বিজ্ঞাপন

ত্যাগের মহিমা নিয়ে এলো ঈদুল আজহা

June 17, 2024 | 12:14 am

সারাবাংলা ডেস্ক

প্রায় চার হাজার বছর আগে আল্লাহ তায়ালা এক কঠিন পরীক্ষা নিয়েছিলেন হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর। সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটি কোরবানি তথা আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করতে বলেছিলেন ইব্রাহিম (আ.)-কে। শেষ পর্যন্ত ইব্রাহিম (আ.) তার কাছে সবচেয়ে প্রিয় নিজ সন্তান হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার উদ্যোগ নেন। সে কোরবানিকে আল্লাহ কবুল করে নেন। তার কুদরতে ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে কোরবানি হয়ে যায় একটি দুম্বা।

বিজ্ঞাপন

হজরত ইব্রাহিম (আ.) কোরবানির যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, সেটিকেই সামর্থ্যবান মুসলিমদের জন্য এক পালনীয় ইবাদত করে দিয়েছেন আল্লাহ। জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহার দিন মুসলিমরা ইব্রাহিম (আ.)-এর সেই ত্যাগের মহিমা স্মরণ করে পশু কোরবানি করে থাকেন আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায়।

আজ সোমবার (১৭ জুন) হিজরি বর্ষপঞ্জি হিসেবে সেই ১০ জিলহজ, পবিত্র ঈদুল আজহার দিন, কোরবানির দিন। মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় উৎসবের দিন। সকালে ঈদগাহ ও মসজিদে ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে যে দিনটি শুরু হবে, সেটিই পূর্ণতা পাবে নামাজ শেষে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে।

১০ জিলহজ ঈদুল আজহা উদ্‌যাপন করা হলেও পরের দুই দিনও অর্থাৎ ঈদের তৃতীয় দিন পর্যন্ত পশু কোরবানি করার বিধান রয়েছে। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী, কোরবানি করা পশুর মাংসের এক-তৃতীয়াংশ কোরবানিদাতা রাখবেন নিজে খাওয়ার জন্য, বাকি দুই ভাগ তিনি বিতরণ করবেন আত্মীয়-স্বজন ও দরিদ্র-মিসকিনদের মধ্যে। এ ছাড়া কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি থেকে উপার্জিত অর্থও বিতরণ করে দেওয়া হয় মসজিদ-মাদরাসা কিংবা দুঃস্থ-দরিদ্রদের মধ্যে। কোরবানি তাই ধর্মীয় বিধানের আদলে সামাজিক উৎসবও বটে।

বিজ্ঞাপন

মুসলিমদের অন্যতম বড় এই উৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীসহ বিশ্বের সব মুসলমানদের আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, মহান আল্লাহর কাছে কোরবানি কবুল হওয়ার জন্য শুদ্ধ নিয়ত ও বৈধ উপার্জন আবশ্যক। পশু কুরবানির সঙ্গে সঙ্গে যেন আমরা অন্তরের কলুষতা, হিংসা, বিদ্বেষ পরিহার করতে পারি, মহান আল্লাহর দরবারে এ প্রার্থনা করছি। পবিত্র ঈদুল আজহা সবার জন্য বয়ে আনুক কল্যাণ, সবার মধ্যে জেগে উঠুক ত্যাগের আদর্শ। ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক সবার মাঝে।

বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জীবনের সব পর্যায়ে মুসলমানদের ত্যাগ, আত্মশুদ্ধি, সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি ছড়িয়ে পড়ুক— এই হোক ঈদ উৎসবের ঐকান্তিক কামনা। আশা করি, ঈদ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জীবনে সুখ ও আনন্দের বার্তা বয়ে আনবে। আসুন, সবাই ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করি এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আজীবন স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক, উন্নত-সমৃদ্ধ আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি।

বিজ্ঞাপন

এবার হাইকোর্টসংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত হবে সকাল সাড়ে ৭টায়। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন প্রধান ঈদ জামাতে অংশ নেবেন। জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ঈদের প্রধান জামাত হবে মিরপুর গোলারটেক মাঠে, সকাল সাড়ে ৭টায়। এলাকাবাসীর সঙ্গে উত্তরের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম এই জামাতে অংশ নেবেন।

প্রতিবছরের মতো এবারও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের পাঁচটি জামাত হবে। প্রথম জামাতটি হবে সকাল ৭টায়। এরপর পর্যায়ক্রমে সকাল ৮টা, সকাল ৯টা, সকাল ১০টা ও সকাল পৌনে ১১টায় হবে বাকি জামাতগুলো। এ ছাড়া জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ঈদের জামাত হবে সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিআয় ঈদের জামাত হবে দুটি— সকাল ৮টা ও সকাল ৯টায়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল মসজিদে সকাল ৭টায়, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল লনে সকাল ৮টায় এবং ঈশা খাঁন আবাসিক এলাকার মসজিদে সকাল ৭টায় ঈদুল আজহার জামাত হবে।

ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো অনুষ্ঠান চালাবে কয়েক দিন ধরে। ঈদ উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোও যথাযথভাবে ঈদুল আজহা উদযাপন করবে।

ঈদে সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে বাহিনীগুলো। পুলিশ ও র‌্যাব জানিয়েছে, ঈদ উপলক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকির তথ্য তাদের কাছে নেই। তারপরও পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে কোরবানির পশুর রক্ত বা বর্জ্য যেন পরিবেশ দূষিত না করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো। ছয় ঘণ্টার মধ্যেই কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কার করা হবে বলে জানিয়েছে তারা।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন