বিজ্ঞাপন

বড় হয়ে পুলিশ হতে চায় ছোট্ট রাখাল

June 15, 2024 | 4:20 pm

রাজনীন ফারাজান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: পরনে একটা সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি আর হাফপ্যান্ট। খিলগাঁওয়ের শাহজাহানপুর কলোনি পশুর হাটের বাইরে একটি লাল গরুকে আদর করে ঘাস খাওয়াচ্ছিল উজ্জ্বল বাদামী চোখের শিশুটি। নাম জিজ্ঞাসা করতে লাজুক চাহনি আর আড়ষ্ট দেহভঙ্গি নিয়ে বলল, ‘সাব্বির’। বয়স কত জিজ্ঞসা করতেই জবাব দিলো, সাড়ে ১১। জানা গেল দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া সাব্বির বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ আর গরু লালনপালন করলেও বড় হয়ে পুলিশ হতে চায়।

বিজ্ঞাপন

জামালপুর জেলার ইসলামপুরের সুন্দরপুর গ্রামে সাব্বিরদের বাড়ি। স্থানীয় বৃষ্টি চাইল্ড একাডেমিতে পড়াশোনা করে তারা দুইভাই। তার বড় ভাইয়ের নাম সাইফুল। ১৪ বছরের সাইফুল পড়ে তৃতীয় শ্রেণিতে। বাবার কাজে সাহায্য করতে সাইফুল নয়, ছোট ছেলে সাব্বিরকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা এসেছেন সাব্বিরের বাবা মো. জিয়াউল।

সাব্বিরের বাবা বলেন, ‘ছোট ছেলেটা সব কাজে ওস্তাদ। বাড়িতে কৃষিকাজ থেকে শুরু করে গরুর লালনপালনে ওই সাহায্য করে।’

কী কী কাজ করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তো কৃষিকাজ করে খাই। পাশাপাশি গরু পালন করি। সাব্বির পড়াশোনার পাশাপাশি জমি থেকে ধান আনা, মাড়াই করা, গুরুকে খাবার খাওয়ানো, পানি খাওয়ানোর কাজ করে। ছোট হলে কী হবে অনেক কাজের। বড়টা ওর মতো না। তাই তাকে আনিনি।’

বিজ্ঞাপন

সাব্বিরের বাবা জিয়াউল ও চাচা মো. দেলোয়ার হোসেন তোতা মিলে ঢাকায় সাতটি গরু এনেছেন। এরমধ্যে দুটি সাব্বিরদের গরু। একটি লাল, আরেকটি সাদা। দুই লাখ টাকা হলে গরু দুটি বিক্রি করতে চান তারা।

এদিকে হাতে এক গোছা ঘাস নিয়ে গরু দুটির মুখের সামনে বারবার ধরছে সাব্বির। এর ফাঁকে ফাঁকেই লাজুক মুখে দুয়েকটা কথা বলছে সে। গরুগুলোর কোনো নাম আছে কিনা জানতে চাইলে জানা গেল, আড়াই মাস আগে কেনায় এদের কোনো নাম নাই। এমনিতে লালগাই আর সাদাগাই নামেই ডাকা হয়।

বিজ্ঞাপন

সাব্বিরের স্কুলে যেতে ও পড়াশোনা করতে ভীষণ ভালো লাগে। সবচেয়ে পছন্দের বিষয় অংক। এখন কৃষক বাবার সাহায্যকারী হিসেবে গরুর রাখালি করলেও বড় হয়ে কিন্তু কৃষক বা খামারি হতে চায় না সাব্বির। তার স্বপ্ন পুলিশ হওয়া। পুলিশ কেন হতে চায় জানতে চাইলে আবারও লাজুকতা ঘিরে ধরে তাকে। নানাভাবে জানতে চাওয়ার পর আধোমুখে বলে, ‘পুলিস বড় বিল্ডিংয়ে থাকে তাই সে পুলিশ হতে চায়।’

সাব্বিরের বাবা ও তার সহকারীরা জানালেন ট্রেনে করে আসার সময় সাব্বিরকে অনেককিছু দেখিয়েছেন। ওইখানে আর্মি থাকে, ওইখানে পুলিশ থাকে, ওইখানে অন্য অফিসাররা থাকে। এসব দেখে সাব্বিরের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় মনে হয়েছে পুলিশের পেশা। তাই প্রথমবারের মতো ঢাকায় আসা যমুনার চরের এই ছোট্ট শিশুটি স্বপ্ন দেখছে বড় হয়ে সে পুলিশই হবে।

ছবি তুলতে চাইলে ছেলের পরনের গেঞ্জির উপরে একটা শার্ট চাপিয়ে দিলেন সাব্বিরের বাবা। সুন্দর শার্ট পরে গরুর সঙ্গে পোজ দিল সাব্বির। জানা গেল, বাবা-চাচার সঙ্গে সেও এখানে ত্রিপল টানিয়ে গরুর সঙ্গে ঘুমাচ্ছে। রেলগাড়িতে চড়ে গরু এনে বাবার সঙ্গে ঢাকায় আসা সাব্বিরের পুলিশ হওয়ার স্বপ্নে দারুন আমোদিত তার বাবা ও অন্যরা।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরএফ/ইআ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন