বিজ্ঞাপন

ঈদুল আজহা: উৎসবের রঙ বন্দরনগরী জুড়ে

June 17, 2024 | 11:26 am

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঈদুল আজহার উৎসবে মেতেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মানুষ। ভোরের আলো ফুটতেই বিভিন্ন ঈদগাহে, মসজিদে মানুষের ঢল নামে। নানা শ্রেণিপেশার মানুষ এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন। এরপর শুরু হয় পশু কোরবানি।

বিজ্ঞাপন

নামাজে সবাই মিলে ত্যাগের মহিমায় আত্মশুদ্ধির ফরিয়াদ জানিয়েছেন সৃষ্টিকর্তার কাছে। পাশাপাশি বিশ্বশান্তির প্রার্থনাও ছিল মুসল্লিদের।

সোমবার (১৭ জুন) সকাল সাড়ে ৭টায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে নগরীর জামিয়াতুল ফালাহ ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল আযহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সোয়া ৮টায় সেখানে আরেক দফা জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

দু’দফা জামাতে বিপুল মুসল্লির সমাগম ঘটে। চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, জাতীয় পার্টির নেতা সোলায়মান আলম শেঠ নামাজ আদায় করেন। তবে বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধিরা নিজ নিজ এলাকায় মসজিদেই নামাজ আদায় করেছেন। নামাজ শেষে মুসল্লিরা পরস্পরের সঙ্গে আলিঙ্গনের মধ্য দিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

বিজ্ঞাপন

এ সময় শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সাংবাদিকদের বলেন, চট্টগ্রামবাসীসহ দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে সকলের সুখ, শান্তি কামনা করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করেছি। সারাবিশ্বে যে অর্থনৈতিক সংকট চলছে, সেটা থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তিনি যেন শতায়ূ হন এবং আমৃত্যু নেতৃত্ব দিতে পারেন, সেই প্রার্থনা করেছি।

নামাজ আদায়ের সময় জামিয়াতুল ফালাহ প্রাঙ্গনে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় মন্ত্রী নওফেলসহ অন্যরা তাকে সেবা দেন।

বিজ্ঞাপন

এদিকে নগরীর বহদ্দারহাট শাহী জামে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

নামাজ আদায়ের পর মেয়র বলেন, ঈদ শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি সকলের জন্য ঐক্য ও সৌহার্দ্যের বার্তা। এ পবিত্র দিনে আমাদের সকলের উচিত ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সকলের সাথে মিলে-মিশে আনন্দ উদযাপন করা। আমাদের সকলের উচিত ঈদের এই পবিত্র উৎসবে সকলের প্রতি সহানুভূতি ও শ্রদ্ধাশীল আচরণ প্রদর্শন করা। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নির্মূল করে আগামীর বাংলাদেশ হবে অসাম্প্রদায়িক, সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদী এবং উন্নত বাংলাদেশ, এই হোক আমাদের শপথ।

চট্টগ্রাম নগরীতে এবার সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে আরও ৮টি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- শেখ ফরিদ চশমা ইদগাহ জামে মসজিদ, সুগন্ধা আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, চকবাজার সিটি করপোরেশন শাহী জামে মসজিদ, জহুর হকার্স মার্কেট জামে মসজিদ, দক্ষিণ খুলশী আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, আরেফিন নগর কেন্দ্রীয় কবরস্থান জামে মসজিদ, সাগরিকা গরু বাজার জামে মসজিদ ও মা আয়েশা সিদ্দীক চসিক জামে মসজিদ।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া চসিকের ৪১ ওয়ার্ডে স্থানীয় কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে একটি করে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

নামাজ আদায়ের পরপরই নগরীর বিভিন্ন অলিগলি, রাস্তায়, মাঠে, বাসা-বাড়ির সামনে কোরবানি শুরু হয়।

প্রতিবছরের মতো এবারও পশু জবাইয়ের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ৩০৪টি স্থান নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু নির্ধারিত স্থানে কোরবানির জন্য সিটি করপোরেশনের আহ্বানে তেমন সাড়া মেলেনি।

কোরবানি শুরুর আগে সকাল থেকেই বর্জ্য অপসারণে প্রস্তুত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। এবার চসিকের পক্ষ থেকে বর্জ্য অপসারণে ৩২২টি গাড়ি নিয়ে নিয়োজিত আছেন ৪ হাজার ৫০০ কর্মী।

চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, সকাল ৮টা থেকে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা মাঠে নেমেছেন। প্রথমে সড়কে, অলিগলিতে এবং হাটের আশপাশে খড়কুটোসহ যেসব বর্জ্য আছে, সেগুলো পরিস্কার করা হচ্ছে।

এছাড়া অলিগলিতে কোরবানি হওয়া পশুর বর্জ্য সংগ্রহ করে জমা করা হচ্ছে। ছোট গাড়িতে সেগুলো মূল সড়কে এনে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হবে। পশুর চামড়া, লেজ-মাথাসহ শরীরের অবশিষ্টাংশ যাতে যত্রতত্র ফেলতে না পারে সেজন্য সতর্ক অবস্থায় আছে চসিক।

এদিকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নগরীকে ছয়টি জোনে ভাগ করে দু’জন কাউন্সিলরকে মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন চসিকের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

কাউন্সিলর মোবারক আলী জানিয়েছেন, দুই লাখ কিংবা তার চেয়ে কিছু বেশি পশু এবার কোরবানি হবে বলে তাদের ধারণা। কী পরিমাণ বর্জ্য অপসারণ করতে হবে, সেটা এবার আগেভাগে বলছেন না তারা। নতুন কেনা ওয়েট স্কেলে মেপে পরিমাণ জানানো হবে বলে তিনি জানান।

মেয়র সকাল ৯টা থেকে সর্বোচ্চ ৮ ঘন্টার মধ্যে অর্থাৎ বিকেল ৫টার মধ্যে বর্জ্য পুরোপুরি অপসারণের সময় বেঁধে দিয়েছেন। তবে এরপরও রাত ৯টা পর্যন্ত চসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের টহল টিম কাজ করবে বলে জানিয়েছেন কাউন্সিলর মোবারক আলী।

চসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আজিজ আহমেদ সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, দুপুর আড়াইটায় দামপাড়ায় চসিকের বিদ্যুৎ উপবিভাগ কার্যালয় থেকে কোরবানির বর্জ্য পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম মনিটরিং শুরু হবে৷ মেয়র নিজেই মনিটরিংয়ে নেতৃত্ব দেবেন।

নগর পুলিশের কোতোয়ালী জোনের সহকারি কমিশনার অতনু চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, জমিয়াতুল ফালাহ প্রাঙ্গনে সুন্দরভাবে ঈদের নামাজ আদায় হয়েছে। সেখানে আমাদের বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। এরপর কোরবানি এবং বর্জ্য অপসারণ চলছে। পশুর চামড়া যত্রতত্র রেখে যাওয়া এবং কেনাবেচাকে ঘিরে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে একাধিক টিম মাঠে নেমেছে।

সারাবাংলা/আরডি/ইআ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন