বিজ্ঞাপন

আজ আমাদের ঈদের দিন—নাবিক আইনুলের মা

April 14, 2024 | 1:00 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো : ‘আপনারা ঈদের দিন জিজ্ঞেস করেছিলেন আনন্দ করছি কি না। ঈদের দিন আমরা আনন্দ করতে পারিনি। আজ আমাদের ঈদের দিন। আমাদের ছেলেরা মুক্তি পেয়েছে। আজ থেকে আমাদের ঈদের আনন্দ শুরু। যেদিন আমার ছেলে আমার বুকে আসবে, সেদিন আরও বেশি আনন্দ হবে।’

বিজ্ঞাপন

সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া বাংলাদেশি নাবিক আইনুল হকের মা লুৎফে আরা বেগম সন্তানের মুক্তির আনন্দে এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

শনিবার (১৩ এপ্রিল) মধ্যরাতে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ থেকে নেমে যায় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। মুক্ত হয় জাহাজ, মুক্ত হন জিম্মি ২৩ নাবিক। রোববার ভোরে জিম্মি জাহাজের মালিকপক্ষ কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম সারাবাংলাকে বিষয়টি জানান।

বিজ্ঞাপন

নাবিকদের মুক্তির খবরে দেশে তাদের পরিবারে খুশির বন্যা বইছে। নগরীর আসকার দিঘীর পাড়ে নাবিক আইনুল হকের বাসায় যেন ঈদের আনন্দ লেগেছে।

আইনুলের মা লুৎফে আরা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আইনুলের সঙ্গে এখনও কথা হয়নি। তার সঙ্গে কথা বলার জন্য মনটা ছটফট করছে। তবে জানতে পেরেছি, তারা ভালো আছে, সুস্থ আছে। জলদস্যুরা তাদের সুস্থ অবস্থায় মুক্তি দিয়েছে।’

‘আমাদের খুব ভালো লাগছে, খুশি লাগছে। যখন বন্দি ছিল, ফোন এলেই বুকের ভেতর ছটফট করে উঠত। কোনো খারাপ খবর বোধহয় পাচ্ছি ! আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া, আমাদের ছেলেরা সুস্থভাবে মুক্ত হয়েছে। আজ আমাদের ঈদের দিন।’

বিজ্ঞাপন

লুৎফে আরা বেগম আরও বলেন, ‘আজ পহেলা বৈশাখ। নববর্ষের আনন্দের মধ্যে ছেলের ‍মুক্তির সুসংবাদ পেয়েছি। আমাদের জন্য ডবল আনন্দ। আমাদের জন্য আজ ঈদের আনন্দ, পহেলা বৈশাখের আনন্দ। শুনেছি, দুবাই থেকে তারা সরাসরি চট্টগ্রামে আসবে। ছেলের জন্য অপেক্ষা করছি।’

মুক্তির পর নাবিক পরিবারের সব সদস্য এখনও তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। কেউ কেউ যোগাযোগ করেছেন।

যোগাযোগ হওয়া এমন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার বিকেলে ছোট বিমানে করে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর পাশে ডলারভর্তি ব্যাগ ফেলা হয়। স্পিডবোটে অপেক্ষমাণ জলদস্যুদের কয়েকজন পানি থেকে ব্যাগ সংগ্রহ করেন। এর প্রায় আটঘন্টা পর বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা ৮ মিনিটে জলদস্যুরা জাহাজ থেকে সরে যায়।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, জলদস্যুরা নাবিকদের জাহাজের ডেকে এনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করায়। চারপাশে অস্ত্র তাক করে ছিল জলদস্যুরা। উড়োজাহাজ থেকে সব নাবিক জীবিত ও অক্ষত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরই ডলারভর্তি ব্যাগ ফেলা হয়।

কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জলদস্যুরা নেমে যাবার পরই জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হারামিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়।

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি গত ১২ মার্চ বেলা ১২টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। ওই জাহাজের ২৩ নাবিককে জিম্মি করা হয়। জাহাজটি কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হারামিয়া বন্দরের দিকে যাচ্ছিল।

নাবিকেরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুরুদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।

এর আগে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরবসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের আরেকটি জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

সারাবাংলা/আরডি/এনইউ

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন