বিজ্ঞাপন

ঈদ-নববর্ষ ঘিরে সেজেছে পাহাড়, অধিকাংশ হোটেল-মোটেলে বুকিং শেষ

April 9, 2024 | 1:18 pm

প্রান্ত রনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাঙ্গামাটি: ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে টানা পাঁচ দিনের ছুটি মিলেছে চাকরিজীবীদের। উৎসব-ছুটিকে কেন্দ্র করে যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি-অবসাদ কাটাতে অনেকেই ছুটে আসেন পাহাড়ে। তবে এবার দু’টি উৎসব ঘিরে টানা পাঁচ দিনের ছুটির ফলে পাহাড়ি জেলা রাঙ্গামাটিতে রেকর্ডসংখ্যক পর্যটক সমাগম প্রত্যাশা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা ছুটিতে পর্যটক সমাগমের প্রত্যাশায় আগাম প্রস্তুতি সেরে নেওয়া হয়েছে। সাজসজ্জা থেকে শুরু করে হোটেল ব্যবস্থাপনায় নতুনত্ব এনেছে অনেকেই। ইতোমধ্যে জেলা শহর ও সাজেক ভ্যালি পর্যটনকেন্দ্রের হোটেল-রিসোর্ট-কটেজের ৭০-৮০ শতাংশ রুম বুকিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। ট্যুর গাইডরা জানিয়েছেন, পর্যটকদের সেবায় তারা বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র ঘুরে দেখানোর জন্য নানা রকমের প্যাকেজ চালু করেছেন।

রাঙ্গামাটি জেলা শহর এবং আশপাশের পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে- ঝুলন্ত সেতু, পলওয়েল পার্ক, আরণ্যক, কাপ্তাই হ্রদ, নীলাঞ্জনা বোট ক্লাব, ডিভাইন লেক, বার্গী লেকভ্যালি, বেরাইন্না, বড়গাঙ, ইজোর, হিল তাজ, রাজবন বিহার, দৃষ্টিনন্দন আসামবস্তি-কাপ্তাই সংযোগ সড়ক। এ ছাড়াও রয়েছে- কাপ্তাই উপজেলার প্রশান্তি পার্ক, জুম রেস্তোরাঁ, প্যারাডাইস, নিসর্গ পড হাউজ, বিলাইছড়ির নীলাদ্রি রিসোর্ট প্রভৃতি। আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলার বাঘাইছড়ির সাজেক ভ্যালি উপত্যকায় সবচেয়ে বেশি পর্যটক সমাগম ঘটে বছরজুড়েই।

বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখের আমেজ সারাদেশের চেয়ে পাহাড় একটু বেশিই সাজে। পাহাড়ের বিভিন্ন নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠী তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি অনুযায়ী আলাদা আলাদাভাবে বাংলা নববর্ষকে বিজু, বৈসু, সাংগ্রাই, সাংক্রান, বিষু ও বিহুসহ বিভিন্ন নামে পালন করে থাকে। এটি পাহাড়ের প্রধান সামাজিক উৎসবও। যে কারণে নববর্ষে উৎসব আমেজে মেতে উঠে পুরো পাহাড়।

বিজ্ঞাপন
ছবি: রাঙ্গামাটির সাজেক ভ্যালি পর্যটনকেন্দ্র

ছবি: রাঙ্গামাটির সাজেক ভ্যালি পর্যটনকেন্দ্র

জানতে চাইলে রাঙ্গামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবারে দুটি উৎসব একত্রিত হয়েছে। একদিকে ঈদ, আরেকদিকে নববর্ষ; যেটা রাঙ্গামাটিতে বিজু উৎসব নামে পালিত হয়। একই সময়ে দুটি উৎসবের কারণে আমরা প্রত্যাশা করছি রাঙ্গামাটিতে আশানুরূপ পর্যটকে সমাগম ঘটবে। তাদের সেবায় আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের ৮০ শতাংশ রুম বুকিং হয়ে গেছে।’

জেলা শহরের রিজার্ভবাজার এলাকায় অবস্থিত হোটেল মতিমহলের স্বত্ত্বাধিকারী মো. শফিউল আজম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদ ঘিরে আমাদের হোটেলের বুকিং বেশ ভালো। এখন পর্যন্ত ৭০-৮০ শতাংশ রুম বুকিং আছে। আশাকরি এবারের ঈদে হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী ছাড়াও খাতসংশ্লিষ্টরা ভালো ব্যবসা করবেন।’

রাঙ্গামাটি জেলা আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মঈনুদ্দিন সেলিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরের চেয়ে এবারের ঈদের ছুটিতে রাঙ্গামাটিতে রেকর্ডসংখ্যক পর্যটকের সমাগম হবে আমরা প্রত্যাশা করছি। ইতোমধ্যে জেলা শহরে অবস্থিত হোটেল-মোটেলগুলোতে ৬০-৭০ শতাংশ রুম বুকিং হয়ে গেছে। ঈদ ঘিরে আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীরা ভালো ব্যবসা করতে পারবেন আশা করি।’

বিজ্ঞাপন

মেঘ পাহাড়ের উপত্যকা রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালি। সাজেক ভ্যালি পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রে গড়ে উঠেছে শতাধিক রিসোর্ট-কটেজ। ঈদ ও নববর্ষ উৎসবে রেকর্ড পর্যটক সমাগমের প্রত্যাশা করছেন সাজেকের ব্যবসায়ীরাও। সাজেক কটেজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিংথাং জাওয়া লুসাই জেরি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সমিতির নিবন্ধনভুক্ত ১১২টি রিসোর্ট-কটেজ রয়েছে। আগামী ১২-১৩ এপ্রিলের জন্য বুকিং রয়েছে, আশা করি এই দু’দিন শতভাগ বুকিং থাকবে। দু’টি উৎসব একই সময়ে হওয়ার কারণে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক আসতে পারেন সাজেকে।’

ছবি: রাঙ্গামাটির সাজেক ভ্যালি পর্যটনকেন্দ্র

ছবি: রাঙ্গামাটির সাজেক ভ্যালি পর্যটনকেন্দ্র

জানতে চাইলে রাঙ্গামাটি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. আব্দুল ওয়াদুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাঙ্গামাটি জেলায় এবার পর্যটক সমাগম বাড়বে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। তবে বান্দরবানের উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে তার কিছুটা প্রভাব অবশ্যই পাহাড়ের পর্যটনশিল্পে পড়বে। যদিও সেটি খুব বেশি পরিমাণে না। নিরাপত্তাজনিত শঙ্কা থেকেই পর্যটক আগমন কিছুটা কম হতে পারে। যে কারণে কক্সবাজারে পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে। তবে বান্দরবান থেকে খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটিতে পর্যটক বেশি হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাঙ্গামাটির পর্যটন সেক্টরের উন্নয়নে কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের রাউজানের কারণে আমরা অনেকাংশে পিছিয়ে আছি। খাগড়াছড়ি থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের জন্য সরাসরি বাসের সুযোগ থাকলেও রাঙ্গামাটির ক্ষেত্রে নেই। সরাসরি বাস যাতায়াতের সুযোগ থাকলে পর্যটক আরও বাড়ত।’

অনেকেই চট্টগ্রামে এসে আর রাঙ্গামাটিতে বেড়াতে আসতে চান না। তবে স্থানীয় উদ্যোগ ও শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাসহ নানাভাবেই এখানকার উদ্যোক্তা ও খাতসংশ্লিষ্টরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন