বিজ্ঞাপন

‘ইএফডি মেশিন বসাতে দ্রুতই উদ্যোগ নেওয়া হবে’

April 23, 2024 | 9:05 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ভ্যাট থেকে রাজস্ব আয় বাড়াতে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দ্রুত ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বসানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) আয়োজিত আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন আইসিএমএবি’র প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আইসিএমএবি’র সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কাউন্সিল সদস্য আরিফ খান এফসিএমএ। অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ. মনসুর ও এফবিসিসিআই’র সভাপতি মাহবুবুল আলম প্রমুখ।

অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ইএফডি মেশিন আরও দ্রুততার সঙ্গে দরকার। এই খাতে বরাদ্দের জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে সুপারিশ করব।’ প্রসঙ্গত, ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ করে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। দীর্ঘ দিন ধরে চলছে এই প্রকল্প। তবে এখন পর্যন্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে খুব অল্প সংখ্যক এই মেশিন বসেছে। অনুষ্ঠানে দ্রুত ইএফডি মেশিন বসানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, ‘অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে ক্যাপিটাল মার্কেটের দিকেও যেতে হবে। শুধুমাত্র ব্যাংকের উপর নির্ভর করলে হবে না। সবকিছু ব্যাংক সেক্টরের উপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। আর বাজেট প্রণয়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অংশীদারিত্ব বেড়েছে। আগে বাজেটের অর্থ ব্যবহার করতে সেপ্টেম্বর অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। এখন জুলাইয়ের এক তারিখ থেকেই আইবাস’র কারণে অর্থ ব্যবহার করা যাচ্ছে। ভ্যাট চালান আপডেটেড হয়েছে, ট্যাক্স রিটার্ন অনলাইনে দেওয়ার কারণে রিটার্ন দাখিল বেড়েছে।’

আসন্ন বাজেটের অগ্রাধিকার প্রসঙ্গে লিখিত বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে সরবরাহ ব্যবস্থা (অবকাঠামো ও প্রযুক্তি খাত ইত্যাদি) শক্তিশালী রাখতে হবে। ফাস্ট-ট্র্যাক অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সম্পদের যোগান দিতে হবে। চলমান অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণ ও কৌশলগত উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়ক হয় এরকম সুনির্দিষ্ট কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত এবং ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সমন্বয় করতে হবে।’

অগ্রাধিকার প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘মুদ্রার বিনিময় হার কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে রাখতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতা সম্প্রসারণ এবং নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে স্বল্প মূল্যে খাদ্য বিতরণ করতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দক্ষতা উন্নয়নসহ সার্বিক মানবসম্পদ উন্নয়ন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, সেবা ও বীজে প্রণোদনা এবং কৃষি পুনর্বাসনে ভর্তুকি অব্যাহত রাখতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবিলায় গৃহীত প্রকল্পে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘রফতানি বাড়ানোর লক্ষ্যে নতুন বাজার অনুসন্ধান করতে হবে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে দক্ষতার উন্নয়ন করতে হবে। রাজস্ব খাতে পরিকল্পিত সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং কর আহরণের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী রাজস্ব স্ট্রাটেজি প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

অনুষ্ঠানে পিআরআই’র আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সামষ্টিক অর্থনীতিতে এখন স্থিতিশীলতা দরকার। মুদ্রাস্ফীতি কমাতে হবে, মুদ্রার বিনিময় হারে ভারসাম্য আনতে হবে। রিজার্ভের পতন ঠেকাতে হবে। আমাদের অর্থনীতির অবস্থা খুবই খারাপ। বাজেটে এইসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফরেন রিজার্ভ বাড়ছে না। ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা যাচ্ছে। সারা পৃথিবীতে মূল্যস্ফীতি কমলেও আমাদের এখানে বেড়েছে। কারণ, আমরা নয়-ছয় রেটে আটকে ছিলাম। বাজেটের আকার ছোট, ছোটই করতে হবে। বড় আকারের বাজেট করার সুযোগ নেই।’

আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, ‘কর কাঠামো সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে আইএমএফ। এখন এনবিআর কতটুক করে তা দেখার বিষয়। উন্নত দেশের দিকে যেতে হলে খাতভিত্তিক সংষ্কার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ফরাস উদ্দিন বলেন, ‘মুদ্রা পাচার রোধে অ্যাকশন দরকার। ঘাটতি বাজেটের জন্য সরকারকে সঞ্চয়পত্রে নির্ভরতা বাড়াতে হবে। নতুবা ভবিষ্যতে ঋণ দেওয়া খুব কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে।’

এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘এনবিআরকে দুইভাগে ভাগ করা উচিত। যারা কর সংগ্রহ করবে তারা পলিসিতে থাকবে না। যারা পলিসিতে থাকবে তারা কর সংগ্রহে থাকতে পারবে না। আমার মনে, এখন এই সংষ্কার আনা খুবই প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো চাই। এনবিআরের সব কিছু অটোমেশন করতে হবে। আমরা প্রণোদনা চাই না। আমরা লজিস্টিক পলিসি চাই, যে পলিসিতে খরচ কমবে। ব্যাংকের সুদ হার এখন আমাদের ভাবাচ্ছে, ব্যাংকের রেট ১৮-১৯ এ গিয়ে ঠেকে কিনা সেটা সেটা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’ ব্যাংক রেট সহনীয় না থাকলে কর্মসংস্থা কমে যাবে, বিনিয়োগ কমে যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।

সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন