বিজ্ঞাপন

৩২ ধারা বহাল রেখেই ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল পাস

September 19, 2018 | 8:55 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: সাংবাদিকসহ অংশীজনদের আপত্তি উপেক্ষা করে এবং ৩২ ধারা বহাল রেখেই জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল।

বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে তিনি বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এরপরই বিলটির ওপর জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনীর প্রস্তাব দেন জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র এমপিরা। কণ্ঠভোটে তাদের প্রস্তাব নাকচ হয়। বিলটি নিয়ে একঘণ্টা ৬ মিনিট আলোচনার পর রাত ৮টা ২৬ মিনিটে বিলটি পাস হয়।

এই বিলের বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টের আওতাভুক্ত কোনো অপরাধ কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওযার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সংঘটন করেন বা করতে সহায়তা করেন, তাহলে তিনি সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ৩২ (২) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি উপধারা-১-এ উল্লেখ করা অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার সংঘটন করেন, তাহলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

বিজ্ঞাপন

বিলটি সংসদে উত্থাপনের পর বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব করেন জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র আট সংসদ সদস্য। তারা হলেন— নুরুল ইসলাম ওমর, সেলিম উদ্দিন, মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরী, ফখরুল ইমাম, নুরুল ইসলাম মিলন, রুস্তুম আলী ফরাজী, বেগম রওশন আরা মান্নান ও শামীম হায়দার। নিজেদের মনোনীত ৩, ৪ ও ৫ সদস্যর বাছাই কমিটিতে বিলটি পাঠিয়ে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার দাবি তোলেন।

বিলটি পাসের আগে আপত্তি তুলে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, বিলে স্টেকহোল্ডারদের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে। বাকস্বাধীনতার জন্য এটা উদ্বেগজনক। এটি একটি প্রশ্নবিদ্ধ বিল। গণমাধ্যমের উদ্বেগ ও মতামত উপেক্ষা করা স্বাধীন সাংবাদিকতায় বাধা তৈরি করবে। দেশে সুশাসনের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, এই বিলের কারণে তা বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মিলন বলেন, বিলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিলে গণমাধ্যমের স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করা হয়নি। নূরে হাসনা লিলি চৌধুরী বলেন, বিলটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় যাচাই-বাছাই হওয়া প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আমি এই কমিটির একজন সদস্য। বিলটি নিয়ে যাচাই-বাছাইয়ের আবেদন করেছিলাম। কিন্তু এটা নিয়ে অনেক যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। তাই আমি আমার প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। একইসঙ্গে বিলটি পাস করা যেতে পারে বলে আমি মনে করি।

প্রস্তাব দেওয়া অন্যান্য সংসদ সদস্যরাও তাদের যুক্তি তুলে ধরেন। কণ্ঠভোটে তাদের সে প্রস্তাবও নাকচ হয়। একঘণ্টা ৬ মিনিট আলোচনার পর রাত ৮টা ২৬ মিনিটে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়।

বিলটি পাসের আগে জনমত যাচাই-বাছাই প্রসঙ্গে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, এই বিলটি পাসের জন্য নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ রক্ষার জন্য ডিজিটাল আইন আমরা সবার আগে তৈরি করছি। পৃথিবীর বহু দেশকে এই আইনটি অনুসরণ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জন্য এটি নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক আইন। ভবিষতে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ হবে না, যুদ্ধ হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। তাই কোনোভাবে আমরা রাষ্ট্রকে বিপন্ন হতে দিতে পারি না।

বিজ্ঞাপন

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য এই আইন নয়। মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বাধা যেন না থাকে, তা এই আইনে নিশ্চিত করা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, বিলটি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কী পরিমাণ আলোচনা করেছি, তাদের কথা শুনেছি, তা এই বিলের রিপোর্ট দেখলেই বোঝা যাবে। আমরা তাদের মতামতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। যেসব জায়গায় যে ধরনের সংশোধনী দেওয়া দরকার, সেই অনুযায়ী সবকিছু আমরা করেছি। সাংবাদিকরা আইনমন্ত্রী ও সংসদীয় কমিটির কাছে যেসব কথা বলেছেন, তা হয়তো তারা ভুলে গেছেন। যদি তারা ভুলে না গিয়ে থাকেন, তাহলে তাদের সমালোচনার অবস্থা থাকে না। আইনটিকে বিতর্কিত করার কোন সুযোগ নেই।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মিাণের লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ও নিরাপদ ব্যবহার আবশ্যক। বর্তমান বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে এর সুফল ভোগের পাশাপাশি অপপ্রয়োগও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। সাইবার অপরাধের মাত্রাও দিন দিন বাড়ছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও ডিজিটাল অপরাধ প্রতিকার, প্রতিরোধ, দমন, শনাক্তকরণ, তদন্ত ও বিচারের উদ্দেশ্যে এ আইন প্রণয়ন অপরিহার্য। সাইবার তথা ডিজিটাল অপরাধের কবল থেকে রাষ্ট্র ও জনগণের জানমাল ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান এ আইনের অন্যতম লক্ষ্য।

এর আগে, গত ২৯ জানুয়ারি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। তখন থেকেই আইনটি নিয়ে আপত্তি ওঠে। সম্পাদক পরিষদ এই আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারা নিয়ে আপত্তি জানায়। এছাড়া, ১০টি পশ্চিমা দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকরা আইনের ২১, ২৮, ৩২ ও ২৫ ধারা নিয়ে উদ্বেগ জানায়। ওই সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। পরে বিভিন্ন মহলের আপত্তি সত্ত্বেও গত ৯ এপ্রিল বহুল আলোচিত ’ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮’ জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন