বিজ্ঞাপন

নগর পিতায় ‘ছাওয়ালের’ প্রভাব

December 20, 2017 | 5:18 pm

হাসান আজাদ, স্পেশাল করসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

রংপুর থেকে : ‘হামার ছাওয়ালের ইজ্জত রক্ষা করমো। এরশাদ হামার, হামরা এরশাদের। সেজন্যি এবার সিটিত ভোট দিমু ছাওয়ালকে। গত ভোটত হামার দলত ঝগড়া আছিল। এবার হামার এরশাদের প্রার্থী একজন। সেজন্যি জেতমো হামরা।’

বুধবার সকালে নগরীর আলমনগর এলাকায় চাল ব্যবসায়ী নূর আলম রংপুর সিটি নির্বাচনের অনুভূতি জানাতে গিয়ে সারাবাংলাকে এসব কথা বলেন।

নগরীর সিও বাজার এলাকার ফল ব্যবসায়ী জাফর আহমেদ নির্বাচন নিয়ে বলেন, ‘এবার অংপুরে সুষ্ঠু ভোট হলে লাঙ্গলের বিকল্প নাই।’ রংপুরের কামালকাছনা এলাকার ভোটার সেলিম মিয়া বলেন, ‘হামরা নৌকত ভোট দিমো। নৌকত ভাট দিলে আরও উন্নয়ন হবে।’  খাসবাগ এলাকার জমিলা বেগমের অভিমত, ‘হামরা ভোট দিমো ধানোত। কে জিতবে তা জানি না।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে  রংপুর নাট্য কেন্দ্রেও সভাপতি কাজী মুহাম্মদ জুন্নুন জানান, জনগণের কাছাকাছি যে থাকবে, যাকে সব সময় পাওয়া যাবে তাকেই নগর পিতা নির্বাচন করা উচিত। রংপুর চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু নির্বাচন নিয়ে বলেন, ‘রংপুরকে ব্যবসায়িক জোন হিসেবে তৈরি করতে যে কাজচ্‌ করবে তাকেই নগর পিতার দায়িত্ব দেওয়া উচিত।’

এদিকে রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি রেজাউল ইসলাম মিলন জানান, উন্নয়নের স্বার্থে সরকারি দলকে ভোট দেওয়া উচিত।

বিজ্ঞাপন

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু সালেহ মুহাম্মদ ওয়াদুদুর রহমান (ড. তুহিন ওয়াদুদ) বলেন, ‘বাংলাদেশের বৃহৎ সিটি রংপুর হলেও নাগরিক সুবিধা থেকে প্রায় ৭০ শতাংশ ভোটার বঞ্চিত। এবারের ভোটে সুবিধা বঞ্চিত ও তৃণমূল ভোটারদের সমর্থন নগর পিতা নির্বাচনে ফ্যাক্টর। সুবিধা বঞ্চিত ও তৃণমূল ভোটারদের ভোট পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে জাতীয় পার্টি।’

রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান শাফি বলেন, ‘রংপুরে যে হারে উন্নয়ন হয়েছে সে হিসাবে মেয়র নৌকা হওয়া উচিত।’

বিজ্ঞাপন

রংপুর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান চৌধুরী তুহিন বলেন, ‘প্রার্থীর কারণে অনেক জায়গায় হোঁচট খেতে হচ্ছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার সম্মান রক্ষার্থে আমাদেও চেষ্টা করতে হবে।’

এবারের রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দ্বিতীয় নগরপিতা বেছে নেওয়ার ব্যাপারে জাতীয় পার্টির ঘাঁটি বলে পরিচিত রংপুর। যেখানে এরশাদ, আর এরশাদ মানেই রংপুর। এ কথাটি দীর্ঘদিনে পরিচিত। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই শহরের ব্যাপক উন্নয়ন করে। জাপার দুর্গে এখন নৌকার শাসন চললেও রংপুর সিটির বাসিন্দাদের কাছে তাদের ‘ছাওয়াল এরশাদ’। যে কারণে নগর পিতা নির্বাচনে ছাওয়ালের প্রভাব পড়বে।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘রংপুর লাঙ্গলের বিকল্পই লাঙ্গল। এখন দলে কোনো বিভেদ নেই। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জাপা প্রার্থীর জয় সুনিশ্চিত।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘মহাজোটের যেকোনো একজনকে জেতানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’

গত দুইদিন রংপুর শহরের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, রংপুরের নাগরিক সুবিধা, যানজট নিরসন, মাদক ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি গত পাঁচ বছর তেমন গুরুত্ব পায়নি। যে কারণে এই নির্বাচনে বিষয়গুলো ভোটারদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অনেকেই বলছেন, এই বিষয়গুলোই নির্বাচনে নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে।

রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকাটি জাতীয় নির্বাচনের রংপুর-৩ আসনের মধ্যে পড়েছে। এই আসনটিতে ১৯৮৬ সালের পর বিগত ৩০ বছর ধরে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের একক আধিপত্য রয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় এখনো রংপুরে এরশাদ তথা জাতীয় পার্টির দুর্গ বলেই পরিচিত। এখানে বিগত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি কোনো দলই উল্লেখযোগ্য ভোট পায়নি।

রংপুর সিটির একাধিক বাসিন্দা জানান, আমরা চাই রংপুরের উন্নয়ন। গত পাঁচ বছরে রংপুরের উন্নয়নের চাইতেও বেশি উন্নয়ন হয়েছে মেয়রের আশপাশের লোকদের। ২০৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সিটি করপোরেশন হলেও ৪০ থেকে ৫০ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যেই উন্নয়ন কাজ সীমাবদ্ধ ছিল। বাকি জায়গাগুলোতে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এমনকি সিটি করপোরেশনের কিছু এলাকায় এখনোও বিদ্যুৎ নেই। অনন্ত ১২টি ওয়ার্ডেও যাতায়াত ব্যবস্থা অনেক খারাপ। শহর এখন ধুলো আর যানজটের শহর। কিছু কিছু এলাকার দুষণ ঢাকার মতো। ৫ মিনিটের পথ লাগে ৩০ মিনিট।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রথমদিকে একাধিকবার এসব সমস্যা নিয়ে মেয়রের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি ফিরিয়ে দিতেন। খারাপ ব্যবহার করতেন। যে কারণে পরে অনেকেই কোনো সমস্যা নিয়ে মেয়রের কাছে যেতেন না। তারা বলেন, কালকের নির্বাচন হবে পরিবর্তনের নির্বাচন।

২০১২ সালের ৮ জুন রংপুর সিটি করপোরেশন ঘোষণা করা হয়। এখানে রয়েছে ৩৩টি সাধারণ ওর্য়াড ও ১১টি সংরক্ষিত মহিলা ওর্য়াড। এবারই প্রথমে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। মোট ভোট কেন্দ্র ১৯৩টি। মোট ভোটারের সংখ্য ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৯৬ হাজার ৪৫৬ জন। নারী ভোটার এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৩৮ জন। গতবারের চাইতে ভোটার বেড়েছে ৩৬ হাজার ৪৩০ জন।

সারাবাংলা/এইচএ/আইজেকে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন