো না। তাহলে পুরো ব্যাপারটার অর্থ কী দাঁড়ালো?

সুমি বুঝে গেছে অর্থ কী দাঁড়িয়েছে। আরও বুঝে গেছে তার সন্দেহটা অমূলক ছিল। খোঁচাটা বাড়াবাড়ি ছিল। তাই সে মাথা নিচু করে ফেলে। রনি তাকে কথা বলার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু সে মাথা সোজা করে না। এবার রনি তার দিকে খানিকটা চেপে বসে বলে- শুধু শুধু কাউকে সন্দেহ করতে হয় না। সেটা হাজব্যান্ড হোক আর অন্য সাধারণ কোনও মানুষই হোক। আশা করি কথাটা মনে থাকবে।
: অবশ্যই মনে থাকবে।
: খুব ভাল। তবে আরও ভাল হতো ম্যাডাম, যদি খানাপিনার এন্তেজাম করতেন। ক্ষুধায় পেট জ্বলে যাচ্ছে তো!

এবার বসা থেকে লাফিয়ে ওঠে সুমি। আর দুঃখ প্রকাশ করতে থাকে বাংলা এবং ইংরেজিতে। আসলে আলাপে আলাপে সে ভুলেই গিয়েছিল খাবার পরিবেশনের কথা। রনি কাপড় পাল্টায়। আর সুমি টেবিল সাজিয়ে ফেলে মুহূর্তেই। তারপর স্বামী খাওয়া শুরু করলে সে জানায় বাথরুমে পা পিছলে পড়ে যাওয়ার ব্যাপারটা ছিল পুরোপুরি মিথ্যা। সত্য হচ্ছে…
রনি জানায়, সত্যটা কী, তা সে বুঝতে পেরেছে। অতএব ব্যাখ্যার দরকার নেই। এরপর জানায় একটা দুঃসংবাদ নাকি আছে। বুক ভেঙে যাওয়ার মতো দুঃসংবাদ। সুমি চুপসে যায়। সে রনির পাশের চেয়ারে বসে পড়ে দুঃসংবাদটা শোনার জন্য।

চলবে….

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন