বিজ্ঞাপন

রানা প্লাজা ধস: ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসন ও মামলা নিষ্পত্তির দাবি

April 23, 2024 | 11:47 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণ প্রদান ও এ ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি আইনজীবীসহ মানবাধিকার কর্মীরা।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভার তারা এসব দাবি জানিয়েছেন। ‘রানা প্লাজা ভবন ধস: ন্যায় বিচারের অপেক্ষায় ১১ বছর’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা আয়োজন করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।

রানা প্লাজা ভবন ধসের ১১ বছর পরও ভুক্তভোগীদের অধিকার আদায় ও ন্যায় বিচার নিশ্চিতের লক্ষ্যে দায়ের করা মামলাগুলোর বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা এবং চলমান মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতার কারণ চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্টদের করণীয় বিষয়ে সভাটি আয়োজন করা হয়।

মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এম এ আউয়াল। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক এবং ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর বিমল সমাদ্দার।

বিজ্ঞাপন

মতবিনিময় সভার শুরুতে রানা প্লাজায় নিহত শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ব্লাস্টের পরিচালক (আইন) মো. বরকত আলী। মতবিনিময় সভার মূল বিষয় নিয়ে উপস্থাপনা তুলে ধরেন ব্লাস্টের সিনিয়র স্টাফ আইনজীবী সিফাত-ই-নূর খানম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ও শ্রম আপিল ট্রাইবুনালের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল বলেন, ঢাকা জজ কোর্টের মামলার ৫৯৪ জন সাক্ষ্যগ্রহণের প্রতিবন্ধকতাকে নিরসন করার জন্য কেবল গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ করেও মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব। সর্বোপরি আদালতের সদিচ্ছা থাকলে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা যাবে। তিনি তার বক্তব্যে শ্রম আদালতে চলমান ১১টি মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য আশ্বস্ত করেন।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন চারটি রিট মামলা রয়েছে। এর কোনোটিরই শুনানি গত বছরের আগে শুরু হয়নি। তার মধ্যেও আমরা আশা করছি, খুব শিগগিরই এই রিটগুলোর বিপরীতে উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশনা পাওয়া যাবে। শ্রমিকদের সুরক্ষা থেকে শুরু করে সামগ্রিক বিষয়গুলো নিশ্চিত করার সুপারিশ করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

ঢাকার অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর বিমল সমাদ্দার বলেন, ফৌজদারি মামলাগুলোর ৫৯৪ জন সাক্ষী, যারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস করছেন তাদের আদালতে হাজির করাটা অনেক বড় প্রতিবন্ধকতা। তাদের আদালতে যাতায়াতের ভাতা সরবরাহ করা রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ‍হিসেবে ব্যবস্থা করা কষ্টসাধ্য।

বক্তব্যে বিমল সমাদ্দার সুশীল সমাজ সংগঠনের প্রতি সাক্ষীদের আদালতে উপস্থিতি নিশ্চিতের জন্য আদালতকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে আহ্বান জানান। একই সঙ্গে শ্রমিক নেতাদেরও ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসনের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

সভায় ব্লাস্টের পরিচালক (আইন) মো. বরকত আলী রানা প্লাজায় নিহত শ্রমিকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও আহত শ্রমিকদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। এ সময় তিনি সভার উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপটও বর্ণনা করেন।

মো. বরকত আলী বলেন, ২০১৩ সালের ঘটনাটি কি হত্যাকাণ্ড নাকি দুর্ঘটনা, তা নিয়ে অনেকের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও ঘটনা পর্যবেক্ষণে একে হত্যাকাণ্ড বললে ভুল বলা হয় না। আইনের সঠিক প্রয়োগের অভাব এবং প্রয়োজনীয় আইন না থাকার কারণে এ ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়তই হয়ে আসছে। ১১ বছরের পরও নিহত শ্রমিকের পরিবার এবং আহত শ্রমিক এখনো আইনি ক্ষতিপূরণ পায়নি। এ ক্ষেত্রে তাদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত ও ন্যয় বিচার পাওয়ার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের দায়িত্বগুলো নিয়ে সবার সচেতন এবং সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে উপস্থিত রানা প্লাজা ভবন ধসের ভুক্তভোগী নিলুফা বেগম, ‍শিলা বেগম, মিনু বেগম ও দয়াল সূত্রধর তাদের অভিজ্ঞতা ও দাবির কথা বলতে গিয়ে এর সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তির বিধান এবং আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানান।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় ও ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে আরও বক্তব্য দেন লেবার কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) সাধারণ সম্পাদক মহসিন মজুমদার, ট্রাস্ট ফর ইনজুরড ওয়ার্কার্স মেডিকেল কেয়ার ইনক্লুডিং রানা প্লাজা ওয়ার্কার্সের (টিআইডব্লুউএমসি) ট্রাস্ট কো-অর্ডিনেটর মো. শাহরিয়ার রনি, শ্রমিক নেতা তাসলিমা আখতার, মানবাধিকার কর্মী নজরুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন প্রমুখ।

সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন