বিজ্ঞাপন

স্থলভাগে ১৬ ঘণ্টা কাটিয়ে শক্তি হারাল রেমাল, সারাদেশে ঝড়-বৃষ্টি

May 27, 2024 | 11:51 am

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রেমাল প্রবল ঘূর্ণিঝড় আকারে উপকূলে আঘাত করবে— এমন পূর্বাভাস ছিল আগে থেকেই। তার ব্যত্যয় ঘটেনি। কিন্তু কোনো ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে আঘাত করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দুর্বল হয়ে পড়লেও রেমালের ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটেনি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এটি পূর্ণ শক্তিতে স্থলভাগে বয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ আঘাত করার সময় থেকে শুরু করে ১৬ ঘণ্টা সময় লেগেছে এটি স্থল নিম্নচাপে পরিণত হতে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে মোংলার পাশ দিয়ে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া উপকূল দিয়ে প্রবেশ করে ঘূর্ণিঝড়টি সাতক্ষীরা, খুলনা হয়ে আরও উত্তরের দিকে ধাবিত হয়ে তবেই পরিণত হয়েছে স্থল নিম্নচাপে। এরই মধ্যে জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে গোটা সুন্দরবনসহ উপকূলের অন্তত ১৫টি জেলা। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার সাত-আট ঘণ্টা পরেও উপকূলের বেশ কয়েকটি জেলায় শুরু হয়েছে তীব্র প্রভাব।

রোববার (২৬ মে) সন্ধ্যা ৬টার দিকে রেমালের অগ্রভাগ আঘাত হানত শুরু করে মোংলা-খেপুপাড়া এলাকায়। একই সময়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপ উপকূলেও আছড়ে পড়ে ঘুর্ণিঝড়টি। প্রায় ৬৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ছিল এর কেন্দ্র। সে অনুযায়ী যথেষ্ট বড় একটি ‘সিস্টেম’ হিসেবেই স্থলভাগে আঘাত করেছে এটি।

আবহাওয়া অধিদফতরের রোববার সন্ধ্যার পরের তথ্য বলছিল, রোববার দিবাগত মধ্যরাত নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম শেষ করবে। পাশাপাশি পুরো ঘূর্ণিঝড়টি পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম শেষ করে দুর্বল হয়ে পড়বে। কিন্তু বাস্তবে সেটি ঘটেনি। রেমাল আঘাত হানতে শুরু করার প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত এটি প্রায় পূর্ণ শক্তি নিয়ে স্থলভাগে অবস্থান করছিল।

বিজ্ঞাপন

এর মধ্যে রোববার সকালের পর থেকেই উপকূলীয় সব জেলায় ঝড়-বৃষ্টি বয়ে যেতে থাকলেও মধ্যরাত পেরিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঝড়ের বেগ ও বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে থাকে। সোমবার সকাল ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এসব জেলায় বাতাস বয়ে যাচ্ছে, যা মাঝে মাঝেই ঝড়ো বা দমকা হাওয়া রূপে বাড়তি গতিতে আঘাত হানছে। রয়েছে বৃষ্টিপাতও।

এত দীর্ঘ সময় ধরে একটি ঘূর্ণিঝড়ের পূর্ণশক্তি নিয়ে স্থলভাগে অবস্থান করার ঘটনা খুব একটা দেখা যায় না বলে জানালেন খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ। সোমবার (২৭ মে) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কথা হলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল এখনো খুলনার ওপর দিয়ে তীব্র গতিতে বয়ে যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টি খুলনা অতিক্রম করতে আরও কিছু সময় লাগবে। কিন্তু এটি যে দীর্ঘ সময় ধরে স্থলভাগে পূর্ণ শক্তি নিয়ে অবস্থান করছে, এমন খুব একটা দেখা যায় না। এদিক থেকে রেমাল এর আগের ঘূর্ণিঝড়গুলোর তুলনায় আলাদা।’

বিজ্ঞাপন

সোমবার সকালেও খুলনায় ৫৪ কিলোমিটার পর্যন্ত টানা গতিবেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছিল। সকাল ৬টা থেকে ৬৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। আমিরুল আজাদ বলেন, ‘আজ বিকেল পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আগে থেকেই ছিল। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। এরপর মেঘমালা ঢাকা, রাজশাহীর দিকে চলে যাবে।’

শনিবার রাত থেকে বৃষ্টি আর রোববার সকাল থেকে এর সঙ্গে বাতাস শুরু হলেও উপকূলের জেলাকক্সবাজারে প্রবল বাতাস শুরু হয় রোববার দিবাগত মধ্যরাত পেরিয়ে। ভোরের দিকে বৃষ্টি ও বাতাস— দুইয়ের তীব্রতাই বাড়তে থাকে। সকালেও ঝড়ো ও দমকা হাওয়া আকারে ঝড় বয়ে যাচ্ছে কক্সবাজারে। চলছে বৃষ্টিও।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রেমাল কিন্তু বেশ বড় একটি সিস্টেম। এর অগ্রভাগ, কেন্দ্র ও পশ্চাৎভাগ মিলিয়ে অনেক বড় একটি ঝড়। এর কেন্দ্রই মোটামুটি ৬৪ কিলেমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এখন (সোমবার সকাল) ঘূর্ণিঝড়টির নিচের অংশ আঘাত করেছে। কক্সবাজারেও রেমালের নিম্নভাগের আঘাতের প্রভাবে ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে।’ কক্সবাজারে ঘণ্টায় ৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে বাতাস বয়ে যাওয়া এবং সকাল থেকে ৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ডের তথ্য জানালেন এই আবহাওয়াবিদ।

এদিকে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। এই অফিসের তথ্য বলছে, ঘণ্টায় ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার বেগে টানা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। কখনো কখনো বাতাসের গতিবেগ দমকা বা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতি পাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. জুলফিকার আলী রিপনও জানালেন, এত দীর্ঘ সময় ধরে কোনো ঘূর্ণিঝড়ের স্থলভাগে অবস্থান করার নজির খুব একটা নেই। সোমবার সকালে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রোববার সারাদিন ঝড়-বৃষ্টি ছিল। বিশেষ করে রোববার মধ্যরাতে তীব্র গতিতে এই ঘূর্ণিঝড় সাতক্ষীরা বিভিন্ন অঞ্চলে আঘাত করেছে। সোমবার সকাল ৬টা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ের প্রান্ত ভাগ সাতক্ষীরা জেলা অতিক্রম করেছে।’

সাতক্ষীরা অতিক্রম করলেও সকাল ১০টার দিকেও বৃষ্টি ও বাতাস অব্যাহত ছিল এই জেলায়। সোমবার সকালে এই জেলায় ৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে, যা অতি ভারী বৃষ্টিপাত শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।

এদিকে ভোলা, বাগেরহাট, বরগুনা, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, বরিশাল জেলার নিম্নাঞ্চলগুলো ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে রেমালের প্রভাবে জলোচ্ছাসের কারণে। বৃষ্টি ঝরেছে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, যশোর, নড়াইল, মাগুরা জেলাতেও। একটু দেরিতে প্রভাব পড়লেও বাদ পড়েনি রাজাধানী ঢাকা। সোমবার ভোর থেকে রাজধানীতে শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত। সঙ্গে রয়েছে দমকা হাওয়া। ফলে কর্মজীবীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। যানবাহনের স্বল্পতার সঙ্গে সকালের বৃষ্টি অফিসগামীদের ভোগান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে।

এদিকে সকাল ১১টার দিকে আবহাওয়া অধিদফতর ঘূর্ণিঝড় রেমাল ঘিরে ১৯ নম্বর ও সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করেছে। সকাল ১০টার তথ্য তুলে ধরে এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খুলনার কয়রায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল উত্তর দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে স্থল গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি যশোর ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল। আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ বৃষ্টি ঝরিয়ে এটি স্থল নিম্নচাপে পরিণত হবে।

গভীর স্থল নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় দেশেরে চার সমুদ্রবন্দরকেই আগের ১০ ও ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকেও মঙ্গলবার (২৮ মে) সকাল পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে ও সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

সারাবাংলা/টিআর/ইআ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন