বিজ্ঞাপন

পাহাড় কেটে রেস্টুরেন্ট বানানোর অভিযোগ কুবি প্রক্টরের বিরুদ্ধে

May 5, 2024 | 2:18 pm

মোহাম্মদ রাজীব, কুবি করেসপন্ডেন্ট

কুমিল্লা: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) নতুন ক্যাম্পাসের সামনে তিন তলাবিশিষ্ট রেস্টুরেন্ট বানাতে লালমাই পাহাড়ের টিলা কাটার অভিযোগ উঠেছে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী রানার বিরুদ্ধে। ওই রেস্টুরেন্ট তৈরির জায়গা সমতল করার জন্য প্রায় ১৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট উচ্চতার পাহাড় কাটা হয়েছে। পাহাড় কাটার জন্য পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রও নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

তবে পাহাড় কাটার ওই অংশটি নিজের জমি নয় দাবি করলেও শিক্ষকদের অভিযোগ—তিনি আত্মীয়ের নামে এই জমি কিনে রেখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যবহার করে এই কাজের তদারকি করছেন প্রক্টর রানা। অভিযোগ রয়েছে, এর আগেও তিনি বিভিন্ন সময় ব্যক্তিগত কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যবহার করেছেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের (সংশোধন) ২০১০-এর ৬-এর ‘খ’ ধারায় বলা হয়েছে, অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে পাহাড় বা টিলা কাটতে হলে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিতে হবে। আইনে পাহাড় বা টিলা কাটার জন্য ছাড়পত্রের বিধান থাকলেও পরিবেশ অধিদফতর থেকে প্রক্টর কোনো অনুমতি নেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাতের আঁধারে চুপিচুপি কাটা হয় পাহাড়। শব্দ হবে তাই ব্যবহার করা হয় না কোনো এক্সকেভেটর। চলতি মে মাসেও রাতের আঁধারে এই পাহাড় কাটার কাজ চলমান রয়েছে। গতকালও ওই স্থানে দায়িত্বরত একজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি এসব তথ্য প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন।

বিজ্ঞাপন

গত রোজায় রাতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বৈদ্যুতিক লাইট জ্বালিয়ে শ্রমিকরা পাহাড় কাটছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শ্রমিক জানান, আমাদের পাহাড় কাটতে বলা হয়েছে তাই পাহাড় কাটছি। ভার্সিটির প্রক্টর স্যারের জায়গা এটা। আমরাতো শ্রমিক তাই বিস্তারিত জানি না। তবে প্রক্টর স্যার প্রায়ই এখানে আসেন।

বিজ্ঞাপন

ওই রেস্টুরেন্টে নাইট গার্ড হিসেবে দায়িত্বরত আছেন কামাল হোসেন। তিনি বলেন, রমজানে রাতে পাহাড় কাটা হয়েছে। কাজ দেখতে প্রক্টর স্যার গাড়ি দিয়ে রাতে আসেন। কাজের খোঁজ নিয়ে আবার চলে যান।

সার্বিক কাজ পরিচালনা করছেন শামিম মিয়া নামে এক ব্যক্তি। তিনি জানান, এখানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন ঠিকাদার কাজ করেছেন। আমি এখন শুধু দেখাশোনা করি। স্যার আমাকে ফোন দিয়ে এটা ওটা করতে বলেন, আমি সে অনুযায়ী কাজ করি। এখানে পাহাড় কাটা হয়েছে জায়গাটা সমান করার জন্য। এখানে আটটি পিলার বসানো হবে।

পাহাড় কাটার অনুমতির বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতর কুমিল্লা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজীব বলেন, পাহাড় কাটার ব্যাপারে আমাদের জানানো হয়নি। আমরা সেখানে লোক পাঠাব এবং পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। যদি প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে ওই ব্যক্তির নামে মামলা হবে।

এছাড়া রেস্টুরেন্টের কাজ তদারকির জন্য প্রক্টর বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুমিল্লা-চ ৫১০০৮৪) নাম্বারের গাড়ি ব্যবহার করছেন। নিয়মানুযায়ী, ওই গাড়ি প্রক্টরিয়াল বডির অফিস সংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করার কথা থাকলেও তা তিনি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন।

বিজ্ঞাপন

চলতি বছরের ২২ এপ্রিল রাত ৯টায় প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী রানাকে গাড়িসহ ওই স্থানে দেখা যায়। এসময় প্রতিবেদকের উপস্থিতি টের পেয়ে সেখান থেকে তিনি সরে যান।

পরে রাত ১০টার দিকে ওই গাড়ির ড্রাইভার আকতারকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, স্যার সেখানে রেস্টুরেন্ট দেখতে গেছেন। আমি এখানে জড়িত না। আমাকে প্রেশারও দেয় না। আমি কোনো সহযোগিতাও করিনি। আমাকে স্যার বলছে তাই গেছি।

এ বিষয়ে জানতে কুবির পরিবহন প্রশাসক অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন চন্দ্র মজুমদারকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি ব্যস্ততার কথা বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

তবে কুবি পরিবহন পুলের সেকশন অফিসার মো.জাহিদুল ইসলাম বলেন, এই গাড়ি উনার (প্রোক্টরের) অধীনে থাকে। প্রক্টরিয়াল বডি অফিস সংক্রান্ত কাজে এই গাড়ি ব্যবহার করার কথা। এখন উনি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন কিনা আমার জানা নেই।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর ও বর্তমান শিক্ষক সমিতির কার্যকরী সদস্য মোহাম্মদ আইনুল হক বলেন, প্রক্টরিয়াল বডির কাজে এবং উপাচার্যের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে এই গাড়ি ব্যবহার করতে হবে। অন্য কাজে ব্যবহার করলে সেটা অপরাধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যদি এসব ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িয়ে যায় তাহলে ওই শিক্ষকের মাঝে আর শিক্ষকতার মূল্যবোধ থাকে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারিত অংশে তিনি ভূমি অধিগ্রহণের আগে বিভিন্ন দাগে নামে বেনামে জমি কিনেছেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ওমর সিদ্দিকী বলেন, এটা আমার জায়গা না। কেউ যদি বলে থাকে এটা আমার জায়গা তাহলে তারা জানে না। আমি সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি নিয়ে যাইনি। তোমার কাছে ভিডিও থাকলে তুমি নিউজ করে দাও। ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ঘাটাঘাটি করো না।

সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএফ আবদুল মঈনকে মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এর আগে চলতি বছরের মার্চে বাস্কেটবল গ্রাউন্ড তৈরির জন্য পাহাড় কাটে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে সারাবাংলায় সংবাদ প্রকাশের পর চাপের মুখে ওই কাজ স্থগিত করে রাখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সারাবাংলা/আইই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন