বিজ্ঞাপন

৩ মাসে শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ২৮৫, মৃতের সংখ্যা ৩

September 28, 2018 | 2:42 pm

।। সাদ্দাম হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: শিশু মেহেদী হাসান ৪ সেপ্টেম্বর রাতে হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হয়। স্বাভাবিক জ্বর ভেবে বাসার কাছের ফার্মেসি থেকে সিরাপ খাওয়ানো হয়।  দুদিনে সুস্থও হয়ে উঠে মেহেদী। কিন্তু দিন পনের যেতে না যেতেই ১৯ সেপ্টেম্বর আবার জ্বরে আক্রান্ত হয়  আট মাসের শিশুটি। ফের ফার্মেসি থেকে সিরাপ খাওয়ানো হলেও এবার সে সুস্থ হয়নি। একদিনের ব্যবধানে নিস্তেজ হয়ে পড়ে মেহেদী।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের এক নাম্বার ওয়ার্ডের ৩৬ নাম্বার বেডে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত মেহেদী হাসানের মা রিজিয়া বেগম এভাবেই সারাবাংলাকে কথাগুলো বলছিলেন। মতিঝিলের এ বাসিন্দা বলেন, যখন দেখলাম সিরাপেও কাজ হচ্ছে না, আবার বাচ্চার পেট ফুলে গেছে, বুকের দুধও খাচ্ছে না তখন পরীক্ষা জানতে পারি ছেলের ডেঙ্গু হয়েছে। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে মেহেদীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু ৭ দিন পেরিয়ে গেছে, এখনও ছেলে সুস্থ হয়নি-তাই দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন মা  রিজিয়া ।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে রিজিয়া বেগম যখন কথা বলছেন, তখন পাশের বেড থেকে এগিয়ে আসেন সুমাইয়া খাতুন। মিরপুরের বাসিন্দা সুমাইয়া  জানালেন, গত ২৪ সেপ্টেম্বর একমাত্র সন্তান ৯ মাসের রাইসাকে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।

বিজ্ঞাপন

সুমাইয়া খাতুন জানালেন, গত ২৩ তারিখ রাতে হঠাৎ জ্বর এলে সকালের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বলেন, ভাবলাম সকালে ওষুধ আনব, কিন্তু  ভোর হতে না হতেই নিস্তেজ হয়ে যায় রাইসা, খাওয়াও বন্ধ হয়ে যায় মেয়েটার।। পায়খানার সঙ্গে কালচে রক্তও যাচ্ছিলো, তাই দ্রুত এখানে নিয়ে আসি। এখানে পরীক্ষায় তার ডেঙ্গু রোগ ধরা পড়েছে। এখন চিকিৎসা চলছে।

ঢাকা শিশু হাসপাতালে গিয়ে জানা গেল, কেবল মেহেদী হাসান কিংবা রাইসা নয়, ডেঙ্গু জ্বরের এমন ভয়াবহতায় প্রতিদিন গড়ে ১০ জন করে শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে, যা গতবারের তুলনায় অনেক বেশি বলে জানালেন চিকিৎসকরা।

বিজ্ঞাপন

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এই হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা গতবারের চেয়ে এবার দ্বিগুন। গতবছর মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ছিল ১১৫ জন আর একজনও মারা যায়নি। অথচ চলতি বছরের জুলাই থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৮৫, মারাও গিয়েছে তিন শিশু। এতে করে আক্রান্ত রোগীর স্বজনদের মাঝে দেখা দিয়েছে উৎকন্ঠা। যদিও চিকিৎসকরা বলছেন, এ রোগ নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে সচেতনতার মাধ্যমে একে প্রতিরোধ করা সম্ভব। আর তার জন্য পরিবার বা স্বজনদেরকেই বেশি সচেতন হতে হবে বলে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

হাসপাতাল থেকে জানা যায়, এ বছরে জুলাই মাসে ২৮ জন, আগস্টে ৭০ জন আর চলতি মাসের গত ২৬ তারিখ পর্যন্ত ১৮৭ জন অর্থ্যাৎ মোট ২৮৫ জন আক্রান্ত হয়ে এ হাসপাতালে এসেছে, কেউ চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরলেও এখনও অনেকেই চিকিৎসাধীন। তবে এর মধ্যে মারা গিয়েছে ৩ জন। শিশু হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে মিরপুর অঞ্চল থেকে আসা রোগীই ৬৫ শতাংশ।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের ডেঙ্গু ও চিগুনগুনিয়া বিশেষজ্ঞ ডা. কিংকর ঘোষ সারাবাংলাকে বলেন, এই হাসপাতালে গত ১ জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত ২৮৫ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে এবং এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছে। এদের মধ্যে তিনটি শিশুর অবস্থা ছিল গুরুতর । সঠিক সময়ে চিকিৎসা পাবার আগেই তারা মারা গিয়েছে।


ডা. কিংকর ঘোষ বলেন, এজন্য সবাইকে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়লেই চিকিৎসকের পরামর্শ  দিতে হবে । অথচ তিনজনের দুজনের অবস্থা খুবই গুরুতর হয়ে যাবার পর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়,বাকি জনকে আনার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মারা যায়। কারণ তাকে চিকিৎসা দেয়ার সময়ও পাওয়া যায়নি।

বিজ্ঞাপন

এ বছরে অন্যান্য যে কোনও বয়সের চেয়ে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে জানিয়ে ডা. কিংকর ঘোষ বলেন, অন্য বয়সের মানুষেরা এটা শারীরিক সক্ষমতা দিয়ে হয়তো  প্রতিহত করতে পারে। কিন্তু একজন শিশুর শারীরিক সক্ষমতা সে পর্যায়ে থাকে না এবং এ কারণে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। তবে এজন্য বাবা মা অথবা স্বজনদেরকে বেশি সচেতন হতে হবে।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মাকছুদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে সুস্থ হওয়া পর্যন্ত মশারির ভেতরে রাখতে হয়। কিন্তু অনেকে তা করেনা। যে কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির কারণে মশা অন্যের কাছেও এ রোগ ছড়ায়। তাই বাসাবাড়িতে মশার উপদ্রব থাকলে হাত পা ঢাকা থাকা কাপড় পড়তে হবে।

তিনি বলেন, বাসার ফ্রিজ ও এসি এবং ফুলের টব কিংবা অন্য কোথাও যেন পানি না জমে সেদিকে অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে। তবেই এটি প্রতিরোধ সম্ভব। তবে এ রোগে আক্রান্ত হলে উদ্বিগ্ন না হয়ে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে । শুধু প্যারাসিটাল ছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অন্য কোনো এন্টিবায়োটিক ওষধ খাওয়ানো যাবে না, এতে অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সারাবাংলা/এসএইচ/জেএ/জেডএফ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন