বিজ্ঞাপন

মাঠে গাউছিয়া কমিটি, এবারও চট্টগ্রামে চামড়া কেনাবেচা ‘সুশৃঙ্খল’

June 17, 2024 | 10:27 pm

রমেন দাশ গুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পাড়া-মহল্লা থেকে প্রায় এক লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ করে এবারও কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার বাজারকে সুশৃঙ্খল রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশ’। তবে চার বছর পর এবার আবারও কিছু মৌসুমি কাঁচা চামড়া সংগ্রহকারীর তৎপরতা চোখে পড়েছে। কিন্তু আড়তদার ও মৌসুমি সংগ্রহকারীর সিন্ডিকেট প্রথা সুবিধা করতে পারেনি গাউছিয়া কমিটির কারণে।

বিজ্ঞাপন

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেড এবার তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের টার্গেট নির্ধারণ করেছে। তবে পুরো চট্টগ্রামে কী পরিমাণ চামড়া সংগ্রহ হয়েছে, তা জানাতে আরও কমপক্ষে একদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছে আড়তদার সমিতি। গত বছর তারা তিন লাখ ৪২ হাজার কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেছিল।

এবার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা না থাকলেও সরকারি দাম মেনে চামড়া সংগ্রহ এখন আড়তদারদের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আড়তদাররা বলছেন, একদিকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দর দিচ্ছেন কোরবানিদাতাদের, যে দামে তাদের কেনা সম্ভব নয়। অন্যদিকে ট্যানারি মালিকদের বিভিন্ন কারসাজির কারণে তারা লোকসানের আশঙ্কা করছেন।

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে কোরবানির কাঁচা চামড়ার বাজার প্রতিবছর ‘চার হাত চক্রে’ নিয়ন্ত্রণ হতো। কোরবানি দাতাদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহ করতেন এলাকার উঠতি তরুণরা, যাদের মৌসুমি সংগ্রহকারী বলা হয়। তাদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কিনে নিতেন বড়-মাঝারি ব্যবসায়ীরা, যারা শুধু কোরবানির সময়ই চামড়া কিনতে বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেন এবং সেই চামড়া বিক্রি করেন আড়তদারের কাছে। সেই ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়া বিক্রি করতেন আড়তদারের প্রতিনিধির কাছে। প্রতিনিধির কাছ থেকে চামড়া যেত আড়তদারের ডিপোতে।

তবে সেই ‘চার হাত চক্র’ ২০২০ সালে ভেঙে যায়। ২০১৯ সালে আড়তদার ও তাদের প্রতিনিধিরা ‘অস্বাভাবিক দরপতন’ ঘটিয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কেনা বন্ধ রেখেছিলেন। এতে কাঁচা চামড়া সড়কে ফেলে দিয়ে তাদের বিদায় নিতে হয়েছিল। ২০২০ সালে মৌসুমি সংগ্রহকারীর সংখ্যা অর্ধেকেরও কমে নেমে আসে। এরপর তিন বছর কার্যত মাঠ থেকে ‘আউট’ হয়ে যান মৌসুমি সংগ্রহকারীরা।

বিজ্ঞাপন

এ ‘সুযোগে’ কাঁচা চামড়ার বাজারের ওপর একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন আড়তদার ও তাদের প্রতিনিধিরা। কিন্তু ২০২২ সালে এসে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ ও কেনাবেচার নিয়ন্ত্রণ নেয় সুন্নী মতাদর্শে বিশ্বাসী সংগঠন ‘গাউছিয়া কমিটি’, যা অব্যাহত আছে এবার তৃতীয় বছরেও।

প্রতিবারের মতো এ বছরও সোমবার (১৭ জুন) কোরবানির পর দুপুর থেকে নগরীর চৌমুহনী কর্ণফুলী বাজার, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ঈদগাহ বৌবাজার, আতুরার ডিপোসহ বিভিন্ন স্পটে কাঁচা চামড়া জমা শুরু হয়। যারা কাঁচা চামড়া সেখানে আনেন, তাদের মধ্যে এবার কিছু কিছু মৌসুমি সংগ্রহকারী দেখা গেছে। তবে অলিগলির মুখে কিংবা সড়কে কাঁচা চামড়া নিয়ে তরুণদের জটলা কিংবা জোরজবরদস্তি ছিল না।

চট্টগ্রামে ঈদুল আজহার দিনে দুপুর থেকেই শুরু হয় কাঁচা চামড়া সংগ্রহ কার্যক্রম। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

দুপুরে চৌমুহনী কর্ণফুলী বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ১০-১২ জন চামড়া সংগ্রহকারী নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে রিকশা-ভ্যানে আসা কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করছেন। বিকেল ৪টা পর্যন্ত সেখানে হাজার খানেক চামড়ার স্তূপ দেখা গেছে।

নগরীর আগ্রাবাদের দাইয়াপাড়া থেকে একদল তরুণ ৩১টি গরুর চামড়া নিয়ে কর্ণফুলী বাজারে আড়তাদের প্রতিনিধির কাছে বিক্রির অপেক্ষায় বসেছিলেন। সাত-আটজন তরুণের সবার পরনে ছিল অভিন্ন টি-শার্ট। জানালেন, কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে সরাসরি চামড়া কিনে তারা বিক্রির জন্য এনেছেন। বড় গরুর চামড়া ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা এবং ছোট গরুর চামড়া ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় তারা কোরবানিদাতার কাছ থেকে কিনেছেন। প্রতিটি চামড়া গড়ে তারা ৮০০ টাকায় বিক্রি করতে চান।

বিজ্ঞাপন

তরুণদের একজন মো. শামীম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মৌসুমি সংগ্রহকারী। আমরা আগেও চামড়া এনেছি। ২০১৯ সালে ৬০টি চামড়া এনেছিলাম। সেবার ফ্রি-তে চামড়া ফেলে দিয়ে চলে যাই। এরপর গত চার বছর আর চামড়া নিইনি, বাজার খারাপ ছিল। এবার আবার এনেছি। তবে এখন গাউছিয়া কমিটি পাড়ায়-পাড়ায় ঢুকে গেছে। তাদের কোরবানিদাতাদের অনেকে এমনিতে চামড়া দিয়ে দেন।’

কর্ণফুলী মার্কেটের কাঁচামাল ব্যবসায়ী হাসিব মোল্লা গত ১৪ বছর ধরে কেবল কোরবানির একদিন কাঁচা চামড়ার ব্যবসা করেন। নগরীর সিটি গেট থেকে ১৪০ পিস চামড়া সংগ্রহ করে তিনি বিক্রির জন্য সেখানে এসেছিলেন। সরাসরি কোরবানিদাতার কাছ থেকে, আবার মৌসুমি সংগ্রহকারীদের কাছ থেকেও সংগ্রহ করেছেন।

কয়েক বছর পর এবার কিছু মৌসুমি কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীও চামড়া সংগ্রহে মাঠে নেমেছেন। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

হাসিব মোল্লা সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত বছর ৩৫০ পিস এনেছিলাম। দাম পাইনি। বিক্রি করে মাত্র ১৬ হাজার টাকা লাভ হয়েছিল। এ টাকার জন্য এত কষ্ট পোষায় না। এবার ১৪০ পিস এনেছি। গড়ে ৬৫০ টাকা দাম পড়েছে। আড়তদারের লোক এসেছিল। তারা বলছে ৫০০ টাকার থেকে এক টাকা বেশি দিয়েও চামড়া কিনবে না। এভাবে আসলে আমাদের লোকসানের মুখে ফেলা হচ্ছে, যেন আমরা ব্যবসা ছেড়ে চলে যাই। কোরবানিদাতারা যদি ফ্রি-তে চামড়া আড়তদারকে দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের আর কোনো খরচ হলো না— এটাই তাদের কারসাজি।’

চৌমুহনী এলাকায় কাঁচা চামড়ার বড় ক্রেতা চট্টগ্রাম দোকান মালিক সমিতির সহসভাপতি মোহাম্মদ ইয়াসিন বিকেল ৪টার মধ্যে প্রায় ৪০০ পিস চামড়া সংগ্রহ করেছেন। সন্ধ্যার মধ্যে আরও ১০০ পিস কিনে আড়তদারের কাছে বিক্রি করবেন বলে জানালেন ইয়াসিনের প্রতিনিধি মোহাম্মদ ছগীর।

ছগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছয় থেকে সাত শ টাকায় চামড়া কিনেছি। আট শ টাকায় প্রতিটি বিক্রি করব বলে ঠিক করেছিলাম। আড়তদার যদি কিনে আর কী! আমাদের ব্যবসা মরে গেছে। সরকার মেরে ফেলেছে। গতবার এক হাজার পিস কিনেছিলাম। একসময় আমরা চার-পাঁচ হাজার চামড়া কিনতাম। ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার ব্যবসা হতো। গত আট-দশ বছর ধরে চামড়ার দাম পাচ্ছি না। সিন্ডিকেট করে দাম কমানো হয়। সরকার নিজেই প্রশ্রয় দিচ্ছে।’

‘কোরবানির দুই-তিন দিন আগেও কসাই কাঁচা চামড়া বিক্রি করেছে দেড় হাজার টাকায়। আর সরকার সেটার দাম বেঁধে দিচ্ছে এক হাজার টাকা। সরকার নিজেই কমিয়ে দিয়েছে পাঁচ শ টাকা। আড়তদারেরও তেমন লাভ নেই। লাভ শুধু হচ্ছে ট্যানারি মালিকের।’

চট্টগ্রামের আড়তদাররা এ বছর তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

এদিকে গাউছিয়া কমিটি চট্টগ্রাম নগরীর ১৬ থানা, ৪৯ সাংগঠনিক ওয়ার্ড ও ৫৩৭টি ইউনিট কমিটির মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক, যাদের অধিকাংশই মাদরাসার ছাত্র, তাদের মাধ্যমে এবারও চামড়া সংগ্রহ করেছে। প্রতিটি সাংগঠনিক ইউনিটে এক বা একাধিক চামড়া সংগ্রহের বুথ স্থাপন করা হয়। ১০০টি ছোট-বড় ট্রাকের মাধ্যমে নগরীর অলিগলি ও বাসাবাড়িতে গিয়ে কর্মীরা সংগ্রহ করেন কোরবানির চামড়া। কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে বিনামূল্যে সংগ্রহ করা হচ্ছে চামড়া।

সংগ্রহ করা চামড়া জমা করে লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে নগরীর বিবিরহাট গরুবাজারের মাঠে ও বেঙ্গল আড়তের মাঠে। এ ছাড়া হালিশহর ও খুলশীতে দুই মাদরাসায়ও আলাদাভাবে কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী ও পটিয়ায় এবং উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারীর কাটিরহাট, রাউজানেও আলাদাভাবে লবণ দিয়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করছে গাউছিয়া কমিটি।

হাজী মোহাম্মদ আলী নামে আড়তদার সমিতির একজন্য সদস্য গাউছিয়া কমিটির কাছ থেকে ৩০ হাজার চামড়া সংগ্রহ করেছেন, যেগুলো বিবিরহাট গরুবাজার ও বেঙ্গল আড়তের মাঠে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

গাউছিয়া কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মোছহেব উদ্দিন বখতেয়ার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ। আমরা অলমোস্ট সংগ্রহ করে ফেলেছি। হাজী মোহাম্মদ আলী সাহেবকে ৩০ হাজার দেওয়া হচ্ছে। সেটা তিনি নিজেই সংরক্ষণ করবেন। বাকিগুলো আমরা নিজেরা সংরক্ষণ করছি। সেগুলো কিছু চট্টগ্রামের আড়তদারদের কাছে বিক্রি করব, কিছু বাইরের আড়তদারের কাছে বিক্রি করব।’

প্রতিটি কাঁচা চামড়া গাউছিয়া কমিটি ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করছে বলে জানালেন মোছাহেব উদ্দিন বখতেয়ার।

কাঁচা চামড়া সংগ্রহের পর আড়তে চলছে লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করার কাজ। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

চট্টগ্রামে ছোট-বড় ২২৫টি আড়তে চামড়া সংরক্ষণ হয়। তালিকাভুক্ত আড়তদার আছেন ৩৭ জন। সক্রিয় আছে ২০-২৫ জন। অধিকাংশ আড়ত নগরীর আতুরার ডিপো এলাকায়। কোরবানির দিন চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর থেকে আসা কাঁচা চামড়ার সবচেয়ে বেশি সমাহার ঘটে এই আতুরার ডিপো এলাকায়। ডিপোর বাইরে সড়কে লাখো চামড়ার হাতবদল হয়। হাজার-হাজার ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম ঘটে।

ঈদুল আজহা সামনে রেখে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। ঢাকায় গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট গতবারের চেয়ে ৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩ টাকা বেড়েছে। ট্যানারি ব্যবসায়ীদের এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কিনতে হবে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়, গত বছর এই দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম হবে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, গত বছর ছিল ৪৭ থেকে ৫২ টাকা। এ হিসাবে প্রতিটি গরুর চামড়া ঢাকায় ন্যূনতম ১২০০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ন্যূনতম ১০০০ টাকায় কিনতে হবে ট্যানারি মালিকদের।

এ ছাড়া সারা দেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হবে ট্যানারিতে, যা গত বছর ছিল ১৮ টাকা থেকে ২০ টাকা। আর বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮ টাকা থেকে ২০ টাকা, যা আগের বছর ছিল ১২ থেকে ১৪ টাকা।

আড়তদার সমবায় সমিতি এবার আগেভাগে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার খরচের বিবরণ প্রকাশ করে দিয়েছে। পরিবহণ খরচ, লবণের দাম, শ্রমিকের মজুরি মিলিয়ে প্রতিটি বড় গরুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ৪৯৮ টাকা খরচ হবে বলে সমিতির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

আড়তদাররা বলছেন, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা যে দামে চামড়া বিক্রি করতে চায়, সেই দামে কিনে প্রক্রিয়াকরণের খরচ সমন্বয় করলে চামড়া কিনলে লস হবে। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

আড়তদারেরা বলছেন, মৌসুমি সংগ্রহকারী ও খুচরা বিক্রেতারা চামড়ার দাম দাবি করছেন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। এর সঙ্গে তাদের খরচ যোগ হলে প্রতিটি চামড়ার দাম পড়বে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা। অথচ সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ঢাকার বাইরে এক হাজার টাকা। মৌসুমি সংগ্রহকারীদের দাবি অনুযায়ী চামড়া কিনতে হলে আড়তদারের প্রতি পিস চামড়ায় অন্তত ২০০ টাকা লোকসান হবে বলে দাবি তাদের।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির সহসভাপতি আব্দুল কাদের সারাবাংলাকে জানান, সোমবার (১৭ জুন) সন্ধ্যা পর্যন্ত গাউছিয়া কমিটিরসহ চট্টগ্রাম নগরীতে প্রায় এক লাখ চামড়া সংগ্রহ হয়েছে। আড়তদাররা ২০ বর্গফুটের বড় চামড়া কিনছেন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। এর চেয়ে ছোট চামড়া কিনছেন সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায়।

একটি বড় গরুর চামড়া গড়ে ৩০ থেকে ৩২ বর্গফুট হয়, যেগুলো ট্যানারি মালিকরা কিনে নেন। এর চেয়ে ছোট অর্থাৎ ২০ থেকে ২১ বর্গফুটের নিচে কাঁচা চামড়ার দাম ট্যানারি মালিক কিনতে চান না, শেষ পর্যন্ত চামড়াগুলো বিনামূল্যে তাদের দিয়ে আসতে হয় বলে জানালেন এ আড়তদার।

আব্দুল কাদের সারাবাংলাকে বলেন, ‘ট্যানারি মালিকরা আমাদের সঙ্গে নানা ধরনের কারসাজি করে। প্রথমত তারা ২০-২১ বর্গফুটের কম যেগুলো চামড়া, সেগুলোর কোনো টাকা দেন না। সরকার পিস হিসেবে চামড়ার দর বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা আমাদের কাছ থেকে পিস হিসেবে চামড়া কিনতে চান না। তারা ফুট হিসেবে কিনতে চান। মৌসুমি বিক্রেতারা তো ফুটের হিসাব বোঝে না। তারা বিক্রি করে পিস হিসেবে। আমরা কীভাবে ফুট হিসেবে বিক্রি করব! এবারও যদি ট্যানারি মালিকরা এভাবে চামড়া কেনেন, তাহলে আমাদের লস হবে।’

চট্টগ্রামের আড়তে চলছে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার কাজ। ছবি: শ্যামল নন্দী/ সারাবাংলা

ট্যানারিতে চামড়া বিক্রির কার্যক্রম তদারকির জন্য বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আব্দুল কাদের।

তবে কারসাজিতে আড়তদারেরাও কম নন বলে অভিযোগ করেছেন গাউছিয়া কমিটির নেতা মোছাহেব উদ্দিন বখতেয়ার। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তিন-চারবার করে গুণে ১০০ পিস করে চামড়া আড়তে পাঠাচ্ছি। সেখানে নেওয়ার পর আড়তদারের লোকজন বলছেন, ১০ পিস কিংবা ২০ পিস কম। প্রতিবছর এমন হচ্ছে। আসলে চামড়া ঠিকই পাঠানো হচ্ছে। গণনার সময় তারা কারসাজি করছে।’

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরী মিলিয়ে এবার সাড়ে আট লাখ থেকে পৌনে ৯ লাখ পশু কোরবানি হবে বলে তথ্য দিয়েছিলে। এর মধ্যে পাঁচ লাখ ২৬ হাজারের মতো গরু, ৭০ হাজার মহিষ এবং বাকিগুলো ছাগল ও ভেড়া। তবে কী পরিমাণ কোরবানি হয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য পেতে আরও অন্তত দুদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন