বিজ্ঞাপন

ঢাকায় ফিরছে লোডশেডিং, প্রতিদিন বিদ্যুৎ থাকবে না ১ ঘণ্টা

May 7, 2024 | 10:25 am

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সরকারের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর উদ্যোগে ২০২০ সালে যুক্ত হয় দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীর প্রত্যন্ত গ্রাম কমলাপুর। কেরোসিনের ল্যাম্প জালিয়ে জীবনযাপন করায় অভ্যস্ত গ্রামবাসীর অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও বদলে দিয়েছিলো বিদ্যুৎ। কিন্তু সম্প্রতি প্রতিদিন ঘণ্টার পর লোডশেডিং সেই পরিস্থিতির ছন্দ পতন ঘটিয়েছে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে লোডশেডিংয়ের মাত্রা। চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে লোডশেডিংয়ের এ পরিস্থিতি শুধু কমলাপুর গ্রামেরই নয়, সারাদেশেই অসহনীয় হয়ে উঠেছে।

বিজ্ঞাপন

তবে গ্রামের মানুষকে লোডশেডিং থেকে কিছুটা স্বস্তি দিতে এবার রাজধানী ঢাকায় লোডশেডিং নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। সেই পরিকল্পনায় প্রতিদিন ১ ঘণ্টা করে লোডশেডের চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ১৪৫টি। এই সংখ্যক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ৩০ হাজার ২৭৭ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভ ও নবায়যোগ্য জ্বালানিসহ)। সম্প্রতি সর্বোচ্চ উৎপাদন ১৬ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে। সারাদেশে গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ৬৮ লাখ। উৎপাদন সক্ষমতা থাকার পরও জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে।

শীত মৌসুমে চাহিদা আর সরবরাহের পার্থক্য কম থাকলেও গ্রীষ্ম মৌসুমে তা অনেকগুণ বেড়ে যায়। সে গ্যাপ পূরণে প্রতিবছরই লোডশেডিং দিতে হয়। আর তার পরিমান গ্রামে বেশি। এবার গ্রীষ্ম মৌসুমে তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় ধরনের গ্যাপ তৈরি হয়।

বিজ্ঞাপন

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র অনুযায়ী, চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াটে ঠেকতে পারে। গত বছর এ সময়ে বিদ্যুতের চাহিদা ধরা হয়েছিল ১৬ হাজার মেগাওয়াট। এ বছর গ্যাস সরবরাহ বাড়িয়ে গড়ে সাড়ে ১৪ হাজার থেকে সাড়ে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে চাহিদার বিপরীতে।

এদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে দিনে গ্যাসের চাহিদা ২৩২ কোটি ঘনফুট, কিন্তু সেখানেও সংকট। যে কারণে কখনোই প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ করা যায় না। চাহিদা ও সরবরাহে গ্যাপের কারণে যে পরিমান বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকে তা বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং দিয়ে পূরণ করা হয়। গত সোমবার (৬ মে) সন্ধ্যায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিলো ১৪০০০ মেগাওয়াট, তার বিপরীতে সাড়ে তেরো হাজার মেগাওয়াটের বেশি সরবরাহ করা হয়েছে। যে কারণে সারাদেশে লোডশেডিং ছিলো না।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রচণ্ড গরমে সারাদেশেই লোডশেডিং করতে হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত দুইদিন ধরে বৃষ্টি হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা কিছুটা কমেছে। তবে আবারও তাপমাত্রা বেড়ে গেলে এবার ঢাকাতেও লোডশেডিং করতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে হয়তো ১ ঘণ্টা লোডশেডিং দেওয়া হতে পারে।’

বিজ্ঞাপন

গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহে এই দৈন্যদশার বিষয়টি সংসদ অধিবেশনে তুলে ধরেছেন কয়েক সংসদ সদস্য। তারা বলছেন, দেশে যেভাবে লোডশেডিং বাড়ছে তাতে যেকোনো সময় জনরোষ সৃষ্টি হতে পারে।
জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, ‘এখন কমবেশি ১৫০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে। এটা আরও বাড়বে। মানুষ বিল পরিশোধ করেও বিদ্যুৎ না পাওয়ায় প্রশ্ন করেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর কাছে।

লোডশেডিংয়ের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন জাপার আরেক সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ লোডশেডিং নিয়ে আলোচনায় সরগরম হয়ে ওঠে সংসদ অধিবেশন।

বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয় সোমবারের নিয়মিত মন্ত্রিসভায়ও। সারাদেশে তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর কাছে জানতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সমস্যা দ্রুত সমাধানের নির্দেশ তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রামে দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।’

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ নসরুল হামিদ বলেন, ‘দেশের কিছু কিছু অঞ্চলে লোডশেডিং হচ্ছে এটা সত্যি। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের অনেক স্থানে লোডশেড করতে হচ্ছে। এটা গত এক মাস ধরে আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। এ সমস্যা তৈরি হয়েছে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায়। পাশাপাশি অর্থ সংকটও ছিলো। সেসব সংকট কাটতে শুরু করেছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘জ্বালানি সংকট মিটিয়ে ওইসব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হচ্ছে ক্রমান্বয়ে। অর্থ মন্ত্রণালয় অল্প অল্প করে টাকা ছাড় করছে। যে কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়তে থাকবে।’

বিদ্যুৎ বিভাগের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গ্রামে লোডশেড কমাতে রাজধানী ঢাকায় লোডশেড করা হবে প্রতিদিন ১ ঘণ্টা। তবে সেটা কখন করা হবে তা এখনো ঠিক হয়নি বলে জানা যায়।

বিষয়টি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘আমার মনে হয় না কোথাও লোডশেড করে আরেক স্থানে দিতে হবে। আমি মনে করি আগের চেয়ে অবস্থা অনেক ভালো।’

গ্রামে লোডশেড কমে গেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিদিন নিউজ পাচ্ছি। আস্তে আস্তে লোডশেড কমে আসতেছে। আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু হচ্ছে। তেলের স্বল্পতার কারণে বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ ছিলো, কারণ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকরা তেল আনতে পারছিলেন না। সে সমস্যা কেটে যাচ্ছে।’

গ্রামের পাশাপাশি ঢাকাতেও লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। বৃষ্টিস্নাত আবহাওয়ায়ও কয়েক এলাকা থেকে লোডশেডের তথ্য পাওয়া গেছে। রাজধানীর কল্যাণপুর, শেওড়াপাড়ার কিছু অংশ, মিরপুরের কিছু এলাকা, মধ্য বাড্ডা, মুগধা, বাসাবো, মানিকনগর, শনির আখড়া, পুরান ঢাকার কয়েকটি এলাকা থেকে লোডশেডিংয়ের তথ্য পাওয়া গেছে।’

জনসন রোডের বাসিন্দা ফিরোজ আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিন দুইবার বিদ্যুৎ চলে যায়। দুপুর বেলা গেলে কখনো দুই ঘণ্টায়ও আসে না। রাতে যায় কখনো ত্রিশ মিনিট, কখনো এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না।’

মুগদা এলাকার বাসিন্দা সঞ্জীব ব্যাপারি বলেন, ‘এখানে বিদ্যুত প্রতিদিন যায়। দিনে গেলে রাতে যায় না, যেদিন রাতে লোডশেডিং হয় সেদিন দিনে থাকে। এটা কয়েকমাস ধরে যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।’

মাতুয়াইলে বাস করা সিএনজি চালক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সারাদিন পর ঘরে ফিরি গিয়ে দেখি কারেন্ট নেই। একদিকে প্রচণ্ড গরম তার ওপরে বিদ্যুৎ না থাকায় পরিস্থিতি বাজে।’

বিদ্যুতের লোড ব্যবস্থাপনা নিয়ে গত ২২ এপ্রিল সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে লোড ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অর্থাৎ গ্রামের লোডশেড কমাতে শহরে লোডশেডের বিষয়টি নিয়ে আগেই চিন্তা করা হচ্ছিলো। পাশাপাশি বড় বিপণিবিতান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদ্যুৎ ব্যবহারের বিষয়ে সাশ্রয়ী নীতি নেওয়া এবং রাত ৮টার পর মার্কেট বন্ধের নিয়ম কঠোরভাবে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ওই বৈঠকে। এতোদিন সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হলেও আগামী দিনগুলোতে তাপমাত্রা বাড়লে লোডশেডিং এর বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, গত ৫০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে। প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। যে কারণে চাহিদা ও সরবরাহের ঘাটতিও বেড়ে গেছে।

উল্লেখ্য, গত ২৩ এপ্রিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। আর এর দু’দিন আগে ২১ এপ্রিল সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড ছিল ১৫ হাজার ৬৬৬ মেগাওয়াট।

সারাবাংলা/জেআর/এমও

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহনযোগ্যতা ও আরাকান আর্মিব্যাটারিচালিত যানবাহন বন্ধের ঘোষণায় সিপিবি’র ক্ষোভভিয়েতনাম মুক্তিসংগ্রামের অবিসংবাদিত কিংবদন্তি হো চি মিনমেট্রোরেলে ভ্যাট যাত্রীর ওপর চাপবে, পুনর্বিবেচনার অনুরোধ‘বৈষম্যমূলক’ পেনশন ব্যবস্থা প্রত্যাহারের দাবি বুয়েট শিক্ষকদের‘সামান্য কেমিক্যালের পয়সা বাঁচাতে দেশের সর্বনাশ করবেন না’মিরপুরে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধবিজয়ীদের ‘এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার’ দিলেন প্রধানমন্ত্রী৬ বছর পর কুবিতে অনুষ্ঠিত হলো ছায়া জাতিসংঘ সম্মেলনবঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের সম্ভাবনা, তাপমাত্রা কমতে পারে ২ ডিগ্রি সব খবর...
বিজ্ঞাপন