বিজ্ঞাপন

বিদেশি ঋণের বেশিরভাগই সুদাসল পরিশোধে ব্যয় হচ্ছে

April 22, 2024 | 8:49 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটের কারণে বিদেশি ঋণের প্রতি সরকারের ঝোঁক বেড়েছে। পাশাপাশি বিগত বছরগুলোর নেওয়া ঋণ পরিশোধের চাপও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। একইসঙ্গে বাড়ছে বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ। ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশকে এখন তুলনামূলকভাবে বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। ফলে প্রতিবছর সরকার যে বিদেশি ঋণ নিচ্ছে, তার বেশিরভাগই সুদাসলসহ পরিশোধেই ব্যয় হচ্ছে।— অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২২ এপ্রিল) চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের (জুলাই- মার্চ) বৈদেশিক ঋণ সহায়তার তথ্য প্রকাশ করে ইআরডি। এতে দেখা যায়, প্রথম ৯ মাসে সরকার সুদাসলসহ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করেছে ২৫৭ কোটি ডলার। টাকার অংকে যা ২৮ হাজার ২৮১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ ) সরকার ঋণ পরিশোধ করেছে ২৮ হাজার ২৮১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ১৬ হাজার ৬৭৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ। যার বেশিরভাগ সুদ পরিশোধ ব্যয় হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ঋণের বিপরীতে শুধু সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১১ হাজার ৬০১ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় তিনগুণ। আর ডলারের হিসেবে সুদ পরিশোধ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। মূলত টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আগের বছরগুলোতে নেওয়া ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে বেশি।

বিজ্ঞাপন

ইআরডির তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সরকার যে ঋণ পরিশোধ করেছে তার মধ্যে আসল ঋণ ১৬ হাজার ৬৭৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। বাকি ১১ হাজার ৬০১ কোটি কোটি ৮৩ লাখ টাকা সুদ বাবদ দিতে হয়েছে। কিন্তু গত অর্থবছরের একই সময়ে সরকারের ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ১৬ হাজার ৯৬৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

এর মধ্যে আসল ছিল ১২ হাজার ২০২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আর সুদ পরিশোধ করতে হয়েছিল ৪ হাজার ৭৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরের যেখানে ৪ হাজার ৭৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা সুদ দিতে হয়েছিল, সেখানে চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে তার প্রায় দ্বিগুণ।

এই সময়ে ডলারে হিসেবে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ২৫৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার। যা আগের বছরে ছিল ১৭৩ কোটি ৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৮৩ কোটি ডলার। এই সময়ে ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১০৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। আগের বছর ছিল ৪৮ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। অর্থাৎ ডলারের হিসেবে সুদ পরিশোধ বেড়েছে ৫৭ কোটি ডলার।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় হয়েছে ৫৬৩ কোটি ১৬ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫৩৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে অর্থছাড় বেড়েছে ২৬ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। ঋণের অর্থ ছাড়া বাড়লেও কমেছে অনুদানের অর্থ। অর্থবছরের ব্যবধানে যেখানে ঋণের অর্থছাড় বেড়েছে প্রায় ৩০ কোটি, সেখানে অনুদান কমেছে প্রায় ২ কোটি ডলার।

অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে এডিবি। এ সংস্থা অর্থছাড় করেছে ১৪০ কোটি ২৭ লাখ ডলার। জাপান ছাড় করেছে ১৩৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার, বিশ্বব্যাংক ছাড় করেছে ৯৬ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। এ ছাড়া, রাশিয়া ৮০ কোটি ৭৫ লাখ ডলার এবং চীন ৩৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার ছাড় করেছে। ভারত দিয়েছে ১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। বাকিগুলো অন্যান্য দাতা সংস্থা থেকে এসেছে।

ঋণ পরিশোধ এবং অর্থছাড়ের মতোই চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ প্রতিশ্রুতিও বেড়েছে। ইআরডির তথ্যানুযায়ী, উন্নয়ন সহযোগীরা এই সময়ে ৭২৪ কোটি ২১ লাখ ডলার ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩০৭ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রতিশ্রুতি বেড়েছে ৪১৬ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে ৯৯২ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে বলে জানা গেছে।

ইআরডির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের নয় মাসে সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে এডিবির কাছ থেকে। সংস্থাটির কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ২৬২ কোটি ২ লাখ ডলার। এ ছাড়া জাপানের কাছ থেকে ২০৩ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। বিশ্বব্যাংক ১৪১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অর্থছাড় করলেও রাশিয়ার চীন এবং ভারতের কাছ থেকে অর্থবছরের নয় মাসেও কোনো প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন