বিজ্ঞাপন

উন্নয়ন প্রকল্পে কাটা পড়ল হাজারও গাছ, উজাড় আলতাদীঘি উদ্যান

May 7, 2024 | 5:34 pm

আব্দুর রউফ পাভেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

নওগাঁ: এই তো কিছুদিন আগেও ছিল সবুজের আভা। কিন্তু এখন যেন এক মরুভূমি। বলছি নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যানের কথা। সম্প্রতি উদ্যানের দীঘি খনন, ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ ও গাছ রোপণসহ বেশ কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ১৬ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। যা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কাটা পড়ে নানা প্রজাতির হাজারো গাছ।

বিজ্ঞাপন

‘আলতাদীঘি পুনঃখননের মাধ্যমে আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যানের জীববৈচিত্র পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ’ প্রকল্পের জন্য দীঘিটির চারদিকের কয়েক হাজার গাছ কেটে ফেলার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

উদ্যানের উন্নয়ন কাজে গঠিত কমিটির সদস্য কায়েস উদ্দিনের দাবি, আলোচনা সভায় গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্তু হঠাৎ করে আলতাদীঘিতে এসে দেখি গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে।

বন বিভাগ বলেছে, সামাজিক বনায়নের আওতায় ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি প্রজাতির চারা দ্বারা বনায়নকৃত গাছগুলো অপসারণ করে স্থানটি দেশীয় প্রজাতির চারা দ্বারা প্রতিস্থাপন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আলতাদীঘির খননকৃত মাটি দিয়ে নিচু স্থান ও পাড় সংস্কার করার জন্য দীঘির চারপাশে বিদ্যমান ৫৪৬টি ইউক্যালিপটাস ও ৪৫৬টি আকাশমনি গাছ যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ১৫টি লটে ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার ২৫৬ টাকা টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়।

বিজ্ঞাপন

তবে ধামইরহাটের বনবিট কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলছেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। নতুন বনায়ন হবে, একটা গাছ তো আর সারাজীবন থাকবে না। এটি সামাজিক বনায়নের অওতায় স্বল্প মেয়াদি সৃজিত উডলট বাগান।

বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান বলেন, উদ্যানের মধ্যে অবস্থিত দীঘিটি দীর্ঘদিন ধরে খনন ও সংস্কার না করায় তার গভীরতা কমে গিয়েছিল। সেখানে এক ফুটের উচ্চতার নিচে পানি ছিল। চারপাশের পাড়গুলো ভেঙে যাওয়ায় দীঘিটি পুনঃখনন ও পাড় সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছিল।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে ৬৪৯.৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বন অধিদফতর বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের মাধ্যমে দীঘিটির খনন কার্যক্রমের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। খননের মাটি দিয়ে দীঘিটির চারপাশের পাড় মেরামত ও উঁচুকরণ করার জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। আলতাদীঘির পাড়জুড়ে সামাজিক বনায়নের আওতায় ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি প্রজাতির চারা দ্বারা বনায়নকৃত গাছগুলি অপসারণ করে স্থানটি দেশীয় প্রজাতির চারা দ্বারা প্রতিস্থাপন করার পরিকল্পনা করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুকুরের খননকৃত মাটি দিয়ে নিচু স্থান ও পাড় সংস্কার করার জন্য আলতাদীঘির চারপার্শ্বে বিদ্যমান ৫৪৬টি ইউক্যালিপটাস ও ৪৫৬টি আকাশমনিগাছ যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ১৫টি লটে ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার ২৫৬ টাকা টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রয় করা হয়েছে। এ অর্থ সংশ্লিষ্ট ১৬ জন উপকারভোগীগণের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।’

রফিকুজ্জামান বলেন, ‘সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে রাজশাহী বরেন্দ্র অঞ্চলের পরিবেশ সুরক্ষা প্রকল্প’র মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন আলতাদীঘির জলাশয়ের চারপাশে দুই মিটার প্রস্থ ইটের সলিং এবং পাকা রাস্তা তৈরি করা হবে। এ জন্য দীঘির পাড়ের ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছগুলি কর্তন করে আলতাদীঘির চারপাশের পাড় মেরামত ও উঁচু করা হয়েছে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নওগাঁ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাফকুল ইসলাম বলেন, ‘সৌন্দর্যবর্ধন বৃক্ষরোপণের মধ্যে নিহিত, নিধনে নয়। আজকের কর্তনকৃত গাছগুলো হতে সময় লেগেছে ২০ থেকে ২৫ বছর। অথচ নিমিষেই তা ধংস করা হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক।’

বিজ্ঞাপন

প্রসঙ্গত, আলতাদীঘির নামকরণে রয়েছে ঐতিহাসিক ঘটনা। জনশ্রুতিতে রয়েছে এ এলাকা ছিল বটু রাজার। জগদ্দলে ছিল সেই রাজার বাড়ি। তার ছিল এক দয়াবতী রানি। রানী একদিন আবদার করলেন, তাকে বড় এক দীঘি খুঁড়ে দিতে হবে। রাজা বললেন, ঠিক আছে। তুমি হাঁটতে শুরু কর। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার পা ফেটে রক্ত বের না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত হাঁটতে হবে। এখান থেকে হাঁটা শুরু করে যেখানে গিয়ে পা থেকে রক্ত বের হবে সেই পর্যন্ত দীঘি কাটা হবে।

রানী হাঁটতে থাকলেন। হাঁটা আর শেষ হয় না। রাজা পড়ে গেলেন চিন্তায়। শেষ পর্যন্ত পাশের দেশে গিয়ে দীঘি কাটতে না হয়। তাই কৌশলে তার সৈন্য দিয়ে রানীর পায়ে আলতা লাগিয়ে বললেন, রানীর পা ফেটে রক্ত বেরিয়েছে। দীঘি সে পর্যন্তই খোঁড়া হল। ধীরে ধীরে সে দিঘি ভরে গেল টলটলে কাকচক্ষু জলে। তাতে পদ্ম ফুটল। প্রজাদের পানীয়জলের কষ্ট শেষ হলো। আর সে থেকেই এর নাম হয়েছে আলতাদীঘি। প্রায় হাজার বছরের স্মৃতি নিয়ে আজও সৌন্দর্য বিলিয়ে যাচ্ছে এ ঐতিহ্যবাহী আলতাদীঘি।

উত্তর-দক্ষিণে লম্বা এ দীঘির দৈর্ঘ্য প্রায় এক কিলোমিটার, চওড়া প্রায় ৪০০ মিটারের মতো। গ্রামের লোকমুখে প্রচলিত আছে বৌদ্ধ যুগের কীর্তি এটি। দীঘির পাড় ঘেঁষে ভারত সীমান্ত। উত্তর পাড়ে দাঁড়িয়ে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া, বিএসএফের সীমান্ত টইল, পাশ্ববর্তী দেশ ভারতকে দেখা খুবই সহজ। আলতাদীঘির পাড়ে দাঁড়ালে মনে হবে অনেকটাই সুন্দরবনের মতো, শীতের সময় অতিথি পাখির আগমন ঘটে।

সারাবাংলা/এনইউ

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন