বিজ্ঞাপন

রাজশাহীর উন্নয়নে ওদের জ্বালা কেন?

May 9, 2024 | 6:24 pm

আয়শা এরিন

পূর্বসূরী দার্শনিক সক্রেটস বলেছিলেন, “রাজনৈতিক পর্যায়ে জ্ঞানের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে প্রশংসনীয় রূপটি হল, শহর এবং মানব সম্প্রদায়ের জন্য সবিশেষ পরিকল্পনা করা। অতি অবশ্যই নগরটিকে সুন্দর করার মধ্যে তা মীমাংসিত হয়।” আলোচিত এমন মতবাদের আলোকে বাংলাদেশের একমাত্র অসাধারণ পর্যায়ের নগরসেবক যখন রাজশাহী শহরকে বদলিয়ে দিলেন, ঠিক তখন আঞ্চলিক রাজনীতির আধিপত্য বিস্তারে অন্ধকারে জন্ম নেয়া একটি সিন্ডিকেট যা ইচ্ছে করছে, যা বন্ধ হওয়া জরুরী।

বিজ্ঞাপন

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, যাকে এই বিশ্বের মধ্যেই অন্যতম শ্রেষ্ঠ মেয়র হিসাবে দেখা হচ্ছে- তার কাজগুলো নিয়ে কাদের গাত্রদাহ? বরং, বাংলাদেশের বিদগ্ধশ্রেণি নানা সময়ে তাকে অনুপ্রেরণা দিতে যেয়ে বলছেন, “আপনি বড় পরিকল্পনা করুন; আশাবাদী চরিত্র হয়ে কাজের উচ্চ লক্ষ্য রাখুন, মনে রাখবেন যে একটি মহৎ, যৌক্তিক ডায়াগ্রাম একবার রেকর্ড করা হলে মারা যাবে না, যেতে পারে না।”

এদিকে গেল বেশ কয়েক বছর ধরে পরিচ্ছন্ন, সবুজ, বাসযোগ্য ও আলোকিত নগরী হিসেবে রাজশাহী মহানগরীর সুনাম দেশ ও বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নগরীর বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করছে। ঠিক সেই সময়ে রাজশাহী মহানগরীর উন্নয়নকে বাঁধাগ্রস্ত করতে একটি শ্রেণি যে মাঠে নেমেছে, তা বোঝাই যাচ্ছে। বিচ্ছিন্নভাবে, সংবাদমাধ্যমে কাজ করা কয়েকজন চিরচেনামুখ প্রেসক্রিপশন হাতে পেয়ে প্রতিবেদন তৈরির উৎসবে মেতে আছেন। অথচ, সাংবাদিকেরা হল, একটি জাতির বিবেক, তারা আত্মবোধে নিয়ন্ত্রিত হয়ে সমাজ সংস্কারকও বটে।

খুব স্পষ্ট করে বলা ভাল যে, নামধারী রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও কতিপয় সাংবাদিকদের যৌথ উদ্যোগে যত চেষ্টাই চলুক, সত্যকে, সুন্দরকে উপেক্ষা করার উপলক্ষ ফলত তৈরি হয় না। তাদের দুষ্টু চিন্তার মৃত্যু হয়। মনে রাখতে হবে, একটি শহরে সর্বদা যে কোন বাসিন্দার জানার চেয়ে বেশি কিছু থাকে এবং একটি মহান শহর সর্বদা অজানা এবং সম্ভাব্য কল্পনাকে উদ্বুদ্ধ করে। একজন খায়রুজ্জামান লিটনের যতগুলো নাগরিক লক্ষ্য আছে, তা শুধু ক্ষণে ক্ষণে দৃশ্যমান হয়, অথচ তার আধুনিক পরিকল্পনাগুলো ও সৎপন্থায় বাস্তবায়নের দিকগুলো নিয়ে জনশ্রেণি জানার সক্ষমতায় থাকে না বলেই, তিনি বিশেষজন।

বিজ্ঞাপন

সমালোচনা করার জন্যও যোগ্যতা থাকতে হয়। যেমন, রাজশাহী বদলে গেল কিভাবে? কারণ হল, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর ওই সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন কে প্রথমত পরিকল্পনাবিদ হতে হয়েছে। তাকে উদ্ভিদবিদ, প্রাণীবিদ, ভূতত্ত্ববিদ হতে হয়েছে। তাকে এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শহরগুলোর সংস্কৃতি বুঝতে তার অনুসন্ধানী মনকে দিনের পর দিন গুরুত্ব দিতে হয়েছে। বলাবাহুল্য, একজন সর্বশ্রেষ্ঠ নগরসেবক কে সকল পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ পেশাজীবিদের সাথে কাজ করতে হয়, তথা ইঞ্জিনিয়ার থেকে উদ্ভিদবিদ- কেহই বাদ থাকে না। চমকপ্রদ কিছু সিদ্ধান্ত দেয়ার মধ্য দিয়ে তখন বিপ্লব সাধিত হয়। জাতীয় পরিকল্পনার অংশ হয়ে নিজের শহর কে এভাবেই ব্যক্তিবিশেষের উদ্যোগে আলাদা হয়ে যায়। অথচ পুরোনো জীর্ণ শহর বদলে যাবে তা মানুষ গ্রহণ করার প্রস্তুতিতেই থাকে না। আজ যেমন রাজশাহীর ছোট্ট শিশুরা পর্যন্ত একটা আইসক্রিমের প্যাকেট যত্রতত্র যেখানে সেখানে ফেলে না ! কেন ফেলে না? নগরপিতা লিটনের নেতৃত্ব ও শৃঙ্খলায় বদলে গেছে সবকিছু। তিনি বাংলাদেশের গর্ব। বিশ্বাস করি, অচিরেই আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিকভাবে তার স্বীকৃতিও মিলবে।

এদিকে রাজশাহী শহরের মধ্যে রেলক্রসিং গুলোতে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনায় অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর সংবাদ মেলে। দুর্ঘটনা রোধ ও নির্বিঘ্নে নাগরিকদের চলাচল নিশ্চিত ও ভবিষ্যৎ যানজট নিরসনে আগামী ১০০ বছরের সূদুর পরিকল্পনায় রাজশাহী মহানগরীতে ৫টি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে। নগরীতে জনগণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, আগামীতে রাজশাহী সিটি আয়তন তিন থেকে চারগুন বৃদ্ধির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। আপাত দৃষ্টিতে ফ্লাইওভারের প্রয়োজনীয়তা কম মনে হলেও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় ফ্লাইওভার নির্মাণ যুক্তিযুক্ত বলেই ধরে নেয়ার সুযোগ আছে। ফ্লাইওভারের কাঠামো দাঁড় হতে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগবে, উক্ত সময়ে ফ্লাইওভার নির্মাণাধীন সড়কে যানবাহন চলাচলে সাময়িক অসুবিধা হতে পারে। রাজশাহীবাসীর পক্ষ থেকে এও দাবী করা হচ্ছে যে, ‘১৯৬৬/৬৮ সালে গ্রেটার রোড নির্মাণকালে উক্ত সড়কের নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে কথা উঠেছিল। বিগত ২০/৩০ বছর থেকে আমরা দেখছি গ্রেটার রোড নির্মাণ কতটা প্রয়োজনীয় ছিল।’

অন্যদিকে রাজশাহী মহানগরীর প্রধান প্রধান গুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহ চারলেন থেকে ছয়লেনে উন্নীত করা হয়েছে। প্রশস্ত সড়ক নেটওয়ার্ক, দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত ও আলোকায়নে নগরীর সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পেয়েছে। রাস্তা প্রশস্ত করতে গিয়ে সড়কে কিছু গাছ কাটা পড়েছে। কর্তনকৃত গাছের দুই থেকে চারগুন বেশি গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। যার ফলে নগরীর সবুজায়ন আরো বৃদ্ধি পাবে। কাজেই যারা অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছেন, জবাব তাদেরকে দেয়াই যায়।

বিজ্ঞাপন

সূত্রমতে, নগরীর সবুজ রূপ ধরে রাখতে ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ ও রোপনকৃত বৃক্ষ নিবিড় পরিচর্যায় বড় করা হচ্ছে। ২০০৯, ২০১২, ২০২১ সালেও বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার এবং ২০১২ ও ২০২১ সালে জাতীয় পরিবেশ পদক লাভ করেছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। বিপুল পরিমাণ বৃক্ষরোপণসহ বহুমুখী উদ্যোগের কারণে ২০১৬ সালে বাতাসে ক্ষতিকারণ ধূলিকণা কমাতে বিশ্বের সেরা শহর নির্বাচিত হয় রাজশাহী।

পুকুর ভরাট রোধকল্পে রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন পুকুরের সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন কাজ করছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। এতে করে সংস্কারের পাশাপাশি পুকুরগুলো বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে।

অপরদিকে জনগণের জোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নিজস্ব অর্থায়নে মুসরইল মৌজায় ১৫ বিঘা ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে জনস্বার্থে কবরস্থান ও ঈদগাহ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। কবরস্থান ও ঈদগাহ নির্মাণের প্রস্তাব ১০/০৪/২০২২ তারিখে সিটি কর্পোরেশনের ১১তম সাধারণ সভায় অনুমোদিত হয়। ০৭/০৯/২০২২ তারিখে স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে ক্রয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন লাভ করে। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন,২০০৯ ধারা ৮০ উপ-ধারা ২ (ঘ) অনুযায়ী ভূমি ক্রয় করতে পারে সিটি কর্পোরেশন। আইন অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশনের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শুরু করে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। কবরস্থান ও ঈদগাহ নির্মাণের ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমের বিষয়ে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

কার্যত জনগণের প্রত্যাশিত পরিকল্পিত নগরায়ন ও উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নেতৃত্বে বর্তমান পরিষদ। অবকাঠামো উন্নয়ন, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, দক্ষ জনগোষ্ঠী ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নৌপথে বাণিজ্য, ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক প্রবাহ বৃদ্ধি, আধুনিক, উন্নত ও স্মার্ট রাজশাহী বিনির্মাণে তার উদ্যোগগুলো চোখে পড়ার মত।

বিজ্ঞাপন

বহুল আলোচিত একটা মতবাদ তুলে ধরি। সেটা হল, ‘বন্দুকগুলি একটি ধারালো জিহ্বাকে সন্তুষ্ট করতে ব্যবহৃত হয়। আমরা সবাই জানি বন্দুক মানুষকে হত্যা করে না, কিন্তু আপনার জিভের একটি ভুল পদক্ষেপ কাউকে হত্যা করতে পারে, বা যুদ্ধ শুরু করতে পারে। মানুষ মানুষকে হত্যা করে।’ — ভাল কাজের প্রশংসা না করতে পারলে চুপ থাকো। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হলে নিজের কর্ম দ্বারা বড় হও। কিন্তু, শ্রেষ্ঠ পর্যায়ের কাজগুলো নিয়ে কুতর্ক কেন? রাজনৈতিক গবেষক হিসাবে বলতে পারি যে, এই দেশে দুইজন জাতীয় নেতার দুই উত্তরসূরী নিজেদের জাত চিনিয়েছেন। একজন হলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম তনয় প্রয়াত সৈয়দ আশরাফ। অন্যজন হলেন জাতীয় নেতা কামারুজ্জামান হেনা পুত্র খায়রুজ্জামান লিটন। এমন কিছু করা ঠিক নয়, যার কারণে সৎ ও মহান কাজের বিরোধীতা করে চিন্তাকে খুন করার সামিল হয়ে দাঁড়ায়। যা এক রকমের অপরাধও। রাজশাহীর উন্নয়ন নিয়ে যাদের তনুমন জ্বলছে, তাদের দিকেও আমাদের চোখ থাকবে। তারা কারা? মুখোস উন্মোচন করে দিলে পালাবার পথ থাকবে না বলেই বিশ্বাস করি। কারণ, দেশের শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক সত্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যায়, অসংলগ্নতা বরদাশত করেন না। তার একক সিদ্ধান্তে আপনি আজ মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রী– এক কলমের খোঁচায় পরের দিবসে আপনি সাধারণ ব্যক্তি হয়েও পড়তে পারেন।

বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতার পরিবার কে নিয়ে নোংরা রাজনীতি করার ক্ষমতা কাউকে দেয়া যাবে না। যারা এমনটি করার দুঃসাহস দেখায়, তারা স্বাধীনতাবিরুদ্ধশক্তির সাথেও হাত মেলানোর রাজনীতিক হবেন, তা ধরে নেয়া যায়। প্রয়োজনে আইন করে এদেরকে মোকাবিলা করতে হবে।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী, নির্মাতা

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন